আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি

  ১৮ নভেম্বর, ২০১৮

সমৃদ্ধ শিল্পাঞ্চল হিসেবে সম্ভাবনার দ্বারে বরগুনা

উপকূলীয় বরগুনা জেলার তালতলীর নিশানবাড়িয়াতে চীন-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তেঁতুবাড়িয়া এলাকায় খুলনা শিপইয়ার্ডের সম্প্রসারণ ডকইয়ার্ড তৈরি হচ্ছে। দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ যমুনা ৫০০ একর জমি ক্রয় করছে স্টিল মিল, জাহাজ ভাঙাশিল্প এবং আইসোটেক গ্রুপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি প্রভৃতি স্থাপনার জন্য করে যাচ্ছে কাজ। অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের প্রত্যন্ত বরগুনা জেলা দেশের একটি সমৃদ্ধ শিল্প এলাকা হিসেবে উঠে আসতে যাচ্ছে।

এ জেলায় প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আবাদি এবং অনাবাদি জমি, বনরাজি এবং সোনাকাটা, হরিণঘাটার মতো পর্যটন কেন্দ্র। এখানে বসবাস করে ঐতিহ্যবাহী রাখাইন সম্প্রদায়। জেলার ছয়টি উপজেলায় আরো বিভিন্ন ধরনের ছোট এবং মাঝারি শিল্প, কল-কারখানা গড়ে উঠার উপযোগিতা রয়েছে।

জেলায় শিল্প কল-কারখানার সঙ্গে অনিবার্যভাবেই তৈরি হয় অবকাঠামো এবং সৃষ্টি হয় কর্মসংস্থানের। এর প্রভাব পড়ে আর্থিক উন্নয়ন ও শিক্ষা-দীক্ষাসহ জীবনযাত্রায়। জানা গেছে, আইসোটেক গ্রুপ হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, পাঠাগার ইত্যাদিও তৈরির পরিকল্পনা করেছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান আইসোটেকের মিডিয়া অ্যাডভাইজার ফিরোজ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বরগুনায় রয়েছে ৫০ হাজারের বেশি জেলে পরিবার। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর ও নদী থেকে প্রচুর মাছ শিকার করেন। বেশির ভাগ সময়েই আহরিত মাছ স্বল্পমূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হন। মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য অন্য এলাকায় পাঠাতে হয়। ঢাকা, যশোর, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার আড়ত মালিকরা প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য এখানকার মাছ কিনে নিয়ে যান। এ জেলার পাথরঘাটায় একটি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র থাকলেও আমতলী ও তালতলীতে প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপন ও বরফকলের প্রয়োজনীয়তা বহু দিনের, জানিয়েছেন জেলে ও আড়তদাররা।

বরগুনার জেলা চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, তালতলী উপজেলার সাগর পাড়ের আশার চরে রয়েছে শুঁটকি পল্লী। কয়েক হাজার মানুষ শুঁটকি পল্লীতে কর্মরত। দেশের বিভিন্ন পোলট্রি ও ফিসফিডের কারখানাগুলো তালতলী থেকে কাঁচামাল হিসেবে শুঁটকি সংগ্রহ করে ট্রলার ও ট্রাকভর্তি করে নিয়ে যায়। শুঁটকিকে কেন্দ্র করে এখানে পোলট্রি ও ফিসফিড শিল্প গড়ে উঠতে পারে।

বরগুনার পায়রা, বিশখালী নদী থেকে আহরণ করা হয় গলদা ও বাগদা রেণু পোনা। বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চিংড়িঘেরগুলোতে রেণু পোনা রফতানি করা হয়। চিংড়ির রেণু পোনা উৎপাদনের জন্য মৎস্য হ্যাচারি এবং বাণিজ্যিক চাষের জন্য ঘের শিল্প গড়ে তোলা খুবই সহজ, আলাপকালে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহেদ আলী।

কৃষি বিভাগের সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ জেলার জলাভূমিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে শামুক পাওয়া যায়। চুন তৈরির উপকরণ ও মাছের খাদ্য হিসেবে সেগুলো চালান হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। শামুককে কেন্দ্র করে কুটির বা ছোট শিল্প গড়ে তোলা স্বল্প বিনিয়োগের ব্যাপার।

স্থানীয় চাষিরা ধান, বাদাম, ডাল, মিষ্টিকুমড়া, আলু, তরমুজ, বাঙ্গিসহ নানা জাতের ফসল উৎপাদন করে থাকেন। কিন্তু সংরক্ষণের জন্য এখানে অদ্যাবধি কোনো হিমাগার গড়ে ওঠেনি।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহি নূর আজম জানিয়েছেন, এখানকার জমিতে আউশ, আমন, ইরি, বোরোসহ নানা জাতের ধান চাষ হয়ে থাকে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পরে উৎপাদিত ধান দিনাজপুর, মুন্সীগঞ্জ, মদনগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জে চালান করা হয়। সেখানে যন্ত্রের মাধ্যমে সাধারণ ধান থেকে বাহারি নামের ও আকৃতির চালে রূপান্তর ঘটিয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে আবার এই অঞ্চলেই বিক্রি করা হচ্ছে। ধানের প্রাচুর্যতার ওপর ভিত্তি করে জেলার সব উপজেলাতেই একাধিক আধুনিক রাইস মিল গড়ে উঠতে পারে।

বরগুনার সদরের বালিয়াতলী এবং তালতলীতে রাখাইনদের নিজস্ব তাঁতশিল্প রয়েছে। প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়েছেন কমিউনিটি নেতা উসিট মং।

বরগুনার মাটি দিয়ে ভালো মানের ইট তৈরি হওয়াতে ছোট-বড় মিলিয়ে এ জেলায় হাজারখানেক বৈধ ও অবৈধ ইটভাটা, ব্রিকস ফিল্ড রয়েছে। এগুলোকে আইনের আওতায় এনে সঠিক নির্দেশনায় ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত করা গেলে এটিও হতে পারে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র।

তালতলী, সোনাকাটা, আশারচর, ফকিরহাট, বরগুনার বালিয়াতলী, বেতাগীর বিবিচিনি, পাথরঘাটার হরিণঘাটসহ বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পটকে কেন্দ্র করেও পর্যটনশিল্পের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close