আদালত প্রতিবেদক

  ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

খালেদার আইনজীবীদের প্রতি আদালত

আপনারা বিচারকে বিলম্বিত করছেন

চিকিৎসার বিষয়ে শুনানি মুলতবি

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানিকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশে আদালত বলেছেন, ‘আপনারা কি আদালতে আসেন কেবল জামিন নেওয়ার জন্য? আপনারা বিচারকে বিলম্বিত করছেন।’ খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি না করে তার আইনজীবীরা সময় চাইলে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামান এসব কথা বলেন। গত সোমবার এই মামলার দুই আসামি আদালতে অনাস্থা দেন। এর ওপর গতকাল মঙ্গলবার আদেশ দেওয়ার দিন ঠিক করেছিলেন আদালত। আদালত বলেন, অনাস্থার বিষয়ে বুধবার (আজ) আদেশ দেবেন। এদিকে, বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল বিশেষ করে ইউনাউটেড হাসপাতালে রেখে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানি ১ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করেছে হাই কোর্ট। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ আবেদনের আংশিক শুনানির পর গতকাল এ আদেশ দেয়। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও মাহবুব উদ্দিন খোকন; রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

শুনানির এক পর্যায়ে আদালত খালেদার আইনজীবীর কাছে জানতে চায়, আপনারা কি রুল চান? তখন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, শুনানি শেষে আমরা আদালতের কাছে একটা আদেশ চাই। আদালত তখন বলে, এখনতো ভ্যাকেশন কোর্ট, অল্প সময় কোর্ট চলবে। আপনাদের এটা বিস্তারিত শুনতে গেলে অন্য আইনজীবীদের মেটারগুলো শোনা হবে না।

খোকন আদালতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিএনপির চেয়ারপাসনের চিকিৎসার বিষয়টিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বিরোধিতা না করলেই তো এখনই একটা অর্ডার দিতে পারেন।

আদালত বলেন, আপনারা যে প্রক্রিয়ায় বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা চাচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে তো রাষ্ট্রপক্ষের বিরোধিতা করার সুযোগ রয়েছে। আমরা উভয়পক্ষের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনব। এ জন্য ১ অক্টোবর শুনানির জন্য রাখছি।

পরে মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। বিশেষায়িত হাসপাতালে তার চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। আদালত এ বিষয়ে আমাদের বিস্তারিত বক্তব্য ও রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শুনবেন বলে নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ১ অক্টোবর তারিখ রেখেছেন।

গত ৯ সেপ্টেম্বর দেশের বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে, বিশেষ করে ইউনাইটেড হাসপাতালে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করা হয়। স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজি (প্রিজন), ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপারসহ সাতজনকে বিবাদী করে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিতে তাদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে রুল চাওয়া হয়েছে।

আদালতের প্রতি অনাস্থা দেওয়ার প্রসঙ্গে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, কোনো প্রেক্ষাপট তৈরি হয়নি যে আসামিপক্ষ অনাস্থা দেবে। বাস্তবে তারা ষড়যন্ত্র করছেন। আদালত মামলার কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য নন। তাদের আচরণ স্ববিরোধী।

খালেদা জিয়ার আদালতে না আসা প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া মামলা চালাতে দেবেন না। এভাবে চললে বিচারব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে। কারাগারে থাকলে কোনো আসামি বলতে পারেন না, তিনি আদালতে আসতে অনিচ্ছুক। খালেদা জিয়াকে তো আর জোর করে আনা সম্ভব না। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বয়স্ক নারী। তার সুবিধার কথা ভেবে এখানে আদালতে বসানো হয়েছে। তার সম্মানের কথা ভেবে জেল কর্তৃপক্ষ তাকে আনছে না।

অন্যদিকে, খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতে বলেন, খালেদা জিয়া নিজে আদালতে এসে বলে গেছেন, তিনি গুরুতর অসুস্থ। খালেদা জিয়া একা চলতে পারেন না। এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারেন না। বাথরুমে পড়ে গেছেন। তার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড হয়েছে। কারা মহাপরিদর্শক জানিয়েছেন, দু-এক দিনের মধ্যে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close