আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২২ অক্টোবর, ২০১৮

কে ধারণ করেছিল খাশোগির অডিও অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার

তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে খুন হওয়া জামাল খাশোগির মৃত্যুকালে ধারণ করা এক অডিও নিয়ে রহস্যের জট এখনো খোলেনি। এদিকে, মৃত্যুর পর খাশোগির অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার ছেপেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। এ ছাড়া হত্যার ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া সৌদি গোয়েন্দা দফতরের উপপ্রধান আহমেদ আল আসিরি’র পরিচয় নিয়ে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে খুন হওয়া জামাল খাশোগির মৃত্যুকালে ধারণ করা এক অডিও ফাইল পুরো ঘটনার কেন্দ্রে অবস্থান করছে। বলা হচ্ছে, সৌদি শাসনব্যবস্থার এই সমালোচক কনস্যুলেটে ঢোকার আগেই তার হাতে অ্যাপলওয়াচে অডিও রেকর্ড অপশন অন করে রেখেছিলেন আর সেটি ‘পেয়ার’ করা বা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত অবস্থায় ছিল তার আইফোনের সঙ্গে। আইফোনটি তিনি রেখেছিলেন বান্ধবীর কাছে এবং বান্ধবী তখন অবস্থান করছিলেন কনস্যুলেটের বাইরে। অন্তত তুর্কি মিডিয়া বিষয়টিকে এভাবেই ব্যাখ্যা করেছে।

পুরো এই গল্পের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিবিসির প্রযুক্তি সাংবাদিক রেরি চেলান-জোন্স। এই সাংবাদিকের প্রশ্নÑ আসলেই কী ঘটনা এমনটা ছিল? চেলান-জোন্স ব্লুটুথে ফাইল পাঠানোর সম্ভাবনাও নাকচ করে দেন। পরের সম্ভাবনা হলো যদি ওই অ্যাপলওয়াচে নিজস্ব সিমকার্ড থাকে এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক দিয়ে অডিও ফাইল পাঠানো হয়। ওই প্রতিবেদনে সেটাও নাকচ করে দেওয়া হয়। বলা হয়েছে, ‘এটা ধরে নেওয়া সঙ্গত হবে যে, তুরস্কে অবস্থানরত কূটনীতিকদের ওপর নজরদারির জন্য দেশটির নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর হাতে আরো নানা উপায় রয়েছে। অ্যাপলওয়াচ কেবল মাছ ঢাকার জন্য স্রেফ শাকের আঁটি।’

খাশোগির অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার

‘আমাদের নেতারা ভাবেন, তারাই সব জানেন। আর আমরা শুধু প্রতিবন্ধকতা তৈরি করি।’ মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছিলেন সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। কয়েক মাস আগে ওয়াশিংটন পোস্টের কার্যালয়ে সংবাদপত্রটির বৈশ্বিক মতামতবিষয়ক সম্পাদক (গ্লোবাল ওপেনিয়ন এডিটর) কারেন আতিয়াহর সঙ্গে একটি ধারণকৃত আলোচনায় অংশ নেন সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। ওই আলোচনায় জামাল খাশোগির সাক্ষাৎকারটি গত শনিবার প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

আলোচনায় খাশোগি বলেন, ‘সৌদি আরব দুই কোটি জনসংখ্যার দেশ। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ, ৩০ বছরের কম বয়সী তারা। মোহাম্মদ বিন সালমান সব বিষয়ই তুলে আনছেন-অর্থনীতি, ধর্ম-সৌদি আরব স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুতগতির ওপর রয়েছে।’

সাংবাদিক জেসন রেজাইয়ান বলেন, খাশোগি সৌদি আর ইরান নিয়ে লিখতেন। খাশোগি বলেছিলেন, ‘এমনকি কিছু মানুষ যারা আমার লেখার সঙ্গে অমত প্রকাশ করেন না, তারাও আমাকে বলেন, এটা বলার জন্য এখন সঠিক সময় নয়। আমরা গণতন্ত্র থেকে অনেক দূরে। আমেরিকা, ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের গণতন্ত্রে, নেতারা নত হন। এটা একজন নেতাকে সড়কে চলা একজন ক্ষুদ্র মানুষের প্রতিও দায়বদ্ধ করে। আমাদের নেতারা? না। আমাদের নেতারা নিজেদের এমন ভাবেন যে, তারাই সব জানেন এবং আমি ও জেসনের মতো মানুষ শুধু তাদের সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করি।’

খাশোগিকে নিয়ে এক টুইট পোস্টে সম্পাদক কারেন আতিয়াহ বলেন, ‘তারা হয়তো আমার বন্ধুকে নীরব করে দিতে পেরেছে, কিন্তু তার শব্দকে তারা হত্যা করতে পারবে না...।’

চাকরিচ্যুত গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা জেনারেল আসিরি আসলে কে?

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার ঘটনায় সৌদি গোয়েন্দা দফতরের উপপ্রধান আহমেদ আল আসিরিসহ কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হয়। এদের মধ্যে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ট সহযোগী সৌদ আল কাহ্তানি। কিন্তু কে এই সৌদি গোয়েন্দা দফতরের উপপ্রধান আহমেদ আল আসিরি? এ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।

ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মেজর জেনারেল আহমাদ আল আসিরি যুবরাজের ঘনিষ্টদের মধ্যে অন্যতম। ২০১৫ সালের মার্চে ইয়েমেনর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আলোচনায় আসেন জেনারেল আসিরি। এ সময় সৌদি আরবের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে দেখা যায় তাকে। সে সময় বর্তমান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ছিলেন সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী। যা জেনারেল আসিরির উত্থানে ভূমিকা রাখে। আরবি, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় দক্ষ ছিলেন জেনারেল আসিরি।

২০১৭ সালের মার্চে লন্ডনে এক সফরের সময় বিক্ষোভকারীরা তার বক্তব্যের সময় ডিম ছুড়ে মারলে নিজের মেজাজ হারিয়ে বসেন আসিরি। এর কিছুদিন পরেই সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘জেনারেল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেট’র সহ-প্রধান নিযুক্ত হন। যুক্তরাষ্ট্রের স্যান্ডহার্স্ট ও ওয়েস্ট পয়েন্ট এবং ফ্রান্সের সেন্ট সাইরে’র মতো মর্যাদাপূর্ণ পশ্চিমা মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে আসিরি’র। জামাল খাশোগি হত্যাকান্ডে তার ভূমিকা নিয়ে রহস্য রয়ে গেছে।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, খাশোগিকে সৌদি আরবে জিজ্ঞাসাবদের উদ্দেশে আটক করার জন্য যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মৌখিক অনুমতি পান আসিরি।

গত শনিবার আসিরি’র চাকরিচ্যুতির খবর প্রকাশের আগে নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, খাশোগির অন্তর্ধান ও হত্যার ঘটনায় মোহাম্মদ বিন সালমানের ওপর থেকে অভিযোগের তীর সরাতে জেনারেল আসিরিকে দোষারোপ করার পরিকল্পনা করছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close