চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

চট্টগ্রামে সংসদ নির্বাচন

পরিবেশ ভালো : আ.লীগ বিএনপির শঙ্কা

চট্টগ্রামে নির্বাচনের পরিবেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের প্রার্থীরা। তবে বিএনপির প্রার্থীরা বলেছেন, ভোটারদের মনে শঙ্কা বিরাজ করছে। গত সোমবার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান দুই জোটের প্রার্থীরা তাদের মনোভাবের কথা জানান। গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের ১৬ আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে পৃথকভাবে মতবিনিময় করেন দুই রিটার্নিং অফিসার বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান এবং জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন।

সভায় চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে ঘরে থাকতে পারিনি। আমার স্থারব-অস্থাবর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আমার নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীরাও ঘরে থাকতে পারছেন না। ১৬ ডিসেম্বর প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বিজয় দিবসের র‌্যালির আয়োজন করেছিলাম। সেই র‌্যালিতে হামলা হয়েছে। আমি জীবনঝুঁকিতে ছিলাম। তারা আমাকে গুলি করতে উদ্যত হয়। তিনি বলেন, আমার এ অবস্থা হলে নেতাকর্মীদের কী অবস্থা? নির্বাচনের পরিবেশ তো নেই, পরিবেশের আরো অবনতি হচ্ছে। এভাবে চললে দেশে গণতান্ত্রিক ধারার অবনতি হবে। পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা, নেতাকর্মী-এজেন্টদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার, এলাকা ছাড়তে হুমকি এবং নির্বাচনী কাজে জড়িতদের গায়েবি মামলা দেওয়ার অভিযোগ করে নগরীর বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের অদল-বদল করার প্রস্তাব দেন নোমান।

বন্দর-পতেঙ্গা আসনের বিএনপি প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অস্বীকার করা যাবে না, এ মুহূর্তে একটা ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মধ্যে প্রশ্ন, ভোট দেওয়া যাবে কি না? বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এলাকা ছেড়ে চলে যাও। গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে।

৩০ তারিখের আগেই যেন সব বিচার শেষ করে ফেলা হবে!

আমীর খসরুর বক্তব্যের পর কোতোয়ালি-বাকলিয়া আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বিএনপি প্রার্থীরা ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি থাকার কথা বলছেন। আমার নির্বাচনী এলাকায় তো আমি ভোটারদের মধ্যে কোনো ভয়ভীতি দেখছি না। এলাকায় সব প্রার্থীর পোস্টার আছে। ২০০৫ সালের নির্বাচনে (সিটি করপোরেশন নির্বাচন) গুলি করে শ্রমিক লীগের ৬ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমরা তো ভয়ভীতির কথা বলে নির্বাচন থেকে সরে যাইনি।

তিনি বলেন, আসলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের নামে ওনারা যে তা-ব চালিয়েছিলেন, ৫০০ লোককে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন, মানুষের মধ্যে ভয় থাকলে সে জন্যই আছে। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি দল এখন বিএনপির সঙ্গে মিশে গেছে। সে জন্যও মানুষের মধ্যে ভয় আছে।

নওফেল এই বক্তব্য দেওয়ার সময় আমীর খসরু প্রতিবাদ করে বলেন, এসব রাজনৈতিক বক্তব্য। এটা রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার জায়গা নয়। এরপর নওফেল বলেন, আপনারা রাজনৈতিক অভিযোগ আনতে পারলে আমরা কেন বলতে পারব না?

রিটার্নিং অফিসার আবদুল মান্নান প্রসঙ্গ পাল্টানোর অনুরোধ করলে নওফেল বলেন, ইভিএম নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে। বিশেষ করে নারীদের বলা হচ্ছে, ইভিএম নাকি খুব কঠিন। এটাতে ভোট দিলে নাকি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রার্থীই শুধু জিতবেন। এই অপপ্রচার বন্ধে নির্বাচন কমিশনকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সভায় চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বাংলাদেশ জাসদের মইনউদ্দীন খান বাদল বলেন, দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা নিয়ে যেহেতু নির্বাচনে এসেছে, পার্থক্য তো আমাদের আছেই। তারা বলবে, নির্বাচনের পরিবেশ নেই। আমরা বলব, আছে। তারা বলবে, মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি আছে। আমরা বলব, নেই। নির্বাচনে জড়িতদের দোষারোপ করে তাদের কাছ থেকে আবার সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে সেটা সম্ভব না। আইন অনুসারে কাজ করতে বিভাগীয় কমিশনারসহ নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান বাদল।

সভায় বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, চট্টগ্রামে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে পারিবারিক ও আত্মীয়তার বন্ধন আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এটা সহায়ক। চট্টগ্রামের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। আশা করি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থাকবে। প্রার্থীরা যাতে নির্বিঘেœ গণসংযোগ করতে পারেন, সেটা আমরা দেখব। মানুষ অবশ্যই ভোট দিতে যেতে পারবে। এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করবেন না। দেখুন, অপেক্ষা করুন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শঙ্কর রঞ্জন সাহা, চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, উপপরিচালক ইয়াছমিন পারভিন তিবরিজী, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান, অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল ফয়েজ এবং নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম প্রমুখ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close