নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ নভেম্বর, ২০১৮

ভিওআইপি নিয়ে অপারেটরদের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ বিটিআরসি

অপব্যবহার রোধে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন চালুর পরও কীভাবে মোবাইল ফোনের সিম অবৈধ ভিওআইপির ব্যবসায় যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অপারেটরদের কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিটিআরসি। মোবাইল সিমের বিক্রি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অপারেটরগুলোকে সতর্ক করেছে টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

অবৈধ ভিওআইপির বিরুদ্ধে অভিযান নিয়ে গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিটিআরসি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক এ কথা বলেন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ভিওআইপিতে ব্যবহার করা ৪২ হাজার ১৫০টি সিমসহ এক কোটি ২৩ লাখ টাকার সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে বিটিআরসি ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ সময় ২৪ জনকে গ্রেফতার বিষয়ে অবহতি করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘অপারেটরদের ব্লেইম দেওয়ার জন্য এ সংবাদ সম্মেলন না। একটি সিম কোথায় যায় তার দায়-দায়িত্ব অপারেটরদের। ডিস্ট্রিবিউটরদের নজরে রাখেন। যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তাহলে আইন প্রয়োগ করতে বাধ্য হব, এতে অপারেটরদের ক্ষতি হবে আপনারাই জানেন।

ডিস্ট্রিবিউটররা কাজ করছে, আপনারা বলছেন লাভ হচ্ছে না। লাভ না হলে কেন করছে? অপারেটরদের দায়ী করতে চাচ্ছি না, অপারেটররা সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে বলে আশা করি। বিটিআরসি যাওয়ার আগেই অপারেটররা ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করি।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১৪ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২৬টি আবাসিক স্থাপনায় অভিযান চালিয়ে রবি’র ১৬ হাজার ৮১২, টেলিটক’র ১৫ হাজার ৯৩৯, বাংলালিংক’র ছয় হাজার ১৭৬, গ্রামীণফোন’র তিন হাজার ২২৩টিসহ মোট ৪২ হাজার ১৫০টি সিম জব্দ করা হয়।

গত মাসেও অবৈধ ভিওআইপি কাজে টেলিটক’র ৫০৭৫টি, এয়ারটেল ও রবির ৩৮৯৭টি, গ্রামীণফোন’র ১৪১৪টি, বাংলালিংক’র ৪২৬টি, পিএসটিএন অপারেটর র‌্যাংকসটেল’র ১২০টি এবং ওয়াইম্যাক্স অপারেটর বাংলালায়ন’র ১৫টি সিম পাওয়ার তথ্য নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিল বিটিআরসি। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন শুরু হলেও অপারেটরদের কাছ থেকে কীভাবে এসব সিম ভিওআইপিতে যাচ্ছে, এমন প্রশ্নে গ্রামীণফোন’র প্রতিনিধি ইমতিয়াজ শফিক বলেন, ‘বিটিআরসির প্রক্রিয়া অনুযায়ী সিম বিক্রি করি, সেটার বাইরেও অবৈধ ভিওআইপি বন্ধে কাজ করা হয়। নিজেদের সেলফ রেগুলেশনও করা হয়। কোনো ব্যক্তি সিম নিয়ে কোন কাজে ব্যবহার করবে, তা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করে বা অবৈধভাবে ব্যবহার করে থাকে। তবে সব সময় নজরদারি করা হয়।’

টেলিটক’র প্রতিনিধি সাইফুর রহমান বলেন, ‘সিম সাবস্ক্রাইবারের কাছে গেলে তা তিনি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেন। টেলিটক’র সিমের দাম বা টকটাইম অনেক কম হওয়ায় ব্যবহার হতে পারে।’

রবি’র প্রতিনিধি আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিত কেমন করে এই অপরাধ কমানো যায় এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা যায়। সিম পর্যবেক্ষণ করার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এখন বিটিআরসির কাছে আছে। বাংলাদেশে ভিওআইপি বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে অজুহাত দেওয়া এখন অমূলক হবে। প্রতি ভিওআইপি কলে মোবাইল কোম্পানিগুলো প্রায় ৩০ পয়সা করে হারায়। আমাদের নিজেদের উপকারেই আমরা চাই দেশ থেকে ভিওআইপি নির্মূল করা হোক।’

বাংলালিংক’র প্রতিনিধি আবরার বলেন, ‘অবৈধ ভিওআইপি প্রতিরোধে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।’ পরে বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা কামাল (ইঞ্জিনিয়ারিং ও অপারেশন্স) অপারেটরদের উদ্দেশে বলেন, ‘কারো উত্তর সন্তোষজনক নয়। সিমের সঙ্গে ব্যবহারের কোনো নিয়ম নেই, বায়োমেট্রিকের পরে কীভাবে হলো, এটি আরো তদন্তের দাবি রাখে। অপারেটররা এ বিষয়ে সচেতন নয়, সিম নিয়ে কী হচ্ছে তাদের দায়-দায়িত্বের মধ্যে। রিটেইলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের বিষয়ে তারা কোনো তদন্ত করেনি। আগামীতে বিটিআরসির মামলার সঙ্গে মানি লন্ডারিং মামলাও হবে। তথ্য আছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যারা কাজ করে তাদের অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে টাকা উপার্জন করা সহজ কাজ। অপারেটরদের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। ভিওআইপির কারণে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এক লাখ সিম ১৬ ঘণ্টা করে অবৈধ ভিওআইপিতে ব্যবহার হলে বছরে ছয় থেকে সাত হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সরকারের প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়।’

আরেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ (স্পেকট্রাম) বলেন, ‘২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক কল ছিল ৭০ মিলিয়ন তা এখন ৩৫ মিলিয়নে নেমেছে। যে পরিমাণ ধরা পড়েছে আর যে পরিমাণ হচ্ছে তার পার্থক্য অনেক। সিমটা অপারেটরদের প্রডাক্ট, প্রডাক্ট মার্কেটে ডিস্ট্রিবিউটার চ্যানেলে যাচ্ছে, ডিস্ট্রিবিউটারের ওপর অপারেটরদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বিটিআরসি এ ধরনের অনেক সিমের তথ্য অপারেটরদের দিলেও তারা সে বিষয়ে কোনো তদন্ত করেনি। অপারেটরদের দেখতে হবে কীভাবে কোন পয়েন্ট থেকে এ সিমগুলো গেছে, তা রিপোর্ট করা প্রয়োজন।’

অবৈধ ভিওআইপির পেছনে কারা রয়েছে এমন প্রশ্নে বিটিআরসি প্রধান জহুরুল হক বলেন, ‘খুব প্রভাবশালী করে তা নয়, অন্তরালে তারা কাজ করে থাকে।’ দীর্ঘদিন ধরে অভিযান চললেও প্রবণতা কমছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রবণতা কমছে না, তা নয়। অভিযান চলছে বলে কমছে তবে এ ধরনের প্রযুক্তিরও প্রসার ঘটছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close