বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

  ০৯ নভেম্বর, ২০১৮

লেপ-তোষক তৈরির ধুম

রাজধানীতে এখনো লাগেনি শীতের ছোঁয়া। বৃক্ষহীন ইট পাথরের নগরে শীতের ছোঁয়া না পাওয়া গেলেও মফস্বলে ইতোমধ্যেই উঁকি মারতে শুরু করেছে উত্তরের হিমেল হাওয়া। যশোরের বেনাপোলে দিনে গরম পড়লেও রাতে ঠা-া। আর ভোরে শীতল সিগ্ধ বাতাস, সাত-সকালে ঘাস-পাতার ওপর জমে থাকা শিশিরকণা জানিয়ে দেয় শীতের আগমনী বার্তা। শীতের এই আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে বেনাপোলসহ শার্শা উপজেলায় লেপ-তোষক প্রস্তুতকারী ধুনকারদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। লেপ-তোষক প্রস্তুতকারী ধুনকাররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। একই সঙ্গে গ্রামের বিভিন্ন পরিবারে পড়ে গেছে কাঁথা সেলাইয়ের ধুম। যদিও এখনো জেকে বসেনি শীত। লেপ- তোষক প্রস্তুতকারী বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, মালিক-শ্রমিক, ধুনকাররা এখন তুলা ধোনায়, লেপ- তোষক তৈরির সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত। শীত মৌসুমের শুরুতেই ক্রেতারা দোকানে পছন্দমতো লেপ- তোষক তৈরির অর্ডার দিয়ে রেখেছেন। ধুনকার, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা যায়, ভালো মুনাফা এবং বেশি বিক্রির আশায় দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ক্রেতারাও লেপ-তোষখ তৈরির জন্য ভিড় করছেন। শহরসহ উপজেলার ছোট-বড় হাটবাজারগুলোয় জাজিম, বালিশ, লেপ, তোষক তৈরি ও বিক্রির কাজে শতাধিক ধুনকার ব্যবসায়ী নিয়োজিত রয়েছেন।

তবে এবার তুলার দাম অনেক বেশি। কালার তুলা প্রতিকেজি ৩৫ টাকা, মিশালী তুলা ২০ টাকা, সিম্পল তুলা ৮০ টাকা, শিমুল তুলা ৪৫০ টাকা ও সাদা তুলা ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, শীতের তীব্রতা বাড়লে লেপ-তোষক তৈরি ও বিক্রি হয় বেশি। বেনাপোলসহ শার্শা উপজেলায় ৫০টির বেশি লেপ-তোষকের দোকান রয়েছে। এসব দোকানের কারিগররা এখন খুবই কর্মব্যস্ত।

বেনাপোল বাজারের সীমান্ত বেডিং হাউসের মালিক আবদুস সালাম জানান, সময়মতো লেপ- তোষক ডেলিভারি দেওয়ার জন্য তারা এখন ব্যতিব্যস্ত। সারা বছরের মধ্যে এ শীত মৌসুমেই তারা কাজের বেশি অর্ডার পান। ফলে এ সময় তাদের কাজ বেশি করতে হয়। এক মৌসুমের আয় দিয়েই তাদের পুরো বছর চলতে হয়।

বেনাপোল বেডিং হাউসের মালিক সুলতান মুন্সি জানান, কাপড়ের মান বুঝে লেপ-তোষকের দাম নির্ধারণ করা হয়। তারা ৪-৫ হাত লেপের দাম পড়ছে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা। আর তোষক তৈরিতে দাম পড়ছে ১ হাজার থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর লেপ- তোষকের দাম একটু বেশি পড়বে। কেননা এ বছর কাপড় ও তুলা বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে।

লেপের কারিগর সিদ্দিক মিয়া জানান, শীত শুরু হতে না হতেই তাদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে। তারা ৪-৫ হাতের একটি লেপ ২ ঘণ্টায় তৈরি করে দিতে পারেন। লেপ-তোষকের দোকানের মালিকরা আরো জানান, শীত মৌসুমে প্রত্যেকটি দোকানে ২ শতাধিক লেপ-তোষক ও জাজিম কেনা- বেচা হয়।

বেনাপোল বাজারেও কথা হয় লেপ-তোষক কিনতে আসা নূরুল হকের সঙ্গে। তিনি জানান, তুলা, কাপড় ও কারিগরের মজুরি বেশি হওয়ায় দুইটার স্থলে একটা বানিয়ে নিলাম।

এদিকে, শীত মৌসুম শুরুতেই বিভিন্ন গ্রাম্য পরিবারের গৃহবধূরা কাঁথা সেলাই শুরু করে দিয়েছেন। অনেক পরিবারই রয়েছে যারা কাঁথা সেলাইয়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ছোট আঁচড়া গ্রামের মরিয়ম বেগম জানান, শহরের অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের কাছে কাঁথা সেলাই করে দেওয়ার জন্য কাপড় সরবরাহ করেন। নকশা-ভেদে এক একটি কাঁথা সেলাই করতে মজুরি বাবদ নেওয়া হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। সাংসারিক ঝক্কিঝামেলা থাকলেও তার মতো অনেক গৃহবধূ কাজের ফাঁকে এভাবে প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫টি কাঁথা সেলাই করে আয় করছেন। অপরদিকে, গরিব পরিবারের মহিলারা পুরান শাড়ি, লুঙ্গি দিয়ে কাঁথা তৈরি করে চলেছেন। তাদেরও লেপ- তোষকের স্বাদ থাকলেও অনেকের সাধ্য না থাকায় তারা রং-বেরঙের সুতা দিয়ে কাঁথা বুনে চলেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close