নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ অক্টোবর, ২০১৮

ষষ্ঠীপূজায় আজ শুরু শারদীয় দুর্গোৎসব

ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা। আগামী শুক্রবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের। গতকাল রোববার দেবীর বোধন হয়। শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

এদিকে, দুর্গা পূজায় রাজধানীতে নিñিদ্র ও সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান মিয়া। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে মন্ডপে কোনো ধরনের ব্যাগ নিয়ে ঢোকা নিষিদ্ধ করার কথা জানিয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের পুলিশ কমিশনার বলেন, ভক্তদের ও দর্শনার্থীদের কোনো ধরনের পোটলা, ব্যাগ, ব্যাকপ্যাক, দাহ্য পদার্থ, ছুরি, চাকু, কাঁচি বা এ জাতীয় কোনো বস্তু নিয়ে আসবেন না। এসব বহন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

পূজায় পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট থাকবে। প্রত্যেক মন্ডপে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবে। তারা তল্লাশি করবে এবং এ ধরনের ব্যাগ, পোটলা নিয়ে কাউকে পূজামন্ডপে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

হিন্দু শাস্ত্র মতে, দুর্গা শব্দের অর্থ হলো ব্যূহ বা আবদ্ধ স্থান। যা কিছু দুঃখ কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন বাধাবিঘœ, ভয় দুঃখ, শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামে অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।

হিন্দু পূরাণ মতে, দুর্গা পূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবিকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্ত্বেও শরতকালে দুর্গা পূজা প্রচলিত হয়ে যায়।

ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের মৃদুল মহারাজ বলেন, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোটক (ঘোড়ায়) চড়ে কৈলাশ থেকে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) আসবেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ শোক হানাহানি-মারামারি বাড়বে। অন্যদিকে কৈলাশে (স্বর্গে) বিদায় নেবেন দোলায় চড়ে। যার ফলে জগতে মড়ক ব্যাধি এবং প্রাণহানির মতো ঘটনা বাড়বে।

রামকৃষ্ণ মিশনের নিঘন্টে বলা হয়েছে, আজ সোমবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হবে। এদিন, সকাল থেকে চন্ডিপাঠে মুখর থাকবে মন্ডপ এলাকা।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন কাল মঙ্গলবার মহাসপ্তমীর পূজা হবে সকাল ৬টায়। আর বুধবার মহাঅষ্টমীর পূজা হবে সকাল ৯টায় এবং বেলা ১১টায় হবে কুমারি পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে দুপুর ১২টা ৫৬ মিনিটে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পরদিন শুক্রবার সকাল ৭টায় পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টায়। পরে প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের।

বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, এবার সারা দেশে ৩১ হাজার ২৭২টি মন্ডপে পূজা হবে। আর ঢাকায় পূজা হবে ২৩৪ মন্ডপে। গত বছর সারা দেশে ২৯ হাজার ৭৪টি মন্ডপে দুর্গা পূজা হয়েছিল এবং ঢাকায় মন্ডপের সংখ্যা ছিল ২২৫টি।

দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close