মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট

  ২২ অক্টোবর, ২০১৮

প্রার্থী জটে আ. লীগ-বিএনপি জাতীয় পার্টিতেও তিন প্রার্থী

প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে নির্বাচনের আগে মনোনয়ন দৌড়ে রমরমা সিলেট-৩ আসন। প্রচার-প্রচারণা আর দলীয় ফিরিস্তি নিয়ে গণসংযোগ করছেন তারা। ফলে প্রার্থী জটে পড়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। প্রতিটি দল থেকেই প্রায় অর্ধডজন দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। জাতীয় পার্টিতেও মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক। এতে বহুদলীয় নির্বাচনের আগেই বহু প্রার্থীর মনোনয়ন লড়াইয়ের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে এলাকা।

এ বছর সিলেট-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের ৬ নেতা। অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন ৫ জন। আর জাতীয় পার্টিতে ৩ জন। একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় প্রার্থী বাছাইয়ে হিমশিম খেতে হবে দুই দলকেই। গত ১২ সেপ্টেম্বর সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা। এর মধ্য সিলেট-৩ আসনে কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি তারা।

দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের মাহমুদ উস সামাদ

চৌধুরী কয়েস। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে। দলে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় এবার তাকে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। ভোটের আগে দলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে তাকে। এবার নতুন মুখের মধ্যে আওয়ামী লীগে এক প্রবাসী ও দুইজন সাবেক ছাত্রনেতা। বিএনপিতেও মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন দুই প্রবাসী ও এক যুবনেতা। তাদের প্রত্যেকেই নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, এ আসনে মোট ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩০৯ ভোটারের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২৮ হাজার ৬১৮ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৯১ জন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত মাহমুদ উস সামাদ কয়েস নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরীকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে তিনি পেয়েছিলেন ৮৩ হজার ৯৮৪ ভোট। আর শফি আহমদ চৌধুরী পেয়েছিলেন ৪৭ হাজার ৭০ ভোট।

এ আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুর রকিব মন্টু ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শাহ মুজিবুর রহমান জকন।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় আছেন এই আসনের সাবেক এমপি বিএনপি নেতা শফি আহমদ চৌধুরী, দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ হক, কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক।

জাতীয় পার্টি থেকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক, জেলার সদস্য সচিব উছমান আলী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তোফায়েল আহমদ এ আসনে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করতে চান। এছাড়া খেলাফত মজলিসের সিলেট জেলার সহ-সাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসাইন এবং ইসলামী আন্দেলনের এম এ মতিন বাদশা প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।

দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জনগণের জন্য কাজ করছি। এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছি। আবারো মানুষের সেবা করতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চাই। আশা করি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবারো আমাকে মনোনয়ন দেবেন।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, তৃণমূল রাজনীতি, জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করে আজ জাতীয় রাজনীতিতে আছি। এলাকার জনগণ চাচ্ছেন তাই মনোনয়ন চাইব। তবে সিদ্ধান্ত নেত্রীর। তিনি যাকে ভালো মনে করবেন তাকেই মনোনয়ন দেবেন।

‘মানুষ পরিবর্তন চায়’ দাবি করে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থী হতে মাঠে কাজ করছি। মানুষ পরিবর্তন চায়। নেত্রীর কাছে আমি মনোনয়ন চাইব।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী বলেন, ১৯৮৬ সাল থেকে নির্বাচন করে আসছি। সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে মানুষ আমার উন্নয়ন কাজ দেখেছে। আশা করছি দল নির্বাচনে গেলে আমাকে মনোনয়ন দেবে।’

ব্যারিস্টার আবদুস সালামও মনে করেন দল তার কাজের মূল্যায়ন করবে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছি। আশা করছি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ হক বলেন, এই আসনে আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি। সে সুবাদে এখানকার মাটি ও মানুষের সঙ্গে আমার আলাদা টান রয়েছে। এলাকার লোকজন চাচ্ছে আমি নির্বাচন করি। তাই আমি এবার মনোনয়ন চাইব।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান বলেন, একক বা মহাজোটের সঙ্গে জাতীয় পার্টি নির্বাচন করলেও পার্টির চেয়ারম্যান আমার নাম প্রস্তাব করেছেন। ফলে আমি মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী।

সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব উছমান আলী বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পার্টির চেয়ারম্যান আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। পরে জোটের স্বার্থে আসনটি ছেড়ে দেই। এবার দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আশাবাদী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close