প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

প্রথম কলাম

ইমো কি শুধুই মজার জন্য?

মনের ভাব প্রকাশ করতে আমরা ভাষা ব্যবহার করি। কিন্তু ভাষারও রকমফের আছে। কখনো লিখে, কখনো অঙ্গভঙ্গি দিয়ে; আবার কখনো শব্দ করে। আবার নীরবতার মাধ্যমেও আমরা ভাব প্রকাশ করি। ভাষার লিখিত রূপের প্রকাশ মূলত শুরু হয়েছে চিহ্ন দিয়ে। আর এই চিহ্নের দ্বারাই প্রাচীনকাল থেকেই আমরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছি। ভাষার লিখিত রূপের আগে সাংকেতিক চিহ্নে মনের ভাব প্রকাশ চলত।

ক্রমে ভাষার রূপও বদলে গেছে। এখন প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের যুগ। সবার হাতে হাতে মুঠোফোন। জীবনের অনেকটাজুড়ে আছে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসআপ, ভাইবার ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রতিনিয়তই ম্যাসেজ পাঠাচ্ছি, পাচ্ছি। অনেক সময় কোনো বাক্য ব্যয় না করে একটি ইমো দিয়েও জানিয়ে দিচ্ছি মনের ভাব। প্রশ্ন উঠেছে, নতুন এ সাংকেতিক ভাষা ইমো কি শুধুই মজা করার জন্য?

সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, ইমো শুধুই মজার জন্য নয়, শুধু মজার একটি ছবি নয়। ইমো ভাষার বিভিন্ন অর্থ বহন করে, বাক্যের ব্যাখ্যা বদলে দেয়। কখনো কখনো এটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য হয়ে ওঠে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রির শিক্ষার্থী বেঞ্জামিন ওয়েসম্যান এ নিয়ে গবেষণা করেছেন। ইমো নিয়ে তার মত, ইমো এখন সর্বজনীন ভাষা হয়ে উঠছে। সর্বত্রই এটি দেখা যায়। মানুষ বার্তা পাঠানোর সময় ইমো ব্যবহার করে। অনলাইনের ভাষা হিসেবেও এটি ব্যবহৃত।

মানুষ মজাদার কোনো ঘটনাকে প্রকাশ করার জন্য বাক্যের পরিবর্তে ইমো দিয়ে প্রকাশ করছে। শুধু মজার জন্যই নয়, নানা ধরনের ইমো আছে। ভালোবাসা, আনন্দ, এমনকি বেদনার ভাষাও এখন ইমো।

আদিম মানুষ পাথরে দাগ কেটে বা গুহাগাত্রে এঁকে তাদের মনের কথা অপরকে জানাত। শব্দ বা বাক্যের সঙ্গে ইমো জুড়ে দিয়ে নতুন যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। হয়তো কেউ কাজে ব্যস্ত আছে, তার ব্যস্ততা প্রকাশ করে সে এমন একটি ইমো পাঠিয়ে দিল। বার্তাগ্রাহকও ওই ইমো পেয়েই বুঝল অপর প্রান্তের মানুষটি কাজে ব্যস্ত। এভাবে কাউকে ভালোবাসা বা দুঃখ প্রকাশ একটি ইমো দিয়েই প্রকাশ করা যাচ্ছে।

গবেষকরা বলছেন, স্বরভঙ্গির মাধ্যমে যেমন আমরা বিদ্রুপাত্মক ভাষা ব্যবহার করি, তেমনি ইমোও বিদ্রুপাত্মক ভাষার আরেকটি লিখিত রূপ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ইমো নিয়ে এ গবেষণা নিবন্ধটি বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী প্লাস ওয়ানে প্রকাশিত হয়েছে।

ভাষা-প্রক্রিয়ার সঙ্গে মস্তিষ্কের তরঙ্গ পরীক্ষা করে দেখেছেন গবেষক দলটি। একটি প্যাটার্নের নাম পি৬০০, যাকে ‘ভুল সংকেত’ বলা হচ্ছে। অর্থাৎ এ সময় ব্যক্তি ভাষাগতভাবে অপ্রত্যাশিত কিছুর মুখোমুখি হচ্ছে। এই সংকেত ইঙ্গিত দেয়, মস্তিস্ক পুনঃপ্রক্রিয়ায় আছে বা বাক্যের উপাত্ত পুনঃপর্যবেক্ষণ করছে।

মোট ১০৬ জন এ গবেষণায় অংশ নেয়। তাদের এমন বাক্য পড়তে দেওয়া হয়, যেগুলোতে ইমো যুক্ত আছে। হাসি বা ভ্রু কোঁচকানোর মতো ইমোগুলো ওই সব বাক্যে ছিল। তখন তাদের মস্তিষ্ক-তরঙ্গ রেকর্ড করা হয়। তাদের এও জিজ্ঞেস করা হয়, বাক্যগুলোর কী অর্থ তারা করছে।

গবেষকরা বলছেন, এই নিবন্ধ যোগাযোগ সম্পর্কে আমাদের চিন্তাকে আরো প্রসারিত করতে হতে পারে শব্দ অথবা শব্দ ও ছবি, অথবা শব্দ ও অঙ্গভঙ্গি অথবা শব্দ ও ইমো।

গবেষকরা আরো বলছেন, শুধু শব্দ বা ইমো ব্যবহারের চেয়ে শব্দের সঙ্গে ইমো জুড়ে দিলে তা যোগাযোগে দারুণ প্রভাব ফেলে।

তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে, ইমো শুধু মজার জন্যই নয়; আমাদের ইচ্ছে-অনিচ্ছে, ভালোবাসা, বেদনা, এমনকি সাময়িক নীরবতার ভাষাও হয়ে উঠছে ইমো। শব্দ বা বাক্যের সঙ্গে ইমো জুড়ে দিলে তা হয়ে উঠছে আরো অর্থবহ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close