আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২০ অক্টোবর, ২০১৮

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যু ও গান

চলে গেলেন বাংলাদেশের রক সংগীতের কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চু। গত বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যুবরণ করেন এই গায়ক, গীতিকার সুরকার তথা রকস্টার। তার মৃত্যুতে বাংলা সংগীত জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দেশের বাইরেও আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর খবর গুরুত্বসহ প্রচার করেছে আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম। এগুলোতে উঠে এসেছে বাংলা রক গানে তার অর্জন ও কৃতিত্বের কথা।

জার্মানির রাষ্ট্রীয় মিডিয়া কোম্পানি ডয়েচে ভেলের বাংলা সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে ‘আইয়ুব বাচ্চু একটা সবুজ বাংলা গান’ শীর্ষক প্রতিবেদন। এতে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। আশির দশক থেকে শুরু করে প্রায় তিন যুগ ধরে অসংখ্য কিশোর ও তরুণের স্মৃতি বিনির্মাণে জড়িয়ে আছে এই কিংবদন্তির নাম। উপমহাদেশের সেরা গিটারিস্টও ছিলেন তিনি। দেশ-বিদেশে গিটারিস্ট হিসেবে অনেক কদর ছিল তার। তরুণ প্রজন্মের কাছে কয়েক যুগ ধরে জনপ্রিয়তার তালিকায় শীর্ষে ছিলেন তিনি। মুখে মুখে ফিরেছে তার গান। ডয়েচে ভেলেতে প্রকাশিত ‘আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয়তা ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি কাঁটাতারের বেড়া’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই রুপালি গিটার ফেলে

একদিন চলে যাব দূরে বহুদূরে, সেদিন চোখে অশ্রু তুমি রেখো গোপন করে’ গানটি যেন আজ তার এপিটাফ। “ভক্তদের কাঁদিয়ে ‘এবি’ উড়াল দিলেন আকাশে” শিরোনামে আইয়ুব বাচ্চুর জীবনের বিভিন্ন স্থিরচিত্র নিয়ে একটি ফটো স্টোরি প্রকাশ করেছে ডয়েচে ভেলে।

যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসির বাংলা সংস্করণ তাদের শিরোনামে লিখেছে ‘বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু মারা গেছেন : শনিবার চট্টগ্রামে দাফন’। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইয়ুব বাচ্চু একইসঙ্গে গায়ক ও লিড গিটারিস্ট হিসেবে বহু মানুষের প্রিয় শিল্পী। বাংলাদেশে ব্যান্ডসংগীত জনপ্রিয় করে তুলতে যাদের ভূমিকা রয়েছে, আইয়ুব বাচ্চু তাদের একজন। ‘বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে সামাজিক মাধ্যমে সংগীতশিল্পীদের প্রতিক্রিয়া’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘বাংলাদেশকে কী দিয়ে গেলেন ব্যান্ড গানের আইয়ুব বাচ্চু?’ শিরোনামে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন সাজানো হয়েছে কয়েকজন সংগীতশিল্পীর মন্তব্য নিয়ে। তারা হলেন ফেরদৌস ওয়াহিদ, সামিনা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের অধ্যাপক লীনা তাপসী, মিউজিক কোম্পানি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনস অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক এস কে সাহেদ আলী।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ায় ছেপেছে, ‘চলে গেলেন বাংলাদেশি রক সংগীতের কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চু।’ এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপ্লবী রক গায়ক হিসেবে বাংলা গানে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন তিনি। আধুনিক, ধ্রুপদী ও লোকজ আঙ্গিকের গানে নতুন মাত্রা এনেছিলেন এই গুণী শিল্পী। টাইমস অব ইন্ডিয়ার আরেক প্রতিবেদনের শিরোনাম, ‘আইয়ুব বাচ্চুর প্রয়াণে শোকাহত বাংলাদেশ ও ভারত।’ এতে কলকাতার সংগীতশিল্পী অনুপম রায়, সাহানা বাজপেয়ী, বিক্রম ঘোষের অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়, প্রবুদ্ধ ব্যানার্জি শোকগাথা তুলে ধরা হয়েছে।

কলকাতার শীর্ষ বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজার লিখেছে ‘রুপালি গিটার ছেড়ে চলে গেলেন আইয়ুব বাচ্চু।’ তারা উল্লেখ করেছে, ‘সবার কাছে আইয়ুব বাচ্চুর পরিচয় ছিল গিটারের জাদুকর।’

আনন্দবাজারের মতোই এবেলার শিরোনাম ‘রুপালি গিটার রেখে চলে গেলেন আইয়ুব বাচ্চু।’ এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বাংলা গান আর আইয়ুব বাচ্চু সমার্থক ছিল। তার মৃত্যুতে পদ্মাপাড়ে বাংলা গানের স্বর্ণাক্ষরে লেখা এক অধ্যায় শেষ হলো। বাংলা গানের খোলনলচে বদলে ফেলে, তাকে পশ্চিমী আঙ্গিকের সঙ্গে মিলিয়ে নতুনভাবে পরিবেশন করে তিনি জন্ম দিয়েছিলেন নতুন এক সংগীতবীক্ষার। নব্বইয়ের দশকে দুই বাংলায় গিটার হাতে নতুন গানের সন্ধানে যেতে চেয়েছিল যে ছেলেমেয়েরা, তাদের আইকন ছিলেন বাচ্চু। তার অ্যালবামগুলো ছিল দুই বাংলার নতুন প্রজন্মের প্রিয় সম্পদ।

ভারতের ইংরেজি নিউজ চ্যানেল টাইমস নাউ-এর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে, ৫৬ বছর বয়সে চলে গেলেন বাংলাদেশি রক সেনসেশন আইয়ুব বাচ্চু। তাদের মন্তব্য, বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপমহাদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা রয়েছে আইয়ুব বাচ্চুর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য ভক্ত তার আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।

ওপার বাংলার আরেক সংবাদমাধ্যম আজকাল শিরোনাম করেছে ‘আইয়ুব বাচ্চু প্রয়াত’। কাব্যিক ঢঙে সাজানো এই প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য অংশ হলো বিলাসী বিষাদ বিধুরতা বারবার উঠে এসেছে আইয়ুব বাচ্চুর লেখায়। পরে সেসব কবিতায় সুর সংযোজনের সঙ্গে সুরঝঙ্কার তুলেছিল এই শিল্পীর রুপালি গিটারের তার, তখন কষ্ট হয়ে উঠেছে সর্বজনীন! হঠাৎ সেসব বিকেলের গল্পে দেখা দিল যতিচিহ্ন, জীবনের সব কষ্টে ইতি টেনে মৃত্যুর পরপারে চলে গেলেন আইয়ুব বাচ্চু। পরিসংখ্যান বলে, তার একক অ্যালবামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ‘কষ্ট’। ভারতীয় উপমহাদেশে এত সাফল্য ও আদর আর কোনো একক গানের অ্যালবাম পায়নি!

আজকাল পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বাচ্চুভাই বলেছিলেন, তুই-ই কলকাতায় বাংলা রক আনবি’ শিরোনামের প্রতিবেদন মূলত কলকাতার ফসিলস ব্যান্ডের রুপম ইসলামের স্মৃতিচারণা। তার কথায়, ‘একজন কিংবদন্তি হয়েও যেভাবে বাচ্চু ভাই নতুন সংগীতশিল্পীদের সঙ্গে মিশতে পারতেন ও ভবিষ্যৎটা দেখতে পেতেন, সেটা তার সাংগীতিক দূরদৃষ্টিরই পরিচয় দেয়। ‘সংগীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র আইয়ুব বাচ্চু চলে গেলেন’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আজকাল। এতে বলা হয়, “শিল্পী তার কথা মতো চলে গেছেন। রুপালি গিটার তার হাতে আর কোনোদিন খেলা করবে না। ভক্তদের অন্তরে আঘাত করবে না ‘ছয় তারের’ ঝংকার। রুপালি গিটারে হাত পড়বে না জাদুকরের।”

‘যার জন্য গাওয়া যেতেই পারে, তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বছর পাঁচেক আগের একটি কনসার্টের ঘটনা জানানো হয়েছে। এরপর প্রতিবেদক উল্লেখ করেছেন, ‘শুধু শিল্পী হিসেবে নয়, গিটার বিশেষজ্ঞ হিসেবেও বলিষ্ঠ চেহারার ওই গিটারিস্টের গ্রহণযোগ্যতা ছিল। আইয়ুব বাচ্চু নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান! আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা, ইয়ুথ আইকন, কিংবদন্তি, গিটার গুরু ও পাশাপাশি রক মিউজিকে অতলান্ত গভীরতা তো ছিলই। সঙ্গে ছিল মাটির মানুষ হিসেবে সুনাম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close