চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯

পানির দাম বাড়াল চট্টগ্রাম ওয়াসা

ভবন তৈরিতেও লাগবে ছাড়পত্র

চট্টগ্রাম নগরীতে ভবন (আবাসিক-অনাবাসিক) তৈরির ক্ষেত্রে ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। একই সঙ্গে পানির দামও বাড়বে ৫ শতাংশ। এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ওয়াসার নির্ধারিত ফরম পূরণ করার পর নির্দিষ্ট ফি পরিশোধের মাধ্যমে ছাড়পত্র নেওয়া যাবে। অন্যথায় এসব ভবনে পানির সংযোগ দেওয়া হবে না। আগামী মার্চ থেকে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে বলে ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকায় ভবন নির্মাণে ওয়াসার ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক রয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, এ সিদ্ধান্ত আগেও ছিল। কিন্তু কার্যকর ছিল না। এখন বোর্ডসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। চালু করা এখন সময়ের ব্যাপার। পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভবন নির্মাণ করলে হবে না। সেখানে পানি সরবরাহ যাবে কি না, সংযোগ লাইন নেওয়ার বিধান আছে কি না, এসব বিষয় দেখতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওয়াসার ছাড়পত্র না নিলে কাউকে পানির সংযোগ দেওয়া হবে না।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, বাণিজ্যিক ভবনের ক্ষেত্রে ২ হাজার বর্গমিটার দুই টাকা, আবাসিকের ক্ষেত্রে ৭৫ পয়সা, ২ হাজারের অধিক থেকে ৪ হাজার বর্গমিটার বাণিজ্যিক ভবনের জন্য খরচ পড়বে ২ টাকা ৫০ পয়সা, আবাসিকের জন্য ১ টাকা ৫০ পয়সা। ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার বর্গমিটারের জন্য বাণিজ্যিক ভবনে খরচ পড়বে ৩ টাকা এবং আবাসিকের ক্ষেত্রে ২ টাকা। ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার মিটারের জন্য বাণিজ্যিক ভবন ৪ টাকা আবাসিকের ক্ষেত্রে ২ টাকা ৫০ পয়সা। আর ১০ হাজারের অধিক বাণিজ্যিক ভবনে খরচ পড়বে ৫ টাকা, আবাসিকের ক্ষেত্রে ৩ টাকা।

শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র প্রদানের নিম্নোক্ত ফি ধরা হয়েছে ৫ একর থেকে ২০ একর পর্যন্ত আয়তনের জন্য ৫০ হাজার টাকা; ২০ থেকে ৫০ একর পর্যন্ত ১ লাখ টাকা। ৫০ থেকে ১০০ একর পর্যন্ত ২ লাখ টাকা। ১০০ থেকে ২০০ একর পর্যন্ত ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০০-এর অধিক ৫ লাখ টাকা।

পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক করা সঠিক হলেও এতে নগরবাসী ভোগান্তিতে পড়বে এবং ঘুষ-দুর্নীতির আরেকটি ক্ষেত্র তৈরি হবে। প্রত্যেক সংস্থার কাছ থেকে আলাদা আলাদা ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান কেবল হয়রানিই বাড়াবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী জাহিদ আবছার চৌধুরী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সবকিছুর একটি নীতিমালা থাকা দরকার। এমনকি নগরীতে অনেক নলকূপ আছে এখনো ওয়াসা জানে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার জনবান্ধব। যদি ওয়াসার কোনো ঘাটতি থাকে, তাহলে ফি নেওয়াটা যৌক্তিক। তবে এসব কাজে দুর্নীতির আশঙ্কা থাকে। আমি আশা করব মানুষ যাতে হয়রানি না হয়।’

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামÑএর মহাসচিব স্থপতি জেরিনা হোসাইন বলেন, সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক। অনেক দেশে এই আইন চালু আছে। ছাড়পত্রের জন্য পরিবেশ, ফায়ার সার্ভিস, এরপর ওয়াসার কাছে যেতে হবে। এসব জায়গায় ছাড়পত্র নিতে মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।

এদিকে ফেব্রুয়ারি থেকে পানির বাড়তি দাম কার্যকর করার কথা জানিয়ে ওয়াসার কর্মকর্তারা বলেছেন, আর্থিক ক্ষতি কমানো ও বিভিন্ন প্রকল্পের বৈদেশিক ঋণ শোধের জন্য পানির দাম বাড়ানো হচ্ছে। পানির বিল আবাসিক ও অনাবাসিক খাতে প্রতি ইউনিট ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, আগে ছিল প্রতি ইউনিট পানির বিল ৯ টাকা ৪৫ পয়সা। এখন প্রতি ইউনিট পানির বিল পড়বে ৯ টাকা ৯২ পয়সা।

এদিকে পানির দাম বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ওয়াসার সরবরাহ করা পানির ৮৮ শতাংশ গ্রাহক হচ্ছেন আবাসিক। আর ওয়াসা দিনে চাহিদার মাত্র ৪২ শতাংশ পানি সরবরাহ করতে পারে। এজন্য নগরীর অধিকাংশ এলাকায় পানির জন্য এখনো হাহাকার চলছে। আর চট্টগ্রাম ওয়াসা পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত না করে নতুন নতুন প্রকল্পের কথা বলে নগরবাসীকে বারবার বিভ্রান্ত করছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close