আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

পৃথিবী থেকে উধাও হচ্ছে অক্সিজেন!

পৃথিবী থেকে দ্রুত উধাও হয়ে যাচ্ছে আমাদের শ্বাসের বাতাস! অক্সিজেন। এত দ্রুত হারে তা পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে মহাকাশে যে, রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। খবর আনন্দ বাজার।

ওজনে হালকা হয়ে পড়ছে পৃথিবী। নাসার বিজ্ঞানীরা হিসাব করে নানা রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, যেমনটা ভাবা হয়েছিল, পৃথিবীর বায়ুমন্ডল প্রায় সেভাবেই উত্তরোত্তর পাতলা হয়ে এলেও, বাতাসের অক্সিজেন প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দ্রুত হারে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে মহাকাশে। সেই হারে কমছে না গাছপালাদের রান্নাবান্নার (সালোকসংশ্লেষ) জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইড। অক্সিজেনের মতো অত দ্রুত হারে পৃথিবীতে কমে যাচ্ছে না বাতাসের নাইট্রোজেন ও মিথেন। যা বেঁচে থাকার জন্য খুব কাজে লাগে অণুজীবদের। বিজ্ঞানীদের অনুমান, বহু কোটি বছর আগে এমন দশাই হয়েছিল আমাদের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলের।

উদ্বেগ বাড়ছে বলেই ছোটাছুটি শুরু হয়ে গিয়েছে বিজ্ঞানীদের, কেন প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত হারে উধাও হয়ে যাচ্ছে শ্বাসের বাতাস, তার কারণ জানতে। গত মঙ্গলবার রাতে সেই লক্ষ্যেই নরওয়ের উত্তর উপকূল থেকে পাঠানো হয়েছে ‘ভিশনস-২’ সাউন্ডিং রকেট। অভিনব রকেট। যাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পাঠানোর কয়েক মুহূর্ত পরেই ফিরিয়ে আনা যাবে পৃথিবীতে। তারই মধ্যে ঢুকে গিয়ে খবরাখবর নিয়ে ফিরে আসবে ওই সাউন্ডিং রকেট।

তবে শুধু রকেট ছুড়েই তাদের কাজ শেষ করেননি বিজ্ঞানীরা, মেরিল্যান্ডের গ্রিনবেল্টে নাসার গর্ডার্ড স্পেস সেন্টারের একটি গবেষকদলও পৌঁছে গিয়েছে নরওয়ের উত্তর উপকূলে। কীভাবে অক্সিজেন মহাকাশে দ্রুত উধাও হয়ে যাচ্ছে, তার ওপর নজর রাখতে।

নাসার ওই গবেষকদলের অন্যতম সদস্য, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাটমস্ফেরিক সায়েন্স বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিমাদ্রি সেনগুপ্ত অসলো থেকে বলেছেন, ‘অরোরা বোরিয়ালিসের সৌন্দর্য দেখতে আসিনি আমরা। পৃথিবীর বায়ুমন্ডল পাতলা হয়ে যাওয়া, অক্সিজেনের মহাকাশে দ্রুত চলে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে অরোরা বোরিয়ালিসের। আমরা সেটাই দেখতে এসেছি।’

গত শতাব্দীর গোড়ায়। ১৯০৪ সালে এমন আশঙ্কার কথা বলেছিলেন স্যার জেমস জিনস। তার ‘দ্য ডাইনামিক্যাল থিয়োরি অব গ্যাসেস’ তাত্ত্বিকভাবে জানিয়েছিল, পৃথিবীর বায়ুমন্ডল একদিন আমাদের ছেড়ে মহাকাশে হারিয়ে যাবে। সেই দিন পৃথিবীর আর কোনো বায়ুমন্ডল থাকবে না। ফলে, বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান উপকরণটি আর পাবে না এই নীলাভ গ্রহের জীবজগৎ। তবে সেটা হতে সময় লাগবে আরো অন্তত ১০০ কোটি বছর।

কিন্তু নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বায়ুমন্ডলের উত্তরোত্তর পাতলা হয়ে যাওয়ার ঘটনাটা অত ধীরে ঘটছে না। নরওয়ের উত্তর উপকূলে নাসার ‘ভিশন্স-২’ মিশনের প্রধান বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডগ রাউল্যান্ড লিখেছেন, ‘প্রতিদিন পৃথিবীর কয়েক শত টন বায়ুমন্ডল আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে মহাকাশে। তার ফলে, খুব দ্রুত হারে তার ওজন হারিয়ে ফেলছে আমাদের এই গ্রহ। পৃথিবী দ্রুত হালকা হয়ে যাচ্ছে।’

হিমাদ্রির কথায়, ‘অক্সিজেন পরমাণুর যে পরিমাণ শক্তি রয়েছে, তার অন্ত ১০০ গুণ শক্তি প্রয়োজন বাতাসের অক্সিজেনকে পুরোপুরি পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে মহাকাশে চলে যেতে হলে। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দ্রুত হারে পৃথিবী ছেড়ে চলে য়াচ্ছে অক্সিজেন। গত শতাব্দীর ছয় বা সাতের দশকেও অক্সিজেনের এই দ্রুত প্রস্থানের আঁচ মেলেনি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close