বাড়িতে টিফিন খাওয়ার কারণে নওগাঁর বদলগাছীতে শিক্ষকের বেত্রাঘাতে নাদিম হোসেন (১০) নামে এক স্কুলছাত্রের চোখ গুরুতর জখম হয়েছে। ঘটনার পর এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহরিয়ার হোসেনকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্মকর্তা তাকে উদ্ধার করে। গত রোববার দুপুর ২টায় উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের ‘বেগুন জোয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’ এ ঘটনা ঘটে। নাদিম হোসেন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র এবং বেগুন জোয়ার গ্রামের নান্নু হোসেনের ছেলে। এলাকাবাসী ওই শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তিসহ অপসারণের দাবি জানিয়েছে।

জানা গেছে, স্কুলের পাশেই বাড়ি ছাত্র নাদিমের। টিফিনের সময় বাড়ি থেকে সে টিফিন খেয়ে আসে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহরিয়ার হোসেন ছাত্রদের কাছে জানতে চান কে কে বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে আসেনি। নাদিমসহ চারজন বাড়ি থেকে টিফিন না নিয়ে আসায় দুপুর ২টায় তার অফিস কক্ষে ডেকে বেত্রাঘাত করেন। একটি আঘাত নাদিমের বাম চোখে লাগায় রক্তক্ষরণ হয়। তখন নাদিম কাউকে কিছু না বলে বাড়িতে চলে যায়। বিষয়টি তার বাবা-মাকে গিয়ে বলে। এরপর এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যালয়ের কক্ষে প্রধান শিক্ষক শাহরিয়ার হোসেনকে অবরুদ্ধ করে রাখে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। অন্যদিকে আহত ছাত্র নাদিমকে প্রথমে বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে অর্থোসার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

আহত নাদিমের সহপাঠী জেসমিন জানায়, নাদিমসহ কয়েকজন স্কুলে টিফিন নিয়ে না আসায় স্যার (প্রধান শিক্ষক) তাদের অফিসে ডেকে পাঠান। এরপর স্যার বেত দিয়ে নাদিমকে দুটি আঘাত করে। স্যার তৃতীয়বার আঘাত করলে নাদিমের বাম চোখে লেগে ফুলে গিয়ে রক্ত ঝরে। এরপর নাদিম বাড়ি চলে যায়।

অভিভাবক ফুলবানু, মাহমুদা, আতিকুর, সবুজ হোসেনসহ কয়েকজন জানান, তারা স্কুলে তাদের সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। দ্রুত ওই শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তিসহ অপসারণের দাবি করেন তারা। নাদিমের মা পেয়ারা খাতুন বলেন, টিফিনের সময় ছেলে খাবার খেয়ে স্কুলে যায়। এরপর কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে চলে আসে। তখন দেখি তার বাম চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে মারপিট করা হয়েছে। ছেলের চোখ এখন ভালো হবে কি না সন্দেহ আছে। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শাহরিয়ার হোসেনের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বদলগাছী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান জানান, সরকার থেকে নির্দেশনা আছে শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করা থেকে শিক্ষকদের বিরত থাকতে হবে। এই শিক্ষকের ব্যাপারে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।

"