চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১৮ অক্টোবর, ২০১৮

চাঁপাইনবাবগঞ্জে হত্যা-রহস্য উদ্ঘাটন

ভাবীর সঙ্গে পরকীয়ার বলী হলেন সহোদর

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের বালুগ্রাম মোড়ের তাইফুর রহমানের ছেলে ইউসুফের মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাতে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর ‘স্বাভাবিক’ মৃত্যু হয়েছে বলে শনিবার সকালে তাড়াতাড়ি করে দাফন করা হয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সন্দেহের দানা বাঁধতে থাকে। গত সোমবার স্থানীয় একটি পত্রিকায় ‘বালুগ্রামে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। খবর প্রকাশের পর রাতেই অভিযুক্ত স্ত্রী মদিনা ও ছোট ভাই ইউনুসকে আটক করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

জানা যায়, নিহত ইউসুফ দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে বিদেশে কর্মরত। তার ভাই ইউনুসও প্রায় আট বছর ধরে বিদেশে কাজ করতেন। ইউসুফের স্ত্রী মদিনা দেবরের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে তোলে। দেবর ইউনুসের দুইবার বিয়ে হলেও নানা কৌশলে ডিভোর্স করিয়েছেন অভিযুক্ত মদিনা। দুই ভাইয়ের আয় করা নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও সম্পদ সবই রয়েছে মদিনার নামে।

জবানবন্দিতে ঘাতক দেবর-ভাবী যা বলেন, মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ইদ্রিশ আলী জানান, ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে দেবর-ভাবী পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার রাত ৮টায় অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুুস সালাম এ জবানবন্দি গ্রহণ করেন। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তারা জানায়, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত ছিলেন। আগস্ট মাসের শুরুতে ইউনুস দুবাই থেকে দেশে ফেরার পর এ হত্যার পরিকল্পনা করেন দেবর-ভাবী। অবৈধ মেলামেশার উদ্দেশে বাড়ির দুই ঘরের মাঝাড়ের ওয়ালের ইট খুলে গোপন পথ করে রেখেছেন তারা। সেই পথ দিয়েই দেবর ও ভাবী একে অন্যের ঘরে যাতায়াত করতেন এবং শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন।

১২ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টার দিকে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ঘাতক ইউনুস গোপন পথ দিয়ে ভাইয়ের ঘরে প্রবেশ করেন। এ সময় ইউসুফের মুখে বালিশ চেপে ধরে ছোট ভাই ইউনুস আর ভাবী মদিনা তার স্বামীর দুই পা চেপে ধরে হত্যা করেন। মৃত্যু শতভাগ নিশ্চিত করতে গলায় গামছা বেঁধে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন তারা। প্রায় ৩০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখার পর মৃত্যু নিশ্চিত হলে তাকে বিছানার নির্ধারিত জায়গায় শুইয়ে দেওয়া হয়। এরপর দেবর ইউনুস গোপন পথ দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। রাত ৩টা পর্যন্ত লাশের পাশেই শুয়ে থাকেন ঘাতক স্ত্রী মদিনা। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ৩টার দিকে মদিনা চিৎকার চেঁচামেচির অভিনয় করে লোক জানাজানি করেন। গলায় দাগ বোঝা যাচ্ছিল তাই তাড়াতাড়ি করে লাশ দাফন করা হয়েছে বলেও জানান ঘাতক স্ত্রী মদিনা।

দেবর ইউনুস তার দেওয়া জবানবন্দিতে জানান, এর আগেও ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্য ঘুমের ওষুধ কিনে দেন ভাবীকে। এতে মৃত্যু না হওয়ায় তাকে পরিকল্পিতভাবে বালিশ চাপা দিয়ে পরে আড়ার সঙ্গে গামছা দিয়ে ঝুলিয়ে ইউসুফের মৃত্যু নিশ্চিত করেন দেবর-ভাবী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close