রিয়াজ মুন্না, চবি

  ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮

ভয়াবহ সেশনজটের কবলে চবির ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ

ছয় বছর পেরিয়েও স্নাতক শেষ করতে পারছেন না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের (আইএমএল) ভাষা ও ভাষাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক স্বল্পতা, শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণে অনীহা, নিয়মিত বিভাগীয় প্রধান না থাকা, শ্রেণিকক্ষ সংকট ও ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতায় লাগাম ছাড়া হচ্ছে ইনস্টিটিউটের সেশনজট। ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের অধীনে বিভিন্ন ভাষার ওপর ডিপ্লোমা কোর্সের মাধ্যমে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে এ ইনস্টিটিউটের অধীনে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ভাষা ও ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করা হয়। অনার্স কোর্সে ছয়টি ব্যাচে বর্তমানে ২১৮ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। এ ছাড়াও ৮টি ভাষা কোর্সের অধীনে নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলে প্রায় ৯০০ শিক্ষার্থী রয়েপ্রণ। বিশালসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য ১৩ জন শিক্ষক থাকলেও এদের মধ্যে দুজন শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত চার বছরের স্নাতক কোর্স পাঁচ-ছয় বছরেও শেষ হচ্ছে না। হতাশায় নিমজ্জিত এসব শিক্ষার্থী আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বিভিন্নভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশেও প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়ছেন। পরিবার ও সমাজের কাছেও হচ্ছেন অপমান ও অবহেলার পাত্র। সরেজমিনে তদন্তে জানা গেছে, বিভাগটির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্নাতক সমাপনী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এ বছরের জুলাইয়ে। যেটি ২০১৬ সালে হওয়ার কথা। সে হিসাবে এ ব্যাচটি ২৪ মাসের জটে আটকে আছে। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় ব্যাচটির তৃতীয় বর্ষ সমাপনী অনুষ্ঠিত হয় এ বছরের জুনে। যার ফল এখনো অপ্রকাশিত। এ ব্যাচটিও ১৮ মাসের জটে আটকে আছে। তদ্রুপ ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় ব্যাচটির দ্ব্তিীয় বর্ষ সমাপ্ত হয় এ বছর জানুয়ারিতে। এটির ফল এখনো অপ্রকাশিত। এ ব্যাচটি ভুগছে ১৩ মাসের জটে। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে চতুর্থ ব্যাচটির গত বছর মার্চে অনুষ্ঠিত ১ম বর্ষ সমাপনীর পর আজও পর্যন্ত দ্বিতীয় বর্ষ পার করতে পারেনি। এ ব্যাচটিও রয়েছে ১৩ মাসের জটে। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে থাকা পঞ্চম ব্যাচটির ১ম বর্ষ সমাপনী এ বছর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হলেও এখনো ফল প্রকাশিত হয়নি। ৭ মাসের সেশনজটে আছে এ ব্যাচটিও। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ব্যাচটির প্রথম বর্ষ সমাপনী আজও হয়নি। ইতোমধ্যে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে নতুন আরেকটি ব্যাচ প্রবেশ করছে। এ হিসাবে ষষ্ঠ ব্যাচটিও দুই মাসের বেশি জটে আটকে আছে।

ব্যাচভেদে তারতম্য থাকলেও গড়ে সেশনজট বছর ছাড়িয়ে গেছে। ১ম ব্যাচের অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দেড় বছর পর অনুষ্ঠিত হয়ে ৬ মাস আগে শেষ হলেও এখনো ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। ফলাফল প্রকাশিত না হওয়ায় পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না পরবর্তী ব্যাচের। তাছাড়া ২য় ব্যাচের পরীক্ষা জুন মাসে শেষ হলেও এখনো ফলাফল প্রকাশ করতে পারেনি। ৩য় ব্যাচের পরীক্ষাও এখনো শেষ হয়নি। যাদের এখন চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দেওয়ার কথা। তাছাড়া ২য় বর্ষে একই সঙ্গে আটকে আছে ৩টি ব্যাচ।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিভাগের ১ম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে স্নাতক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে মাত্র। এখনো ফল পাইনি। আমাদের সঙ্গের অন্যান্য বিভাগের সহপাঠীরা ইতোমধ্যেই কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন। স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে কত সময় লাগবে জানি না।

এ ছাড়াও শিক্ষক এবং শ্রেণিকক্ষ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিভাগটির ৬টি সেশনের জন্য শ্রেণিকক্ষ রয়েছে মাত্র ১টি। শিক্ষার্থীদের ক্লাসের সুবিধার্থে গ্যালারিতে ক্লাস নেওয়া হলেও অনেক সময় বিদ্যুৎ না থাকলে ক্লাস করানো সম্ভব হয়ে উঠে না। অনেক সময় অন্য বিভাগকে সুযোগ দিতে গিয়ে অর্ধেক সময়ে রুম ছেড়ে দিতে হয়। সেই সঙ্গে সেমিনার লাইব্রেরি না থাকায় শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরি সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

বিভাগটির একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে জানান, শিক্ষক স্বল্পতা এবং শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বিভাগটি আরো ভয়াবহ সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে। বিভাগের সভাপতি সাবরিনা ইসলাম সুইটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, আমাদের পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। নেই পর্যাপ্ত জনবলও। মাস্টার্স, অনার্স ও বিভিন্ন ভাষা কোর্স মিলে হাজারের অধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন। এদেরকে নিয়মিত পাঠদান করতে পারছি না শুধু শ্রেণিকক্ষের অভাবে। সেমিনার লাইব্রেরি ও রুম সংকট নিয়ে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সেকান্দর চৌধুরী বলেন, অনুষদে পর্যাপ্ত কক্ষ না থাকায় ক্লাসরুম সমস্যা সমাধান সম্ভব হচ্ছে না। নতুন কলা অনুষদ চালু হলে শিগগিরই সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close