মো. শাহ আলম, খুলনা

  ১৬ নভেম্বর, ২০১৮

ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে খুলনা

নির্মিত হবে মাল্টিমিডিয়া ট্রান্সপোর্ট টার্মিনাল মেট্রোপলিটন পার্ক ও ফাইভ স্টার হোটেল

মাল্টিমিডিয়া ট্রান্সপোর্ট টার্মিনাল, মেট্রোপলিটন পার্ক ও ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণসহ নানা পরিকল্পনা নিয়ে খুলনার জন্য সম্প্রতি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)। এ প্ল্যানে যানজট নিরসনে সড়ক ও সড়কের প্রবেশপথ প্রশস্তকরণের জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে খুলনা হবে আধুনিক মানের পরিকল্পিত নগরী। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো বলছে, ড্যাপের নির্দেশনা অনুসরণে ইতোমধ্যে তারা নির্ধারিত স্থানে প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছেন।

জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরই দেশে নগরায়ণের ছোঁয়া লাগে। পরে ১৯৬১ সালে মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪ দশমিক ৭৮ ভাগ লোক শহরে বসবাস শুরু করে, যা ১৯৮১ সালে বেড়ে ১৫ দশমিক শূন্য ৮ ভাগে উন্নীত হয়। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের বেশি লোক শহরে বসবাস করে। দ্রুত নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে নাগরিক চাহিদা, যেমন রাস্তাঘাট, ড্রেন, স্কুল, কলেজ, খেলার মাঠ, আবাসনব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ও চিত্ত বিনোদন ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু খুলনা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগরী হওয়া সত্ত্বেও এর আগে এসব চাহিদা পূরণে তেমন দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। তবে বর্তমানে খুলনায় উন্নয়নের মাত্রা বেড়েছে ও উন্নয়নসহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।

এ ছাড়া ধারণা করা হচ্ছে, খুলনাই হবে ভারত, মিয়ানমার ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। তাই নগরীর বাসিন্দা এবং বিনিয়োগকারীদের সঠিক ও নিরাপদ বিনিয়োগের স্থান হিসেবে নতুন নতুন স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ও অন্যান্য নাগরিক-সুবিধাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। চলতি বছর গত ১৭ জুলাই ওইসব প্রস্তাব খুলনা এলাকার জন্য ড্যাপ হিসেবে অনুমোদন পায়। ড্যাপে আগামী ১০ বছরের মধ্যে মানসিক হাসপাতাল, আলিয়া মাদ্্রাসা, বাজার, বাস-টার্মিনাল, সিমেট্রী, কলেজ, কমিউনিটি পার্ক, কেডিএ ভবন সম্প্রসারণ, কাউন্সিলর ভবন, ক্রিমেটোরিয়াম-১, ময়ূরী আবাসিক প্রকল্প, প্রতিবন্ধী স্কুল, ফায়ার স্টেশন, মৎস্য বাজার, জেনারেল হাসপাতাল, কবরখানা, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, আইটি ভিলেজ, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আবাসন, মেট্রোপলিটন পার্ক, নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার, বিদ্ধাশ্রম, পার্ক, খেলার মাঠ, প্রাইমারি স্কুল, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, রিহ্যাবিলিটেশন অঞ্চল, আবাসিক এরিয়া, স্যানিট্যারি ল্যান্ডফিল, সেকেন্ডারি স্কুল, সাইট অ্যান্ড সার্ভিস, সলিড ওয়েস্ট ড্যাম্পিং সাইট, স্টেডিয়াম, ময়লা-আবর্জনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে সেকেন্ডারি ট্র্যানেস্ফার স্টেশন, টিটিসি, টাউন সেন্টার, ট্রাক টার্মিনাল, ওয়াটার ওয়াল্ড ও পাইকারি কাঁচাবাজার ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশনা রয়েছে। এর মধ্যে মাল্টিমিডিয়া ট্রান্সপোর্ট টার্মিনাল পুরাতন রেলস্টেশন এলাকায়, মেট্রোপলিটন পার্ক খোলা বাড়িয়া এবং ফাইভ স্টার হোটেল বিলপাবলা ও জাবুসায় নির্মিত হবে।

বিদ্যুৎকেন্দ্র, এয়ারপোর্ট, নতুন রেলপথ, পোর্টের কার্যক্রম বৃদ্ধি এরই প্রাথমিক ধাপ। এ ছাড়া বাকি প্রকল্পগুলো সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো ড্যাপ নির্ধারিত স্থানে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে উন্নয়ন কার্যক্রম যাতে নির্দেশনা অনুযায়ী হয় তার জন্য খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (কেডিএ) সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কিন্তু উন্নয়নের এ ছোঁয়া লাগতেই দেখা গেছে খুলনা শহরের প্রায় প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। দিনের বেশির ভাগ সময়ই যানজট লেগেই থাকে।

এ ব্যাপারে কেডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী সাবিরুল আলম বলেন, যানজট নিরসনে ড্যাপে রাস্তাঘাট বিশেষ করে সড়কের প্রবেশপথ প্রশস্ত করা পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে কেডিএ ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। কেডিএর নবাগত চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম মাহমুদ হাসান গত ৭ নভেম্বর খুলনা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ বিষয়ে ধারণা দেন। সভায় তিনি করপোরেশনসহ সবাইকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তিলোত্তমা নগরী গড়তে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরো বলেন, ড্যাপে নতুন প্রস্তাবের পাশাপাশি বিদ্যমান অবস্থার উন্নয়নের বিষয়েও দিকনির্দেশনা রয়েছে। নতুন প্রস্তাবসমূহ যাতে বিষদভাবে বাস্তবায়ন হয়, তার জন্য উন্নয়নকাজে নিয়োজিত প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরের জন্য কাজ করতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close