আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৩ অক্টোবর, ২০১৮

প্রথম কলাম

‘দেহঘড়ি’ : ১২ অজানা তথ্য

আপনি কি ‘সারকেডিয়ান রিদম’ সম্পর্কে জানেন? মানবদেহ থেকে শুরু করে পৃথিবীর সব জীবের ভেতরেই আছে এক অদৃশ্য ছন্দ। এটাকেই বৈজ্ঞানিকভাবে বলা হয় ‘সারকেডিয়ান রিদম’। ‘সারকেডিয়ান রিদম’ হলো একটি শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যা প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার চক্র পূরণ করে এবং জীবিত বস্তুর অস্তিত্বকে এক অদৃশ্য ছন্দে বেঁধে দেয়। একেই বলা হয় দেহঘড়ি। কিন্তু এটা সম্পর্কে আপনি কতটা জানেন? এটা আপনার জীবনকে কতটা প্রভাবিত করে, তা কি আপনি জানেন? গতকাল সোমবার প্রকাশিত বিবিসির খবর।

১. ‘সারকেডিয়ান রিদম’ : ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে প্রথম যখন থেকে সেল বা কোষ পাওয়া যায়, তখন থেকেই ছিল এই সারকেডিয়ান রিদম। এ ছাড়া এটাও মনে করা হয়, সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি দিয়ে দিনের বেলায় যে কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতো, রাতে সেগুলো নিজেদের সারিয়ে নিতো। ২. ‘দেহঘড়ি’ সবারই আছে : নিজের পাতা বিকশিত করার জন্য মিমোসা গাছের সূর্যের আলোর প্রয়োজন পড়ে না। ধারণা করা হয়, যেকোনো জীবিত সত্তা তা সেটির গঠন ও আকৃতি যাই হোক না কেন, যদি সূর্য থেকে নিজের শক্তি সংগ্রহ করে, তাহলে এটির একটি দেহ ঘড়ি থাকবেই। আলো ও অন্ধকারের সূত্র মেনে এই ঘড়ি কাজ করবে। গবেষণায় দেখা গেছে, ‘মিমোসা লিভস’ বা লজ্জাবতী পাতা অন্ধকারেও নিজেকে গুঁটিয়ে নেয় এবং মেলে ধরে। অর্থাৎ সূর্যঘড়ি অনুসরণ না করে বরং লজ্জাবতী তার দেহঘড়ি মেনেই চলে। ৩. দেহঘড়ি জীবকে দেয় সীমানার বোধ : দেহঘড়ি জীবকে নানা ধরনের সুবিধা দেয়। যেমন : দেহঘড়ির কারণে জীব টের পায় দিন-রাত ও শীত-গ্রীষ্মের ব্যবধান। আর সেই অনুযায়ী শরীর নিজের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলোও নেয়।

৪. গ্রিনিচ মান সময় ভুলে যান, আপনার শরীরের ভেতরেই আছে আপনার ঘড়ি। মস্তিষ্কের হাইপোথেলামাস অংশে এই মহাঘড়ির বাস। এটি অনেকটা ‘কনডাক্টর’ বা নেতাগোছের একটি বস্তু। দিনজুড়ে সমস্ত শরীরে যেসব সিগন্যাল বা নির্দেশাবলির আদান-প্রদান চলতে থাকে, এখান থেকেই তার সব নিয়ন্ত্রণ ঘটে। ৫. শরীরের প্রতিটি অঙ্গ এবং টিস্যুরও রয়েছে নিজস্ব ঘড়ি। এই ঘড়িগুলোকে একটি তাল ও লয়ে সমন্বয় করে রাখে হাইপোথেলামাসে থাকা সেই মহাঘড়ি। ৬. শরীরের প্রতিটি কোষের ভেতরে রয়েছে একেকটি স্বতন্ত্র ঘড়ি। ২৪ ঘণ্টায় যার চক্র পূরণ হয়। ৭. সারক্যানুয়াল রিদম : রাত যত দীর্ঘ হয়, ঘুম যত প্রলম্বিত হয়, মস্তিষ্ক তত মেলাটোন নিষ্কাষণ করে। এই হরমোনের কারণেই মানুষের ঘুম ও জেগে ওঠা নিয়ন্ত্রিত হয়।

৮. সূর্যালোক মানুষকে রাখে সুষম, সুস্থির। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন সূর্যালোকেও কিছু সময় থাকা দরকার। যদি কাউকে অন্ধকারে ফেলে রাখা হয়, তাহলে তার দেহঘড়ি ২৪ ঘণ্টা পিছিয়ে পড়বে। মানুষের চোখের ভেতর এক ধরনের সেন্সর রয়েছে। যেগুলো দিয়ে আলোকে শনাক্ত করা হয় এবং মস্তিষ্কের প্রয়োজনীয় অংশে সংকেত পাঠানো হয়। আর এভাবেই শরীরে ভেতরে গোপন দেহঘড়ি নিজের ছন্দ ধরে রাখে। ৯. ঘুমোতে যাওয়ার সময় কখন আপনি কি তা জানেন? ভোরে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর থেকেই শরীরে ঘুমের জন্য একটু-একটু করে চাপ তৈরি হতে থাকে। কিন্তু সামান্য চাপেই কেউ ঘুমে তলিয়ে যায় না। বরং দেহঘড়ি যখন বলে, এখনই ঘুমের উপযুক্ত সময়, তখনই শরীরে ঘুম আসে।

১০. শরীর কখনো-কখনো বেতাল লাগে। অনেক দূরের পথ পাড়ি দিলে এমন হয়। একদিকে ঝিমুনি-ঝিমুনি লাগে, অন্যদিকে ঘুমও ঠিক আসে না। সাধারণত শরীরের ভেতরে থাকা মহাঘড়িটি যখন একটা সময় থাকে কিন্তু শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন পাকস্থলী, মস্তিষ্ক বা এ রকম অন্য অঙ্গগুলো যখন ভিন্ন-ভিন্ন ছন্দে থাকে, তখনই এমনটা হয়। একেকটি টাইম জোন পার হওয়ার পর শরীরের মহাঘড়িটি তার নিজের ছন্দে ফিরে আসতে সাধারণত ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে। ১১. আপনার শরীরের ঘড়ি অ্যালার্ম দিচ্ছে আপনার বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন, কিন্তু আপনার এখনো ডিউটি করতে হবে। যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিফটের কাজ করে, তাদের দেহঘড়িটি অনেক সময় এলোমেলো হয়ে যায়। এই দশাটিকে বলা হয় ‘সোশ্যাল জেট লেগ’ বা সামাজিক পরিস্থিতির কারণে তৈরি হওয়া শারীরিক বিড়ম্বনা। ১২. বয়োসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের শরীরে হরমোনের বন্যা বয়ে যায়। এর ফলে, এই বয়সীদের দেহঘড়ি ঘণ্টা দুয়েক পেছানো থাকে। তাই, অতি সাতসকালে তাদের ঘুম থেকে ডেকে না তুলে আরো কিছু সময় ঘুমাতে দেওয়া দরকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close