পাঠান সোহাগ

  ২৪ অক্টোবর, ২০১৮

আজ যাত্রা শুরু শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের

আজ যাত্রা করছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণে এটিই হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে ইনস্টিটিউটটির ভৌত কাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ শেষের দিকে। আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় অবস্থিত শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটটির চিফ কো-অর্ডিনেটর ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, উদ্বোধনের পরই প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করবে। এ প্রতিষ্ঠানে দগ্ধ রোগীরা যেমন উন্নত সেবা পাবেন, তেমনি চিকিৎসক-নার্সরাও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে মাত্র পাঁচটি শয্যার বার্ন ইউনিট এখন পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউটে রূপান্তর হতে যাচ্ছে।

জানা গেছে, ৬ লাখ ৬২ হাজার স্কয়ার ফুট আয়তনের এই ইনস্টিটিউটটি বার্ন এবং প্লাস্টিক সার্জারি এই দুই ইউনিটে বিভক্ত। ১৭ তলা ভবনে প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ৩৬ হাজার স্কয়ার ফুট। ১৬টি লিফট ও পাঁচটি সিঁড়ি থাকছে। ২৪টি ডাবল বেডের কেবিন এবং ২৮টি সিঙ্গেল বেডের কেবিন। শয্যা সংখ্যা ৫০০টি, একসঙ্গে ১০ জন রোগীর অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা থাকছে। আরো থাকছে ৫৪টি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, ৬০ শয্যাবিশিষ্ট হাইডেফিসিয়েন্সি ইউনিট, অত্যাধুনিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড। জরুরিভিত্তিতে হেলিকপ্টারে রোগী নিয়ে আসার জন্য ভবনের ছাদে হেলিপ্যাড সুবিধা থাকছে। সোলার প্যানেল ও বৃষ্টির পানি সঞ্চয়েরও ব্যবস্থা ও অত্যাধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট থাকবে। পার্কিংয়ে একসঙ্গে ১৮০টি গাড়ি রাখা যাবে। ঢামেক হাসপাতালের পুরাতন ভবনের সঙ্গে একটি ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে ইনস্টিটিউট ভবনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হবে।

মূল নকশায় যা থাকছে : বেসমেন্ট এক ও দুইয়ে থাকছে অত্যাধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট, গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, মর্গ ও লাশ গোসলের ব্যবস্থা এবং পাম্প রুম। বেসমেন্ট তিন-এ থাকছে গাড়ি পার্কিংসহ স্টোর রুম, পাম্প রুম এবং আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার।

প্রথম তলায় থাকছে রিসেপশন, জরুরি বিভাগ, কন্ট্রোল রুম, লবি, ক্যাফে ও ব্যাংক। এ ছাড়া থাকছে তথ্যকেন্দ্র, লন্ড্রি, মেডিকেল এয়ার এবং সাবস্টেশন। দ্বিতীয় তলায় থাকছে সিটিস্ক্যান, এমআরআই, ওয়েটিং রুম, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও কালেকশন রুম, জিমনেশিয়াম এবং বহির্বিভাগ। তৃতীয় তলায় থাকছে অধ্যাপকদের রুম, লাউঞ্জ, শ্রেণিকক্ষ, সভাকক্ষ, লবি, অফিস স্টাফ, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও পরিচালকদের কক্ষ। চতুর্থ তলায় থাকবে ২০ শয্যার ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ), ডায়ালাইসিস ও এআরস ডিপার্টমেন্ট, প্রশাসনিক কক্ষ, পরীক্ষা কক্ষ, গ্যালারি ও লাইব্রেরি। পঞ্চম তলায় রয়েছে অস্ত্রোপচার কক্ষ, স্কিন ব্যাংক, দুটি পোস্ট অপারেটিভ কক্ষ এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রুম। ষষ্ঠ তলায় থাকছে পুরুষদের ২২ শয্যার হাইডিপেনডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), ডায়ালাইসিস সেন্টার, বায়োমেড ইঞ্জিনিয়ার্স রুম, মেডিসিন স্টোর, সিএসএসডি ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রুম। সপ্তম তলায় রয়েছে ২২ শয্যার নারী হাইডিপেনডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), ডায়ালাইসিস সেন্টার, রেকর্ড রুম, ল্যাব, শ্রেণিকক্ষ, ৩১ শয্যার ওয়ার্ড ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রুম। অষ্টম তলায় থাকছে ৩১ শয্যার দুটি ওয়ার্ড ও বার্ন ট্যাংক, আইটি সার্ভার কক্ষ, ব্লাড ব্যাংক, শ্রেণিকক্ষ, ইনস্টিটিউশন ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রুম। নবম তলার পূর্ব পাশে থাকবে ৩১ শয্যার দুটি ওয়ার্ড ও বার্ন ট্যাংক, হাইপারবেরিক, শ্রেণিকক্ষ, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রুম ও ইনস্টিটিউশন রুম। ১০ম তলায় থাকছে ৩১ শয্যার দুটি ওয়ার্ড, বার্ন ট্যাংক, শ্রেণিকক্ষ, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও ইনস্টিটিউশন রুম। একাদশ তলায়ও রয়েছে ৩১ শয্যার দুটি ওয়ার্ড। এ ছাড়া রয়েছে বার্ন ট্যাংক, বেসিক সার্জিক্যাল স্কিল ল্যাব, মাইক্রো সার্জিক্যাল স্কিল ল্যাব, ক্যাডাভার, শ্রেণিকক্ষ ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রুম। দ্বাদশ তলায়ও রয়েছে ৩১ শয্যার দুটি ওয়ার্ড, বার্ন ট্যাংক, ফিজিওথেরাপি লেকচার রুম, শ্রেণিকক্ষ, শিশুদের খেলার জায়গা, ইনস্টিটিউশন ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রুম। ত্রয়োদশ এবং চতুর্দশ তলায় রয়েছে কেবিন, বার্ন ট্যাংক, নারী ও পুরষের পৃথক ফিজিওথেরাপি সেন্টার, ড্রাই স্পেস, ভিআইপি ও ভিভিআইপি কেবিন এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রুম। পঞ্চদশ তলায় রয়েছে ডক্টরস ক্যাফে, লাউঞ্জ, কিচেন, জিম, প্রেয়ার রুম, কমন লাউঞ্জ, স্টাফ লাউঞ্জ, জেনারেল ক্যাফে ও কিচেন। এ ছাড়া ছাদের পূর্ব পাশে থাকছে হেলিপ্যাড ও পানির ট্যাংক। মধ্যভাগে থাকবে ছাদ বাগান এবং পশ্চিম পাশে থাকছে কুলিং টাওয়ার, চিলার ও সোলার প্যানেল।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসিরউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে ইনস্টিটিউটটি নির্মাণ করেছে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১২ কোটি টাকা। কনস্ট্রাকশন সাইটে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা। মেডিকেল যন্ত্রপাতি কিনতে ৩১৪ কোটি টাকার মতো বাজেট ধরা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন পরও পুরোপুরি চালু হতে আরো ছয় মাস সময় লাগবে। একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার থাকবে। ইতোমধ্যে গ্রন্থাগারের জন্য ৬ কোটি টাকার বই কেনা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close