ফরিদপুর প্রতিনিধি

  ০৫ জানুয়ারি, ২০১৯

ফরিদপুরে সহিংসতা

ফের হামলার আশঙ্কায় আতঙ্কে খাটরা গ্রামবাসী

ফরিদপুর-৪ (সদরপুর-ভাঙ্গা-চরভদ্রাসন) আসনে নির্বাচন পরবর্তী বেশকিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলটির পরাজিত প্রার্থী কাজী জাফরউল্লাহ’র সমর্থকদের সঙ্গে একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান স্বতন্ত্র এমপি মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে খাটরা গ্রামের হামলায় সেখানকার মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা পুনরায় হামলার আতঙ্কে রয়েছেন। এদিকে, নির্বাচনের দিন থেকে শুরু করে এমপি নিক্সন চৌধুরীর সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ভাঙ্গা উপজেলার কাউলীবেড়া, মানিকদহ, কালামৃধা ও সদরপুরের চরমানাইর ইউনিয়নে শতাধিক বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। এর মধ্যে নজীরবিহীন ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে ভাঙ্গার কাউলীবেড়া ইউনিয়নের খাটরা গ্রামে। এ গ্রামের কমপক্ষে ১৫টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এমপি নিক্সন চৌধুরী। খাটরা গ্রামে হামলার শিকার হওয়া পরিবারগুলো হচ্ছে শাহীন মোল্লা, শহিদুল ইসলাম সদন মেম্বার, আশরাফ ফকির, রব ফকির, নিখিল চন্দ্র সরকার, সর্বেশ্বও, অনিল গাইন, ফনি বেপারী, নির্মল গাইন, সাধু সত্য রঞ্জন, সারথী গাইন, ত্রিনাথ, অজিত গাইন, আরতি গাইনসহ আরো কয়েকটি পরিবার।

নিক্সন চৌধুরীর সমর্থক খাটরা গ্রামের শাহিন মোল্লা জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কয়েকশত ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এলাকায় হামলা চালায়। এ সময় তারা ১২-১৫টি বাড়ি ভাঙচুর করে। হামলাকারীরা ভাঙচুরের পাশাপাশি ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে নিয়ে যায়। এ সময় তারা নারীদের ওপর চড়াও হয়। স্থানীয় ইউপি মেম্বার শহিদ মিয়া জানান, নির্বাচনের দিন ও পরের দিন কাজী জাফরউল্লাহ’র সমর্থকেরা আমাদের গ্রামে হামলা করে বাড়ি ভাঙচুর করে ব্যাপক লুটপাট চালায়।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন বিকেলে খাটরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটি অনেকটা পুরুষশূন্য। নারীরা বাড়িতে থাকলেও তাদের চোখে-মুখে ছিল অজানা আতঙ্কের ছাপ। খাটরা গ্রামের কমপক্ষে সাতটি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেকটি বাড়িতে ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে ঘরের আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ, আলমারি, রান্না করার হাঁড়ি-পাতিলও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এমনটি বাথরুমও ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাড়ির টিউবওয়েলও উপড়ে ফেলা হয়েছে। ঘরে থাকার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। ঘরের মধ্যে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মোটরসাইকেল, টিভিসহ মূল্যবান আসবাবপত্র লুট হয়েছে। হামলাকারীরা ঘরের বিদ্যুতের সংযোগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন করে দেয়। হামলার শিকার হওয়া কয়েকটি বাড়ির নারীরা জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। এ সময় কয়েকজন নারীকেও লাঞ্ছিত করা হয়। হামলাকারীরা যাবার সময় হুমকি দিয়ে বলে যায়, মামলা দিলে গ্রামছাড়া করা হবে। বর্তমানে আমাদের পুরুষ মানুষেরা পুনরায় হামলার ভয়ে গ্রাম ছাড়া রয়েছে। গ্রামে এলে তাদের হত্যা করা হবে এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। হামলার শিকার হওয়া সেলিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, হামলাকারীরা ঘরে প্রবেশ করে ইচ্ছেমতো ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। ইউপি মেম্বার শহিদ মিয়া বলেন, হামলার সময় স্থানীয় মসজিদের ইমাম চেয়ারম্যানের হাত-পা জড়িয়ে ধরে মাফ চাইলেও তারা হামলা বন্ধ করেনি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শাহিন মোল্লা জানান, আমাদের বাড়িতে ঢুকে ছয়টি রুমে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ঘরের এমন কিছু নেই যা ক্ষতি করেনি। তিনি বলেন, প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। খাটরা গ্রামের ৯টি হিন্দু বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। ভাঙচুরের শিকার হওয়া সবাই স্বতন্ত্র এমপি মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

এদিকে, খাটরা গ্রামে তান্ডবের পর গ্রামজুড়ে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। দিনেও গ্রামে পুরুষ মানুষের দেখা মিলছে না। পুনরায় হামলার ভয়ে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। হামলার শিকার হওয়া পরিবারগুলো এখন মানবেতরভাবে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে থাকছেন। হামলার পর থেকে খাটরা গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও এপিবিএন মোতায়েন রাখা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খাটরা গ্রাম পরিদর্শন করেছেন মানবাধিকার কমিশনের হিরন্নময় বাড়ৈ। তার নেতৃত্বে একটি টিম সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন।

কাউলীবেড়া ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম দুদু মিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাইদুর রহমান জানান, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, এপিবিএন ও বিজিবি মোতায়েন রাখা হয়েছে। হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় কমপক্ষে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close