ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

  ০৫ জানুয়ারি, ২০১৯

ফুলবাড়ীতে নির্যাতনের শিকার চার গৃহবধূ হাসপাতালে

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে স্বামী ও তার পরিবারের অমানুষিক নির্যাতনে আশ্রয়হীন চার গৃহবধূর ঠাঁই এখন হাসপাতালে। তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের বর্ণনা শুনে হাসপাতালের প্রতিটি মানুষ পর্যন্ত কেঁদেছে। নির্যাতনের স্বীকার গৃহবধূরা হলেন তহমিনা বেগম (২০), হামিদা বেগম (২৬), শিল্পী বেগম (২০) ও সুমনা বেগম (১৯)। একদিকে স্বামী ও স্বামীর পরিবারের অত্যাচার, অন্যদিকে অভাবী বাবার সংসারে বোঝা হয়ে ফিরে আসা এই দুটো তাদের জন্য সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা সদর হাসপাতালে সরেজমিনে গেলে সাংবাদিক নাম শুনেই তারা কান্নায় ভেঙে পরেন। পরে নির্যাতনের করুণ কাহিনী বর্ণনা করেন। উপজেলার নাওডাঙ্গার ঠাকুরপাঠ গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে গৃহবধূ তহমিনা বেগম জানান, ২০১৭ সালের ২২ মার্চ একই ইউনিয়নের বালাতাড়ি গ্রামের হযরত আলীর ছেলে জাহিদ হাসানের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।

পড়াশোনার প্রবল আগ্রহ থাকলেও দিনমজুর বাবার আর্থিক অসঙ্গতির কারণে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পরেই শুরু হয় কারণে-অকারণে স্বামী ও তার পরিবারের অমানুষিক নির্যাতন। নির্যাতনের চাপ সহ্য করেও তহমিনা এইচএসসি পাস করে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হন। তিনি বর্তমানে ওই বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। স্বামীর চাপে তহমিনা কলেজে ক্লাস করতে পারেননি। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির চাপ দিতে থাকে অবশিষ্ট যৌতুকের ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য। পরে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির চাপে চাকরির জন্য ঢাকা যেতে বাধ্য করে তহমিনাকে। স্বামীও চলে যায় ঢাকায়। স্বামীর ইচ্ছায় তহমিনাও গার্মেন্টে চাকরি নেন। চাকরি করার কয়েক দিন পর তিনি চাকরি করবে না বলে স্বামীকে জানান। কিন্তু স্বামীর সাফ কথা, চাকরি করলে সংসার টিকবে, না করলে সংসার টিকবে না। এর মধ্যে চলতে থাক শারীরিক নির্যাতন। গৃহবধূ তহমিনা স্বামীর সংসার ঠিক রাখার জন্য নির্যাতন সহ্য করে অনেক কষ্টে এক বছর ধরে চাকরি করে।

তহমিনা আরো জানান, স্বামীর নির্যাতন আর সহ্য করতে না পেরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্বামীকে না জানিয়ে বাবারবাড়িতে আসেন তিনি। শরীরে তার প্রচন্ড ব্যথা। আঘাতের চিহ্ন। চিকিৎসার জন্য গত বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি।

একইভাবে স্বামী ও তার পরিবারের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা নাখারগঞ্জ গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে হামিদা বেগম। পাঁচ বছর পূর্বে উপজেলার বালাতারী গ্রামের মৃত হায়দার আলীর ছেলে হাবু মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় হামিদা বেগমের (২৫)। বিয়ের পরেই শুরু হয় কারণে-অকারণে নির্যাতন ও অত্যাচার। হামিদা বেগমও স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে গত সোমবার ফুলবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। ঠিক একইভাবে চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামের ছকমল হোসেনের মেয়ে সুমনা বেগম (১৮)। গত ছয় মাস পূর্বে পানিমাছকুঠি গ্রামের খৈইমুদ্দিনের ছেলে বাইদুলের সঙ্গে সুমনা বেগমের বিয়ে হয়। সেও গত দুই দিন পূর্বে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ফুলবাড়ী হাসপাতালে ভর্তি হন। অন্যদিকে, উপজেলার নাগদাহ গ্রামের সেকেন্দার আলীর মেয়ে শিল্পী বেগম (২০)। উপজেলার উত্তর রাবাইতারী গ্রামের মাইদুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শিল্পী বেগমও নির্যাতনের স্বীকার হয়ে গত সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফুলবাড়ী হাসপাতালে তারা চারজনই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ব্যাপারে নির্যাতিতা তহমিনা বেগমের বাবা তোফাজ্জল হোসেন ও হামিদা বেগমের বাবা হাবিবুর রহমান নির্যাতনের বিচার চেয়ে জানান, ‘আমার মেয়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাড়িতে এসেছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা ও নির্যাতনের ক্ষতের যন্ত্রণায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা এর বিচার দাবি করেন। নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ড. শাহজাদা খন্দকার বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। নির্যাতনের সঠিক বিচার হওয়া দরকার।

ফুলবাড়ী উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা জয়ন্তী রানী জানান, ভুক্তভোগীরা আমাকে জানালে আমি অবশ্যই আইনি সহযোগিতা করব। এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী সদর হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, আহত চার গৃহবধূকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তারা আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠছেন। ফুলবাড়ী থানার ওসি খন্দকার ফুয়াদ রুহানী জানান, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close