দেলদুয়ার (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

  ১২ নভেম্বর, ২০১৮

মানবতার ঘর!

অবিশ্বাস প্রতারণা অপ্রেম নিষ্ঠুরতা বিপরীতে প্রেম ভালোবাসা ও মমত্ববোধের জয় হয়েছে যুগে যুগে। ‘মানুষ মানুষের জন্য’ প্রতিপাদ্যটি বারবার প্রমাণিত হয়েছে। নানামুখী অপরাধের বেড়াজালের মাঝেও কিছু মানুষ আত্মিক প্রশান্তির ভালো কিছু করার চেষ্টা করে যান। এদের সহযোগিতা আর ভালোবাসায় অবহেলিত বঞ্চিত কিছু মানুষ এখনো ভালোভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। এমন স্বপ্নই বাস্তবে রূপ নিয়েছে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের কড়াইল-স্বল্পবড়টিয়া গ্রামের ৬২ বছর বয়সের বৃদ্ধা কুলসুমের জীবনে। ঘরহারা কুলসুমের ঠিকানা যখন ছিল খোলা আকাশের নিচে একটি পলিথিনের মোড়ানে খুপরি ঘরে, তখনই কিছু মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় গৃহহীন কুলসুমের প্রতি। এক সরকারি কর্মকর্তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে তারা কুলসুমের সচিত্র খবর জানতে পারেন। অবশেষে সবার সহযোগিতায় দোচালা টিনের একটি ঘর নির্মাণ করতে পেরেছেন কুলসুম। পলিথিনের ঝুপড়ি ছেড়ে কুলসুম ঠাঁই নিয়েছে টিনের নতুন ঘরটিতে। আর অনেকেই এ ঘরটিকে বলেছেন ‘মানবতার ঘর’। জানা যায়, গত বছর বিনাচিকিৎসায় মারা যায় কুলসুমের স্বামী। অভাবের তাড়নায় ঘরদোর বিক্রি করে সর্বশান্ত হয়ে পড়েন। সব হারিয়ে ভিটে বাড়িতে পলিথিনের তাঁবুতে আশ্রয় নেন। অর্ধেকটা শোবার অংশ, সেখানে দুটি চৌকি রাখা, আর অর্ধেকটাতে ছিল গরু রাখার জায়গা। গরুর সঙ্গে একই সমতলে ছিল বসবাস। পাশের চৌকিতে থাকতেন তার ৩৫ বছরের ছেলে মোশারফ আর ১০ বছর বয়সী নাতি আসলাম।

এরপর দেউলী ইউনিয়নের পরিবার-পরিকল্পনা পরিদর্শক মোশারফ বাপ্পির নজরে আসে কুলসুমের পলিথিনের ঝুপড়ি। তিনি ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেন। সরকারের বিনামূল্যের ঘর না পাওয়ায় অনেকেই প্রশাসনের সমালোচনা করেন। সাংবাদিকরা কুলসুমের মানবেতর জীবন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে স্থানীয় প্রশাসন এগিয়ে আসে কুলসুমের সহযোগিতায়।

দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদিরা আক্তার তাকে ৩০ হাজার টাকা দেন টিনের একটি ঘর নির্মাণের জন্য। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম ফেরদৌস আহমেদ কুলসুমের নাতি আসলামকে স্কুল ড্রেস কেনার টাকা দেন এবং উপবৃত্তি পাওয়ার নিশ্চয়তা দেন। অন্যদিকে দেউলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামরুল ইসলাম সাচ্চু পরিবারটিকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে সহায়তা করেন। আটিয়া ইউনিয়র পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মল্লিক মিয়া ৩ বান টিন কিনে দেন। মোশারফ বাপ্পি দেন ঘর তৈরির কাঠের জোগান। আর এভাবেই তৈরি হয় কুলসুমের দোচালা টিনের ঘর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close