কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

চট্টগ্রামে ভোটের মাঠে নেই হেভিওয়েটরা

ব্যাংকঋণ, বিল বকেয়া ও মনোনয়ন না পাওয়া

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নানা কারণে অংশ নিতে পারছেন না আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী। ব্যাংক ঋণ, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ও মামলার কারণে নির্বাচন করতে পারছেন না তারা। আবার কেউ দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচনে আসনে পারেননি। এ ধরণের সমস্যায় পড়া হেভিওয়েটদের অনুপুস্থিতিতে ভোটের মাঠে তেমন একটা উত্তাপ ছড়াচ্ছে না এবার। এদিকে, চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি আসনে প্রচারণায় পিছিয়ে আছেন বিএনপি প্রার্থীরা। অন্যদিকে প্রতিপক্ষ দুর্বল দেখে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও নামছেন না কোমর বেধে। সবমিলিয়ে ভোটের মাঠে উত্তাপ কম।

বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা গণসংযোগ শুরু করেছেন। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। প্রচার-প্রচারণাও তেমন জমেনি। বুধবার সকালে বহদ্দারহাট এলাকা থেকে প্রচারণা শুরু করেন চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান। তিনি প্রথমবারের মত সংসদ নির্বাচন করছেন। এর আগে ওই আসনে নির্বাচন করেন দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ খান। এবার মোরশেদ খান বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পাননি।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন দলটির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি মোসলেম উদ্দিন চৌধুরী। ওই আসনে ফের মহাজোটের প্রার্থী হয়েছেন জাসদের মঈনউদ্দিন খান বাদল। এতে ক্ষুব্ধ, হতাশ মোসলেম উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা। এমন অবস্থায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাসদের বাদলের পক্ষে প্রচারণায় নামতে দেখা যাচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।

এদিকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে চট্টগ্রাম-৮ ও ৯ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি, যিনি সর্বশেষ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাননি নুরুল ইসলাম বিএসসি। তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে নির্বাচিত হন। দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এরপর দলের বিদ্রোহী প্রার্থী না হওয়ার পুরস্কার হিসেবে ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই তাকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এবার নির্বাচনের মাঠে অনুপুস্থিত আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুন্ড আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরী নির্বাচন করতে পারছেন না। দলীয় মনোনয়ন পেলেও ব্যাংকের ঋণ খেলাপী হওয়ায় নির্বাচনে অযোগ্য হন। হাটহাজারী-৫ আসনে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন এবং ফটিকছড়ি-২ ও রাঙ্গুনিয়া-৭ আসনের বিএনপির প্রার্থী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস কাদের চৌধুরীও এবার নির্বাচনের বাইরে। হাটহাজারীতে জোটের প্রার্থী থাকার পাশাপাশি মামলার কারণে মীর নাছির প্রার্থী হতে পারেননি। অন্যদিকে ঋণখেলাপির জন্য সাকা চৌধুরীর ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রার্থীতা বৈধতা পায়নি; যদিও তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। শুধু গিয়াস নন, তার ছেলে সামির কাদের চৌধুরী মনোনয়নপত্রও বাতিল হয়েছে একই কারণে।

এর ফলে প্রায় ৪০ বছর পর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের কোনো সদস্য সংসদ নির্বাচনে থাকছেন না।

১৯৯৬ সালে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বিএনপির হয়ে রাউজান থেকে সাংসদ হন। ২০০১ ও ২০০৮ সালে তিনি একই আসনে চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর কাছে হেরে যান।

এদিকে ধানের শীষের সমর্থনে সরে দাঁড়ান চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াতের সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী। এর আগে শাহজাহান চৌধুরী ১৯৯১ ও ২০০১ সালে সাতকানিয়া থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে কারাবন্দি এ জামায়াত নেতা ভোটের মাঠে নেই। চট্টগ্রাম-৯ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। তবে কারাবন্দি থাকায় তিনি প্রচারণা চালাতে নামতে পারছেন না মাঠে। গত ৭ নভেম্বর ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছিলেন ডা. শাহাদাত।

অন্যদিকে পটিয়ার এবার ধানের শীষের টিকেট পেয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম। এতে বাদ পড়েছেন বিএনপির দুইবারের সাংসদ গাজী মো. শাহজাহান জুয়েল। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জয়ী হওয়ার সুবাদে জুয়েলের শক্ত অবস্থান রয়েছে পটিয়ায়। এনামকে টিকেট দেয়ায় জুয়েলের অনুসারীরা ভোটের মাঠে কতটা সক্রিয় থাকবেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে জুয়েলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, পটিয়ায় দলের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল তা শিগগিরই অবসান হবে বলে আশা করছি। নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীকে জয়ী করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ।

এ বিষয়ে পটিয়ায় বিএনপির প্রার্থী এনামুল হক এনাম বলেন, পটিয়া হচ্ছে বিএনপির ঘাঁটি। নানা কারণে দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হলেও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন ও নির্বাচনে যাতে সুষ্ঠু হয় সেজন্য নেতাকর্মীরা সক্রিয় থাকবে।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, নানা কারণে এবার কয়েকজন সিনিয়র রাজনীতিবিদ নির্বাচন করতে পারছেন না। প্রচারণার ক্ষেত্রে সবাই যাতে সমান সুযোগ পায় সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close