উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

  ১৮ নভেম্বর, ২০১৮

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধে এনজিওদের উসকানি!

স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ

প্রত্যাবাসন বন্ধ হওয়ায় ক্ষুব্ধ উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় জনগণ এনজিওদের দায়ী করেছেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়ার কাজে যারা সহযোগিতা করেছে তাদেরও শাস্তির দাবি জানান সচেতন মহল। তাদের অভিমত, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে মিয়ানমার রাজি হয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যবাসনের দিনক্ষণ ঠিক করেছে। এখন প্রত্যাবাসন না হলে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গারা আর ফিরে না গিয়ে চিরস্থায়ীভাবে বাংলাদেশে বসবাসের সুযোগ খুঁজবে। তাদের ফেরত পাঠাতে পারছে না বলে বাংলাদেশকে দুষবে মিয়ানমার। কারণ দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক সাহায্য নেওয়ার দুরভিসন্ধি রয়েছে এনজিওগুলোর।

উখিয়া উপজেলা সুজন সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, মিয়ানমার সরকার প্রথমে দাবি করেছিল রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিক নয়। পরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জন্য উল্টো বাংলাদেশকে দোষারোপ করেছিল। পরে বাংলাদেশের সফল কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক হিসাবে স্বীকার করে প্রত্যাবাসনের জন্য রাজি হয়। অনেক চুক্তি আর সময় ক্ষেপণের পর ১৫ নভেম্বর কিছু রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। কিন্তু বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে পারেনি। এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক ঘটনা।

উখিয়ার ডিগলিয়াপালংয়ের মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, সীমিত সংখ্যক হলেও যে মিয়ানমার সরকার প্রত্যাবাসন শুরু করেছে এটাই আমাদের জন্য ভালো খবর ছিল। রোহিঙ্গাদের জন্য গাড়ি বহর ছিল, খাবার দাবার ছিল, বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল। তার পরও কেন রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো গেল না ?

তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ভালো করে বাংলাই বলতে পারে না। কিন্তু তাদের হাতে ছিল ইংরেজিতে লেখা প্লেকার্ড। আর তাদের মুখে যে সেøাগান দিচ্ছিল তা অবশ্যই কারো না কারো শিখিয়ে দেওয়া। এটা যেকোনো এনজিওর লোকজনের কাজ তা বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়া কথা নয়। স্থানীয় জনগণ হিসাবে আমাদের দাবি, আগে এই এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

টেকনাফ উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবুল হোসেন রাজু বলেন, ‘মিয়ানমার যখন প্রত্যাবাসনের জন্য রাজি হলো, কিন্তু আমরা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে পারলাম না। আগে বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে গিয়ে বলত রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে।

এখন মিয়ানমার সব জায়গায় গলা উঁচু করে বলবে ‘আমরা ফেরত আনতে রাজি ছিলাম কিন্তু বাংলাদেশ ফেরত দিতে পারেনি।’

‘রোহিঙ্গাদের যে সমস্ত দাবির কথা বলে ফেরত যায়নি, আদৌ কি সেই সব দাবি কি পূরণ করা সম্ভব? এসব দাবি ১০০ বছরেও পূরণ হবে না। সুতরাং, রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়েছে সেটা অনেকটা নিশ্চিত।’

তিনি আরো বলেন, ‘সমস্ত এনজিও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছে, তাদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’ টেকনাফের সাবেক কমিশনার আবদুল কুদ্দুস ও শিক্ষক শাহজাহান বলেন, ‘আমরা ব্যক্তিগতভাবে খুবই ক্ষুব্ধ এবং হতাশ। কারণ রোহিঙ্গারা যদি আন্দোলন করে ফেরত যাওয়া বন্ধ করতে পারে তাহলে তাদের ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে নেওয়া খুব কঠিন হবে। আর রোহিঙ্গার কারণে যাদের লাভ হচ্ছে, তারাই রোহিঙ্গাদের ফেরত না যেতে উৎসাহিত করছে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কি তাদের হাতে জিম্মি হয়ে থাকবে? নাকি আমরা ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যাব? প্রশ্ন করেন তিনি।

রামু কলেজের অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, ‘যখন থেকে শুনেছি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হচ্ছে। তখন থেকে একটি ভালো লাগা কাজ করছিল। কিন্তু একটি সংশয়ও মনের মধ্যে ছিল। কারণ রোহিঙ্গারা নিজ দেশে যে নাগরিক সুবিধা পায়নি তার চেয়ে শতগুণ সুযোগ সুবিধা বাংলাদেশে পাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা ফেরত না যাওয়াটা আমার মতে, স্থানীয়দের জন্য একটি বড় অশনি সংকেত।’

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যেভাবে বেপরোয়া আন্দোলন করছে, এটা কোনোভাবেই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। কারণ সুযোগ পেলে তারা আরো অনেক কিছুর জন্য এভাবে আন্দোলন করতে পারে। আর ১২ লাখ রোহিঙ্গা যদি আন্দোলনে নামে তাহলে পরিস্থিতি কি হতে পারে সেটা সহজে অনুমেয়। তাই সময় থাকতে, যেকোনোভাবেই হোক, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে শক্ত উদ্যোগ নিতে হবে।’

কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এম এ বারী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অনেক ধরনের রাজনীতি করছে। কম হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হওয়াটা খুব জরুরি ছিল, কারণ একটা প্রক্রিয়া শুরু হলে সেটা ধারাবাহিক থাকত। এখন পুরু প্রক্রিয়াটাই বন্ধ হয়ে গেছে।’

এদিকে, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বলেন, ‘এখনো সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি। তবে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফিরতে চাইলেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’ তবে সচেতন মহলের মতো, বাংলাদেশে এত সুযোগ পাওয়া রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। উখিয়া প্রত্যাবাসন সংগ্রাম ও রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গারা চলে গেলে কতিপয় এনজিওর চাকরি থাকবে না। মোটা অঙ্কের বেতন গুনতে পারবে না আর। তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধে কতিপয় এনজিও উসকানি দিচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close