প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৭ জানুয়ারি, ২০১৯

মুন্সীগঞ্জে ট্রলারডুবি

এক দিন পর উদ্ধার অভিযান নিখোঁজ ২০, মাতম

মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে গত মঙ্গলবার ভোরে তেলবাহী ট্যাংকারের ধাক্কায় মাটিবোঝাই ট্রলার ডুবিতে অন্তত ২০ শ্রমিক নিখোঁজ হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৭ জনের বাড়ি পাবনার বিভিন্ন এলাকায়। এ সময় ১৪ শ্রমিক সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন। নিখোঁজ শ্রমিকদের বাড়িতে চলছে মাতম। গত মঙ্গলবার ভোরে এ ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটলেও বুধবার সকাল থেকে স্বজনরা মেঘনার তীরে ভিড় জমানোর পর পুলিশ ও প্রশাসন উদ্ধার কাজ শুরু করে।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানায়, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশফাক উজ্জামান জানান, বুধবার বিকেল পর্যন্ত ডুবে যাওয়া ট্রলার শনাক্ত করা যায়নি। তবে নদীতে বিআইডব্লিউটিএ, নৌ-পুলিশ, জেলা পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের টিম নিখোঁজ শ্রমিকদের উদ্ধার ও ডুবে যাওয়া ট্রলারটি শনাক্তে কাজ করে যাচ্ছে। এদিকে চরঝাপটা গ্রামের লোকজন জানান, ট্রলারডুবির স্থলটি মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহম্মেদ জানান, কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনার স্থান চিহ্নিত করতে সমস্যা হচ্ছিল। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারটি শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। পাবনা প্রতিনিধি জানায়, নিখোঁজ ২০ শ্রমিকের মধ্যে ১৮ জনের পরিচয় মিলেছে।

এর মধ্যে ১৭ জনের বাড়ি পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নে। পরিচয় পাওয়া শ্রমিকরা হলেন, পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মু-ুমালা গ্রামের গোলাই প্রামাণিকের ছেলে সোলেমান হোসেন, জব্বার ফকিরের ছেলে আলিফ হোসেন ও মোস্তফা ফকির, গোলবার হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন (১), আবদুল মজিদের ছেলে জাহিদ হোসেন, নূর ইসলামের ছেলে মানিক হোসেন, ছায়দার আলীর ছেলে তুহিন হোসেন, আলতাব হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন (২), লয়ান ফকিরের ছেলে রফিকুল ইসলাম, দাসমরিচ গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে ওমর আলী ও মান্নাফ আলী, তোজিম মোল্লার ছেলে মোশারফ হোসেন, আয়ান প্রামাণিকের ছেলে ইসমাইল হোসেন, সমাজ আলীর ছেলে রুহুল আমিন, মাদারবাড়িয়া গ্রামের আজগর আলীর ছেলে আজাদ হোসেন, চন্ডিপুর গ্রামের আমির খান, আবদুল লতিফের ছেলে হাচেন আলী এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার গজাইল গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে রহমত আলী।

বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার চ-িপুর গ্রামের হাশেম আলীর ছেলে মামুন আলী প্রামাণিক এবং পাইকপাড়া গ্রামের আশরাফ মোল্লার ছেলে শাহ আলম জানান, ট্রলার ডুবে যাওয়ার মুহূর্তে তারা ১৪ জন উঠে আসতে পারলেও অন্যরা পারেনি। ওই সময় চারদিকে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আমরা ঠা-া পানির মধ্যে সাঁতরে ভেসে ছিলাম। মনে হচ্ছিল মৃত্যু খুব কাছে। পরিবারের কথা মনে পড়ছিল। আর ১০ মিনিট পানিতে থাকলে মারা যেতাম। মাটির ট্রলার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে না পৌঁছার কারণে মালিক পক্ষের সন্দেহ হলে, তারা আরেকটি ট্রলার নিয়ে এসে আমাদের উদ্ধার করে।

এদিকে নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পরেও স্বজনদের খোঁজ না পেয়ে পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। তাদের আহাজারিতে খানমরিচ ইউনিয়নের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

খানমরিচ ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান বলেন, নিখোঁজ শ্রমিকরা কাজের সন্ধানে মুন্সীগঞ্জ গিয়েছিল। উপার্জনের অবলম্বন স্বজনদের হারিয়ে যেন অকূল পাথারে পড়েছে তাদের পরিবার। একদিকে স্বজন হারানোর শোক অন্যদিকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। তাদের সান্ত¦না দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close