প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২০ নভেম্বর, ২০১৮

ব্রেক্সিট নিয়ে জানতে চাওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর

২০১৯ সালের মার্চ নাগাদ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যকে বেরিয়ে যেতে হবে। ইন্টারনেটের এই যুগে যখনই কোনো বিষয় নিয়ে জানতে চাই, বেশির ভাগ মানুষ গুগলে সেটি লিখে খোঁজ করে। ব্রেক্সিটও তার ব্যতিক্রম নয়। গত কিছুদিনে ব্রেক্সিট নিয়ে গুগলে সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলোর উত্তর এখানে সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

ব্রেক্সিট মানে কী? ব্রেক্সিট চুক্তির পরে ব্রিটেন পার্লামেন্টের সমর্থন পেতে হবে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেকে। ‘ব্রিটেন এক্সিট’ নামটিকে সংক্ষেপে ডাকা হচ্ছে ব্রেক্সিট নামে, যা হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৮ দেশ একে অন্যের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পারে এবং সেখানে বসবাস বা কাজ করতে পারে। ৪০ বছরের বেশি সময় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার পর ২০১৬ সালের জুনে একটি গণভোট নিয়েছিল যুক্তরাজ্য, যেখানে ভোটাররা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ভোট দেন। কিন্তু সেই ভোটের ফলাফলের সঙ্গে সঙ্গেই ব্রেক্সিট হয়ে যায়নি। এই বিচ্ছেদ ঘটবে ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ তারিখে। ব্রেক্সিট নিয়ে ভোটাভুটির পর, প্রক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাজ্য আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। এই আলোচনার বিষয়, কী শর্তে বিচ্ছেদ হবে। এটা হচ্ছে বেরিয়ে আসার সমঝোতা, যেখানে নির্ধারণ করা হবে, যে কী কী শর্তে ব্রিটেন ব্রেক্সিট থেকে বেরিয়ে আসবে। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর কী ঘটবে, তা আলোচ্য বিষয় নয়।

গত বুধবার এই বিচ্ছেদের বিষয়ে খসড়া চুক্তি তুলে ধরেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। এখানে তার মূল বিষয়গুলো : অর্থকড়ি : ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেনা চুকাতে যুক্তরাজ্য ৩৯ বিলিয়ন পাউন্ড দেবে। সময়সীমা : ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক বিষয় ঠিক করে নেবে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মানিয়ে নেবে।

অভিবাসন : ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকরা এবং তাদের পরিবার মুক্তভাবে যুক্তরাজ্যে আসতে পারবেন।

বাণিজ্য : অন্তর্র্বর্তী সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না।

উত্তর আয়ারল্যান্ড : ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যুক্তরাজ্য, কেউ চায় না উত্তর আয়ারল্যান্ড আর রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের মধ্যে কোনো কড়া সীমান্ত থাকুক। তাই দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে, ব্রেক্সিট নিয়ে বোঝাপড়ায় যাই ঘটুক না কেন, এখানে সীমান্ত উন্মুক্ত থাকবে।

বেক্সিট খসড়া চুক্তি বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনেক এমপি। পুরো ব্রেক্সিট আলোচনার মধ্যে এটা দুই পক্ষের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কোনো পক্ষই চায় না, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের মাঝে প্রহরীচৌকি, তল্লাশি ঘটুক। সুতরাং তারা একটি ‘ব্যাকস্টপে’ সম্মত হয়েছে, যার মানে এই দুটি দেশের মাঝে কখনোই কড়াকড়ি সীমান্ত থাকবে না। এর মানে পুরো যুক্তরাজ্যে না হলেও উত্তর আয়ারল্যান্ডে খাবার, পণ্যের মানে কিছু ইইউ রীতিনীতি অব্যাহত থাকবে। এই পদ্ধতি শুধু তখনই কার্যকর হবে, যদি ইইউ আর যুক্তরাজ্যের মধ্যে অন্তর্র্বর্তীকালীন সময়েও কোনো বাণিজ্য চুক্তি না হয়।

কিন্তু বিষয়টি বিতর্কিত। অনেকে হয়তো বলবেন, এর ফলে যুক্তরাজ্যকে এখনো ইইউ আইনের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। আবার উত্তর আয়ারল্যান্ডের ক্ষেত্রে আলাদা বিধিবিধান থাকবেÑএটাও অনেকে পছন্দ করছেন না।

ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে কখন পার্লামেন্ট ভোটাভুটি করবে? যুক্তরাজ্যের অনেক বাসিন্দা ব্রেক্সিট প্রশ্নে আরেকটি গণভোটের দাবি তুলেছেন। ২৫ নভেম্বর এই চুক্তির বিষয়ে ইউরোপীয় নেতাদের সমর্থন আদায়ের জন্য চেষ্টা করবেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।

সেখানে অনুমোদন পেলে তিনি ব্রিটেনের পার্লামেন্টে এমপিদের সমর্থনের জন্য তুলবেন। সেটা ডিসেম্বর নাগাদ হতে পারে। আপাতত মনে হচ্ছে, তার এই চুক্তিটি হয়তো পার্লামেন্টে প্রত্যাখ্যাত হবে। রক্ষণশীল দল থেকে তিনি যেমন পর্যাপ্ত সমর্থন পাচ্ছেন না, তেমনি অন্য দলের এমপিরাও এই চুক্তি নিয়ে সন্তুষ্ট নন।

আসলেই কি কখনো ব্রেক্সিট হবে? উত্তর আয়ারল্যান্ড আর রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের সীমান্তের বিষয়টি ব্রেক্সিট আলোচনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যুক্তরাজ্যের আইন বলছে, ব্রেক্সিট হতে যাচ্ছে। তবে অনেকে দ্বিতীয় দফার গণভোটের জন্য দাবি তুলেছেন। তারা প্রশ্ন তুলতে চান, ‘চুক্তির বিস্তারিত জানার পরও কি আপনি চান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে যাক?’ এটা হলে হয়তো ব্রেক্সিটের বিষয়টি বদলে যেতে পারে, তবে থেরেসা বারবার বলে আসছেন, দ্বিতীয় দফার গণভোট হবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close