কুমিল্লা প্রতিনিধি ও আদালত প্রতিবেদক

  ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

‘আইএসআই টেপ’

মোশাররফের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কথিত এক টেলি কথোপকথনের সূত্র ধরে বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনেছেন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোহাম্মদ আলী সুমন। তার অভিযোগ, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কথিত এজেন্ট মেহমুদের সঙ্গে ওই কথোপকথনে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘বানচালের ষড়যন্ত্র’ করেছেন খন্দকার মোশাররফ। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে মোহাম্মদ আলীর আবেদনে। অন্যদিকে খন্দকার মোশারফ হোসেনের দাবি, ওই অডিও টেপ ‘বানোয়াট’, আইএসআইয়ের কারো সঙ্গে কখনো তার ‘কথোপকথন হয়নি’। দাউদকান্দি থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন জানান, মোহাম্মদ আলীর অভিযোগটি তারা গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে, এ কারণে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে কুমিল্লা-১ ও ২ আসনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ। আর অভিযোগকারী মোহাম্মদ আলী কুমিল্লা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সুবিদ আলী ভূঁইয়ার ছেলে।

বিএনপি-জামায়াতের নেতারা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে মিলে ‘ষড়যন্ত্র’ করছেন বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা। খন্দকার মোশাররফের ওই অডিও টেপকে তারা সেই অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে দেখছেন।

ওই অডিও টেপের ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন এরই মধ্যে প্রতিবেদন প্রচার করেছে। সময় টেলিভিশন ওই টেলি কথোপকথনের ৭ মিনিটের একটি অডিও তাদের ইউটিউব চ্যানেলে দিয়েছে। ওই অডিওতে এক পাশের কণ্ঠ খন্দকার মোশাররফের এবং অন্যপ্রান্তের কণ্ঠ কথিত সেই আইএসআই কর্মকর্তার বলে দাবি করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সেই আইএসআই এজেন্ট আছেন দুবাইয়ে। তাদের দেখা হয়েছিল ইসলামাবাদের একটি হোটেলে। তারা আবারও বৈঠক করতে চাইছেন কিন্তু মামলা জটিলতায় তা সম্ভব হচ্ছে না।

যাকে মোশাররফ বলা হচ্ছে, তাকে ওই অডিওতে ইংরেজিতে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি জানেন... আমরা সত্যিই সংকটে আছি। আমার বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। একটি মামলায় আমার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। আমি দেশের বাইরে যেতে পারি না। এই আমার পরিস্থিতি।’

কথোপকথনের এক পর্যায়ে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি এখনো তাই আছি যা আপনারা ভাবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমার পক্ষে বাইরে এসে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব না। আমি জানি, তা করা গেলে ভালো হতো। কিন্তু আমি এখানে আপনার লোকের সঙ্গে দেখা করতে পারি, আপনারা বার্তাটা পেতে পারেন। কিন্তু আমি আপনাদের অনুরোধ করতে চাই, আপনারা যদি আপনাদের দিক থেকে চীনের সঙ্গে কো-অপারেট করতে পারেন, বাংলাদেশে সেটা নির্বাচনের আগে ফলপ্রসূ হতো।’

অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, সেটা এরই মধ্যে করা হয়েছে। সেজন্যই একজন প্রতিনিধিকে পাঠালে ভালো হয়। চিকিৎসার কারণে বা ওমরা করাতে যদি দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয় সেখানেও বৈঠকের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে তার আগে বাংলাদেশে তাদের ‘অফিসের’ যিনি আছেন, তার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করা হবে।

থানায় মোহাম্মদ আলীর করা অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘খন্দকার মোশাররফ হোসেন তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে দুবাই অবস্থানরত পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এজেন্ট মেহমুদের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন যা ১১ তারিখ এশিয়ান ট্রিবিউনে প্রকাশিত হয় এবং ডিবিসি নিউজ থেকে প্রাপ্ত অডিও থেকে জানা যায়, খন্দকার মোশররফ বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেন। এ রকম আলোচনা করে খন্দকার মোশররফ রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন।’ অভিযোগ অস্বীকার করে এক বিবৃতিতে খন্দকার মোশাররফ বলেছেন, ‘মেহমুদ নামে ওই ব্যক্তিকে আমি চিনি না বা ভিডিওতে কথিত আইএসআইয়ের কোনো ব্যক্তি বা কর্মকর্তাকেও চিনি না। কথিত ব্যক্তি কিংবা আইএসআই এর কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে কখনো আমার কথোপকথন হয়নি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close