চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

চাঁপাইয়ে ‘জাল সনদে’ চাকরি করছেন মাদ্‌রাসাশিক্ষক!

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের খেসবা দাখিল মাদরাসার বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে জাল সনদপত্রে চাকরির অভিযোগ উঠেছে। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার উত্তর মেরু-ী গ্রামের মো. আলাউদ্দিনের স্নাতক (পাস) সনদপত্রে ১৪ বছর ধরে এই মাদরাসায় চাকরি করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার খেসবা গ্রামের মো. আলাউদ্দিন। সনদপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি নেওয়ার পর ৫ বছর ধরে এমপিওভুক্তির সরকারি বেতন-ভাতাও উত্তোলন করছেন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ‘আসল’ আলাউদ্দিন। তবে এই শিক্ষক দাবি করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভুল করে তাকে এই সনদ দিয়েছে।

জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার খেসবা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মো. আলাউদ্দিন ১৯৯৯ সালে নওগাঁর মঙ্গলবাড়ি এমএস ডিগ্রি কলেজ থেকে স্নাতক (পাস) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। ওই বছর তার ফল স্থগিত করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর ২০০১ সালে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার এমএ রউফ ডিগ্রি কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতক পাস করেছেন মর্মে সনদপত্র দিয়ে ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি নাচোল উপজেলার খেসবা দাখিল মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান) পদে যোগ দেন আলাউদ্দিন।

২০১৩ সাল থেকে এমপিওভুক্তির সরকারি বেতন-ভাতাও নিয়মিত উত্তোলন করছেন তিনি। কিন্তু আলাউদ্দিনের স্নাতক পাস করার বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে সন্দেহ দেখা দেয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ করেন তারা।

অবশেষে এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামলে বেরিয়ে পড়ে আসল রহস্য। নাচোল খেসবা দাখিল মাদরাসায় চাকরির জন্য জমা দেওয়া শিক্ষক আলাউদ্দিনের স্নাতক সনদপত্রের পাসের বছর (২০০১), রোল নম্বর (৩০১২২৬) ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের (৭৪৮৮৭৮) ভিত্তিতে মানিকগঞ্জের এমএ রউফ ডিগ্রি কলেজে যোগাযোগ করা হলে জানা যায়, এই আলাউদ্দিন সেই আলাউদ্দিন নন। যার সনদে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলাউদ্দিন চাকরি করছেন, সেই আলাউদ্দিনের বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার উত্তর মেরু-ী গ্রামে। তার বাবার নাম কোকিল উদ্দিন। সেই আলাউদ্দিন বর্তমানে একটি ওষুধ কোম্পানিতে সিলেটে কর্মরত। শুধু নামের মিল থাকায় তার সনদ নিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাকরি করছেন আরেক আলাউদ্দিন। বিষয়টি জানতে পেরে নকল আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন আসল আলাউদ্দিন।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে প্রতারক আলাউদ্দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার আড্ডা মোড় এলাকার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সাব্বিরের সহায়তায় মানিকগঞ্জের আলাউদ্দিনের সাময়িক সনদপত্রটি সংগ্রহ করে। স্নাতক সনদপত্রে শিক্ষার্থীর বাবার নাম না থাকার সুযোগটি কাজে লাগিয়েই এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটিয়েছেন আলাউদ্দিন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সরাসরি সাক্ষাৎ দেননি। মাদরাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে সনদ জালিয়াতির কথা সরাসরি স্বীকার করে আলাউদ্দিন বলেন, তিনি কখনোই মানিকগঞ্জের এমএ রউফ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ছিলেন না। তাই সেখান থেকে স্নাতক পরীক্ষায় অংশও নেননি। এ সময় তিনি দাবি করেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভুল করে তাকে ওই কলেজের নামে স্নাতক পাসের এই সনদপত্র দিয়েছে। কিন্তু এই ভুল সনদ দিয়ে কীভাবে চাকরি করছেন- এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

এদিকে খেসবা দাখিল মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট আবদুর রশিদ তার প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করারও অনুরোধ করেন। নাচোল উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. দুলালউদ্দিন খান জানান, অন্যের শিক্ষা সনদ নিয়ে চাকরি করার বিষয়টি শোনার পর তিনি আলাউদ্দিনকে তার কাগজপত্র নিয়ে ডাকা হলে নানা তালবাহানায় সে আর দেখাই করেনি। এ ব্যাপারে নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা জানিয়েছেন, এখানে তিনি নতুন যোগ দেন। তাই বিষয়টি তার জানা নেই। তবে এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ইউএনও সাবিহা সুলতানা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close