মো. শাহ আলম, খুলনা

  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

খুবিতে জালিয়াতি, স্নাতকোত্তর শেষের আগেই সার্টিফিকেট

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) স্নাতকোত্তর কোর্স শেষ হওয়ার আগেই ফলাফল প্রকাশ করে দুই শিক্ষার্থীকে সার্টিফিকেট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অবৈধভাবে অংশগ্রহণে তাদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গ করে কোর্সের মেয়াদ (সর্বনিম্ন ১৮ মাস) শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে থিসিসের ডিফেন্স সম্পূর্ণ করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ অন্য শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থী দুজন হলেন খুবির জীববিজ্ঞান স্কুলের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের মাস্টার্স ১৭ ব্যাচের এলিজা সুলতানা এবং আফরোজা সুলতানা সোনিয়া। তাদের স্টুডেন্ট আইডি যথাক্রমে এমএস ১৭১০২১ ও এমএস ১৭১০০৯। তারা উভয়ে ০১.০৭.২০১৭ইং তারিখে ৩টি টার্মে সংযুক্ত ১৮ মাস মেয়াদি স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে ভর্তি হন। কিন্তু, তারা সর্বনিম্ন ১৮ মাসের এই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (যা আগামী ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ইং তারিখে ১৮ মাস পূর্ণ হবে) সম্পূর্ণ না করে মাত্র ১৪ মাস ১৬ দিনের মধ্যে শেষ করে ফলাফলপ্রাপ্ত হন, যা নিয়মবহির্ভূত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি ও আদর্শের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের একাডেমিক জালিয়াতির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের বরাবর ওই ডিসিপ্লিনের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আবেদন করেছেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ইনভাইরনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের মাস্টার্স প্রোগ্রাম সম্পর্কিত ৩ নম্বর ধারার উপধারা ৩.১ এবং ৩.২ (বি)-তে বর্ণিত আছে, মাস্টার্স প্রোগ্রাম অবশ্যই ৩ টার্মে অন্তর্ভুক্ত হবে, যার প্রতি টার্মের মেয়াদ অবশ্যই ছয় মাস হবে। অনুসন্ধানীতে জানা যায়, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের মাস্টার্স ১৭ ব্যাচের অন্য কোনো শিক্ষার্থীকে ফলাফল না দিয়ে অতি গোপানে ১৭.০৯.২০১৮ইং তারিখে এলিজা সুলতানা এবং আফরোজা সুলতানা সোনিয়ার ফল প্রকাশিত হয় এবং তার একদিন পর ১৮.০৯.২০১৮ইং তারিখে ডিসিপ্লিনের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অবৈধভাবে অংশগ্রহণে তাদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার ঠিক আগের দিন ওই দুই ছাত্রীর ফল প্রকাশ করা হয়। তারা দুজনই ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর ড. সালমা বেগমের থিসিস স্টুডেন্ট। সম্পূর্ণ অন্যায় ও ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে বর্ণনা করে অভিযোগের তীর তার দিকেই তুলেছে অন্য শিক্ষার্থীরা।

এলিজা সুলতানা অনার্সে সিজিপিএ ৩.৫৫ পেয়ে ষষ্ঠ স্থান লাভ করে এবং আফরোজা সুলতানা সোনিয়া সিজিপিএ ৩.৫২ পেয়ে সপ্তম স্থান অধিকার করে এবং স্নাতকোত্তর পর্বে তাদের ফলাফল যথাক্রমে সিজিপিএ ৩.৭৬ ও ৩.৫৮। নিয়মবহির্ভূতভাবে দুই ছাত্রীর থিসিস জমা দিয়ে রেজাল্ট প্রকাশ করা বড় ধরনের একাডেমিক জালিয়াতি হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এ ধরনের জালিয়াতিতে যে কেউ উৎসাহিত হবেন এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে অভিযোগ অনেকের। ডিসিপ্লিনের একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা সব সময় আমাদের বিশ্বদ্যালয়কে নিয়ে গর্ব করে থাকি। আমাদের চিন্তা করতেই কষ্ট হচ্ছে, আমাদের ডিসিপ্লিনে এ রকম একটা একাডেমিক জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এতে করে প্রকৃত মেধাবীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

এ বিষয়ে ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর ড. সালমা বেগম বলেন, দেখুন আমাদের মাস্টার্সের যে অধ্যাদেশটি আছে, সেটা আপনি মনে হয় পড়েননি। আপনি একটু ভালো করে পড়েন, পড়ে আমার সঙ্গে কথা বলেন। আমি এ ব্যাপারে আপনার সঙ্গে কথা বলব না। কারণ মাস্টার্সের যে অধ্যাদেশ আছে, যে নিয়মকানুন আছে, সে নিয়মকানুনের মধ্যে এটা না গেলে কন্টোলার সেকশন থেকেও এ রেজাল্ট করত না। এটা মাস্টার্সের নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশের নিয়মকানুনের ভেতর থেকে হয়েছে।

মাত্র দুজনকে মাস্টার্সের রেজাল্ট দেওয়া হলো কেন, এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, দুজন চেয়েছে। তারা বলেছে, তাদের কমপ্লিট হয়ে গেছে। অন্যরা যদি আসত, আমি অন্যদেরটাও দেখতাম। আমি তো সবার কাছে চাইনি। তারা নিজেরা এসে বলেছে, তাদেরটা কমপ্লিট হয়ে গেছে। আমি তাদের বলছি, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। ইউনিভার্সিটিতে যারা সেকশন নিয়ে ড্রিল করে, তার তাদেরও বলেছে। তারা তাদের এলাও করেছে। তারা তাদের রেজাল্ট পাবলিশ করেছে। এখানে আমার নিজস্ব কিছু করণীয় নেই। এটায় আমার নিজস্ব কোনো হাতও নেয়। এটা কমপ্লিটলি প্রোটকলের মধ্য থেকেই হয়েছে। এখানে আমার কোনো ইনটেনশনও নেই। আমার কোনো ইনভল্ব নেয়।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের কোথাও সময় শেষ হওয়ার আগে ফলাফল বা সার্টিফিকেট দেওয়ার বিধান নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিগত দিনেও এ ধরনের কোনো ঘটনা নেই। খুবির ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েকুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে আছে। স্কুলসংশ্লিষ্ট ডিনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছি। তিনি বলেন, কোর্স শেষের আগেই সার্টিফিকেট দেওয়ার অভিযোগ করে ওই ডিসিপ্লিনের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আমার কাছে একটি আবেদনও করেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close