নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বুড়িগঙ্গায় নৌকাবাইচে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস

যুগ যুগ ধরে লোকায়ত বাংলার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ নৌকাবাইচ। তবে আবহমান বাংলার এ সংস্কৃতি কিছুটা হলেও আছে এখনো। গতকাল সোমবার ঢাকার বছিলাসংলগ্ন বুড়িগঙ্গায় হয়ে গেল তেমনি এক আয়োজন। বুড়িগঙ্গাতীরের দুপাশে (বছিলা ও ওয়াশপুর) এলাকার মানুষের উপস্থিতি ও বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস বাংলার পুরোনো এ সংস্কৃতির প্রয়োজনীয়তা নতুন করে মনে করিয়ে দিল।

মোহাম্মপুর এলাকার সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের বিশেষ উদ্যোগে এ নৌকাবাইচ হয়েছে। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের আকর্ষণীয় পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই নৌকাবাইচ ঘিরে মানুষের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখা যায়। তিন বছর পর নৌকাবাইচ হওয়ায় এলাকাবাসীও খুশি। সব শ্রেণির মানুষের উপস্থিতি এ আয়োজনকে মনোমুগ্ধকর করে তোলে।

অতীতে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে আয়োজন করা হতো নৌকাবাইচের। যেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করত অসংখ্য নৌকা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা নৌকা প্রতিযোগিতা দেখতে জড়ো হতো সহস্র মানুষ। কেউ নদীর তীরে, কেউবা আবার নৌকা করে নদীবক্ষে। বাদ যেত না গাছের ডাল ও ঘরের চাল কিংবা ছাদও। কিন্তু সমাজ ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের ফলে বুড়িগঙ্গার নৌকাবাইচের গতি হারিয়ে ফেললেও সোমবার যেন অতীত বাংলার সেই চিরচেনা দৃশ্য ফিরে আসে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বছিলার বিআইডব্লিউটিসির ঘাটসংলগ্ন বুড়িগঙ্গাতীরে হাজার হাজার মানুষ। নারী, পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধদেরও উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। বাইচের নৌকা ছাড়াও আরো শতাধিক নৌকা ছিল বুড়িগঙ্গার ওই অংশে। এসব নৌকায় যুবকদের দল বেঁধে গানের তালে তালে নৃত্য ছিল উপভোগ্য। আর বুড়িগঙ্গার ওয়াশপুর অংশের বিদ্যুৎ প্লান্টের ওয়ার্কওয়েতেও শত শত মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ-ওয়াশপুর সড়কে নৌকাবাইচের দর্শনার্থীদের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি করে।

নৌকাবাইচ দেখতে আসা কেরানীগঞ্জের আরশি নগরের বাসিন্দা ডা. মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘ঢাকার ঐতিহ্য বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করতে হবে। এ জন্য সরকারকে নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করতে না পারলে নৌকাবাইচের মতো আবহমান বাংলার এ সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে।’

নৌকাবাইচ দেখতে এক ঘণ্টার জন্য ৩০০ টাকা দিয়ে নৌকা ভাড়া করে বুড়িগঙ্গা শিশুসন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরেছেন বছিলার স্কুলপাড়ার বাসিন্দা মো. ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, এ এলাকায় দুই বছর ধরে ভাড়া থাকি, এর আগে কখনো এ ধরনের আয়োজন দেখিনি। এবার এ আয়োজন দেখে আমরা মুগ্ধ। হাজার হাজার লোক এসেছে নৌকাবাইচ দেখতে।

বছিলার ওয়াশপুরের বাসিন্দা ও নৌকার মাঝি আবদুল বারেক বলেন, ছোটবেলা থেকে নৌকা বেয়েই জীবিকা নির্বাহ করছি। বছিলা ব্রিজ হওয়ার আগে যাত্রী পারাপার করতাম। এখন ভ্রমণপিপাসুদের নিয়ে ঘুরি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close