পাঠান সোহাগ

  ২১ নভেম্বর, ২০১৮

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত

ট্রাস্ট আধুনিক হাসপাতাল কি আলোর মুখ দেখবে

রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানা সড়কের মুক্তিযোদ্ধাদের একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্র ট্রাস্ট আধুনিক হাসপাতালটি নানা জটিলতায় এখন বন্ধ রয়েছে। সময়ের ব্যবধানে সব চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারী চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের একমাত্র হাসপাতালটি। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে হাসপাতালের বিশাল ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। অথচ একসময় এটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা-পুনর্বাসনের কেন্দ্র। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ায় ওই হাসপাতালের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয় বলে জানা গেছে।

মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা পল্লীতে ৩০০ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারসহ এক হাজার পরিবার বসবাস করছে। তারা অভিযোগ করে বলে, কোনো অসুখ-বিসুখে তাদের ঢাকা মেডিকেলসহ শ্যামলীর বিভিন্ন হাসপাতালে যেতে হয়। মুক্তিযোদ্ধা নিজামউদ্দিন মিয়ার স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, পরিবার থেকে কেউ অসুস্থ হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ হাসপাতাল চালু হলে আমাদের এত দূরে যেতে হতো না। এখানেই চিকিৎসা করাতে পারতাম। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মো. আমির হোসেন মোল্লা বলেন, ‘আমারা চাই এই হাসপাতালটি আবার চালু হোক। কিন্তু প্রশাসন আন্তরিক নয়, কেউ কারো কথা শুনে না। আমরা বারবার বলেছি কোনো কাজ হয়নি।’ মুক্তিযোদ্ধাদের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতালটি নিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধার রয়েছে আক্ষেপ আর হতাশা। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় আরেকটি অত্যাধুনিক মানের হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও কোনো অগ্রগতি নেই।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল ফটক। সীমানাপ্রাচীর নেই। পাঁচতলার ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ফটকের ওপর লেখা আছে ‘ট্রাস্ট আধুনিক হাসপাতাল’। সড়কের পাশেই তিনটি অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ বয়েকটি গাড়ি অকেজে অবস্থায় পড়ে আছে। তবে হাসপাতাল বলে আর চেনার উপায় নেই। সম্পূর্ণ ভবনের বিভিন্ন অংশ থেকে সিমেন্ট, বালু ঝরে ঝরে পড়ছে, খসে পড়ছে পলেস্তরা। ভেতরে অনেকটা অংশ ধসে পড়ার অবস্থা। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জীর্ণদশায় পড়ে আছে। ভবনের গায়ে ক্ষত ধরেছে। জানালার কাচ ভাঙা। অনেকটাই ভুতড়ে পরিবেশ।

মিরপুর চিরিয়াখানা প্রধান সড়কে হাসপাতালের সামনে ফুটপাতের সম্পূর্ণ জায়গা দখল করে স্থাপনা করেছে অনেকে। প্রধান ফটক ভেদ করে ভেতরে ঢোকার কোনো উপায় নেই। রোগী, চিকিৎসক বা অন্য চিকিৎসাকর্মী কেউ নেই। তিনজন নিরাপত্তাকর্মী কাজ করছেন। তবে তিনজন সিফটে ২৪ ঘণ্টা দেখভাল করেন। নিরাপত্তাকর্মী আরিফুল ইসলাম বলেন, পরিত্যক্ত থাকায় হাসপাতালের কিছু অংশ দখল হয়ে গেছে। কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা আত্মীয়স্বজন পরিচয় দিয়ে ফুটপাতসহ জমিতে স্থাপনা তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় হাসপাতাল আঙ্গিনা পরিষ্কার না করার জঙ্গল হয়েছিল। আমরা ভেতরের অংশ পরিষ্কার করে সবজির বাগান করেছি।

জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে ১৯৮০ সালের ২৫ মার্চ যুদ্ধাহতদের চিকিৎসার জন্য মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নামে এই ভবনের উদ্বোধন করা হয়। তার বেশ কিছুদিন পর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ফ্রান্সের আর্থিক সহায়তায় শহীদ ক্যাপ্টেন মুনসুর আলী মেডিকেল কলেজ নামে ১০০ শয্যার ট্রাস্ট আধুনিক হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৯১ সালের ১ ডিসেম্বর সম্পূর্ণ কাজ শেষে এই হাসপাতালের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। হাসপাতালটি চালুর পর মুক্তিযোদ্ধারা ছাড়াও সাধারণ মানুষ এখান থেকে কিছু চিকিৎসা সুবিধা নিতেন। ১৯৯৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে হাসপাতালটি ইজারা দেওয়া হয়। ওই প্রতিষ্ঠান ‘ইসলামী উম্মাহ মেডিকেল কলেজ’ নাম দিয়ে হাসপাতালটি পরিচালনা শুরু করে। ২০০ ছাত্রছাত্রী ভর্তিও করে তারা। ১৯৯৪ সালে থেকে এই হাসপাতালের নানা জটিলতায় কার্যক্রম স্থবির হতে থাকে। তারপর থেকে হাসপাতালটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. গোলাম মোস্তফা দুলাল বলেন, ‘আমি ৪০ বছর দায়িত্বে ছিলাম। কখনো পূর্ণাঙ্গরূপ পায়নি হাসপাতালটি। শুধু বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে সেবা দিয়ে আসছিল।’ তিনি বলেন,‘আমি দুই বছর আগে অবসরে গিয়েছি। এর আর কোনো খোঁজখবর রাখি না। তবে সরকার ওই পরিত্যক্ত জমিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নতুন করে একটি আবাসিক ভবন ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ছিল।’

বর্তমানে ট্রাস্ট আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবদুস সালাম চলতি দয়িত্বে আছেন। তিনি তাবানি ভ্যাবারেজের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের বিষয়ে আমার কোনো বিষয় জানা নেই। আগে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তাবানি ভ্যাবারেজে কাজ করেছি। বিস্তারিত জানতে চাইলে মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়ে যেতে হবে। ’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close