কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২১ অক্টোবর, ২০১৮

আওয়ামী লীগে ফজলে করিম বিএনপিতে সাকা পরিবার!

চট্টগ্রামের রাউজান (চট্টগ্রাম-৬) আসনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর হাতে। তিনি ২০০১ সালের পর থেকে ওই আসনে পর পর চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে গত কয়েক দশকের বেশি সময় ধরে রাউজানে বিএনপির রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পরিবারের হাতে। মানবতাবিরোধী অপরাধে তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পরও তার পরিবর্তন হয়নি। আগামী সংসদ নির্বাচনেও এই পরিবার থেকে বিএনপি প্রার্থী বেছে নিতে পারে। সাকা পরিবারের বাইরে আলোচনায় আছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার।

চট্টগ্রামের রাউজান সংসদীয় আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮০ হাজার ৪৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪২ হাজার ৬৮৬ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬৭ জন। এ উপজেলায় রয়েছে ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। এক সময় রাউজান ‘সন্ত্রাসের জনপদ’ ছিল। স্বাধীনতার পর থেকে নানা নেতিবাচক কাজের জন্য একের পর এক আলোচনায় এসেছিল রাউজান। তবে বর্তমানে রাউজানের নতুন পরিচয় ‘পিংক সিটি’। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অবকাঠামোগতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে রাউজানে।

উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রায় প্রতিদিনই রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় দলীয় সভা-সমাবেশসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে আগাম ভোট চেয়ে আসছেন ফজলে করিম চৌধুরী। রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে চলছে উঠান বৈঠক। এসব কর্মসূচিতে মূলত আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী ফজলে করিম চৌধুরীর জন্য ভোট চাওয়া হচ্ছে। তবে তাকে মনোনয়নযুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে চান যুবলীগের চেয়ারম্যান

ওমর ফারুক চৌধুরী ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। বিভিন্ন সময়ে রাউজানে শোডাউন করে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে আসছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। অন্যদিকে বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্যাতনের শিকার ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রোটনও চান রাউজান আসনে নির্বাচন করতে। তবে তৃণমূলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণসহ নানা কারণে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী।

জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া রাউজানকে শান্তির জনপদে পরিণত করেছি আমি। আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে রাউজানকে পরিণত করেছি। রাউজানে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করায় এখানে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হয়েছে। দল আমাকে আবারো মনোনয়ন দেবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

এদিকে আগামী নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন সেটা এখনো অনিশ্চিত। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকে রাউজানে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি। ২০০১ সাল থেকে এই আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। রাজনীতিতে সাকা পরিবারের ঘোরবিরোধী তিনি। যদিও তিনি সাকার চাচাতো ভাই। সাকা চৌধুরীর ভাই ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাকা চৌধুরীর ছেলে ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকারও চট্টগ্রাম-৬ আসনে মনোনয়ন চান। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি রাউজান থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তিনি রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে নেতাকর্মীদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

সর্বশেষ যে তিনটি নির্বাচনে (১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮) বিএনপি অংশ নিয়েছিল তার প্রত্যেকটিতেই রাউজানে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তবে প্রথমবার ছাড়া বাকি দুই বার পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। তবে স্বল্প ভোটে এ পরাজয় হওয়ায় ও দলের জন্য ত্যাগ থাকায় আগামীতে গিয়াস কাদেরকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হতে পারে বলে নেতাকর্মীদের ধারণা। তৃণমূল বিএনপির একটি বড় অংশ সাকা পরিবারের পক্ষে। অন্য অংশটি নিয়ন্ত্রণ করেন গোলাম আকবর খোন্দকার। তার অনুসারীরা বলছেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরেই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। তাই আগামী নির্বাচনে এ আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য গোলাম আকবর খোন্দকারের বিকল্প নেই।

রাউজান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমেদ বলেন, বিএনপি নির্বাচনে গেলে রাউজানে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীই হবেন দলের একমাত্র প্রার্থী। মাঠের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বর্তমানে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যদের সঙ্গে মাঠের কর্মীদের তেমন যোগাযোগ নেই।

রাউজান পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি সেকান্দর চৌধুরী বলেন, আমাদের গোলাম আকবর খোন্দকার জানিয়েছেন, তিনি এই আসনে নির্বাচন করতে চান। তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছি। উনি পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ এবং রাউজানের মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা আছে।

এদিকে ২০০১ সাল থেকে রাউজানে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকা- নেই বললেই চলে। দলটির উভয় অংশের নেতাকর্মীরা এখানে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা। বিএনপি-জামায়াতের কেউ কেউ রাউজান ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে এসে বসবাস করছে। আর কেউ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে আছে কারাগারে। আবার কেউ কেউ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সখ্য রেখে চলছেন। তবে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে দলটির নেতাকর্মীরা মাঠে নামবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি হাসান মো. জসিম বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে রাউজান উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সাংগঠনিক কর্মকা- সক্রিয় করে তোলার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close