ক্রীড়া প্রতিবেদক, দুবাই থেকে

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

দুবাইয়ে নেই আরব সংস্কৃতি

বিমান থেকে নামতেই বাস। সেখান থেকে চড়তে হলো মেট্রোরেলে। এরপর দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন। মাঝের পথটুকু হাঁটা দূরত্বের। ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সারতে গিয়েই দেখা মিলল অ্যারাবিয়ানদের। সাদা রঙের জোব্বা পরে সারিবদ্ধ কাউন্টারে বসা তারা। ‘বাঙালি’ বলে আমাদের সম্বোধনও করলেন। কোনো ঝামেলা ছাড়াই নির্বিঘেœ বের হয়ে পড়লাম।

আরো একবার ঢুকতে হলো বিমানবন্দরে। কারণ বাইরে থাকা ট্যাক্সিতে যত্রতত্র ওঠা নিষেধ। উঠলেই চালকসহ যাত্রীর মোটা অঙ্কের দন্ড। ট্যাক্সির জন্য ভেতরে যেতেই চোখ কপালে ওঠার উপক্রম। শ শ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর বাহন পেতে। অগত্যা লাইনে দাঁড়ালাম, বেশ কিছুক্ষণ পর ট্যাক্সিও পেলাম।

উন্নত সব শহরের মতো দুবাইয়ের আইন কানুনও যে খুব কঠোর সেটা বুঝতে বেগ পেতে হলো না। কুড়ি মিনিটের ট্যাক্সি ভ্রমণেই পরিষ্কার হয়ে গেছে তা। রাজপথ, অলিগলি কোথাও চোখে পড়েনি পুলিশ। স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলছে, নিভছে লাল, সবুজ এবং হলুদ বাতি। সেটা শুধু যানবাহনের জন্য নয়, পথচারীদের জন্যও আছে সংকেত। আইন অমান্য করলেই দিতে হবে আক্কেল সেলামি।

এশিয়া কাপের চলমান আসরের ভেন্যু দুটি তথা দুবাই ও আবুধাবি। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম মূল শহর থেকে একটু দূরে। তবে আমাদের গন্তব্য বার দুবাইর বুর্জমান এলাকা। যা পুরাতন দুবাইর একটা অংশ-বিশেষ। দেরা, বার দুবাই এসব এলাকাতেই গড়ে উঠেছিল অ্যারাবিয়ান সংস্কৃতি ও সভ্যতা। যার নিদর্শন পাওয়া যায় আল ফোর্টের দুবাই জাদুঘরে।

কিন্তু বাস্তব চিত্রটা বেশ ভিন্ন। এখানে জন্ম নেওয়া আরব অধিবাসীরা থাকেন শহরের বাইরে। সম্ভবত এ কারণেই খুব একটা দেখা যায় না আরবদের। শহরজুড়ে শুধু ভিনদেশি আর পর্যটকদের মেলা। বেশভূষায় অনেকেই সংক্ষিপ্ত পোশাকে। তাতে অনেকেরই মনে হতে পারে দুবাই নয়, এটা ইউরোপের কোনো সমৃদ্ধ শহর।

নতুন বা আধুনিক দুবাইতেও একই দৃশ্য। যদিও পুরাতন দুবাই লোকারণ্য নয়। রাস্তাঘাটে সচরাচর কম লোকেরই সমাগম দেখা যায়। খুব বেশি ফুটপাতও নেই এখানে। এখানে শুধুই সুরম্য ও দীর্ঘাকায় ভবনের মিছিল। মরুভূমির বুক চিরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এই গ্রহের সবচেয়ে বড় ভবন (১৬৩ তলা) বুর্জ খলিফা। অট্টালিকার আশপাশ দিয়ে ছুটে চলেছে মাইলের পর মাইল প্রসারিত সড়ক।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের খনিজ সম্পদ বলতে সিংহভাগই রাজধানী আবুধাবিতে। দুবাই সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে পর্যটন নগরী হিসেবে। ভবিষ্যৎ অর্থনীতির বিষয়টি মাথায় রেখেই এক রকম দূরদর্শিতারও পরিচয় দিয়েছেন এখানকার আরবরা। পর্যটকদের নজর কাড়তে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন স্থাপনা। সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উপকরণগুলো তো থাকছেই।

তবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আরবদের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস হচ্ছে কর ব্যবস্থা। আরব আমিরাত সরকার নানান বাহানায় মানুষের ওপর বসিয়ে দিয়েছে করের বোঝা। যার বড় একটা অংশের জোগান আসে ট্র্যাফেকিং আইন থেকে। যেটাকে এক প্রকার ‘অত্যাচার’র শামিল বলে অভিযোগ পর্যটক ও অভিবাসীদের।

দুবাই শহরে ৩০ লাখেরও বেশি লোকের বসবাস। যেখানে বাংলাদেশি, ভারতীয়, পাকিস্তানি, নেপালিস, ফিলিস্তিনি এবং আফগানদের চলাফেরা বেশি। ব্যবসা এবং চাকরির সৌজন্যে শহরের ভেতরেই থাকেন তারা। হোটেল বা আবাসন, রেস্টুরেন্ট এবং বিভিন্ন ভোগ্যসামগ্রীর ব্যবসা করতেই বেশি দেখা যায়। হাত বাড়ালেই যেন সবকিছু পাওয়া যায়।

আধুনিক শহরের প্রায় সব সুযোগ সুবিধা আছে দুবাইতে। আছে কিছু সীমাবদ্ধতাও। প্রখর রোদ, অসহনীয় গরমে নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম। যদিও গরম অনেকটাই কমে গেছে এখানে। তাও গড় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস! বাইরে অবশ্য গরম থাকলেও বাসা-বাড়ি, হোটেল, স্টেডিয়াম, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, দোকানপাট সবকিছুই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে সরকার। তাই বলে গরমের আবহ থেকে একেবারে বের হওয়ার উপায় নেই। কল, ঝর্ণা থেকে বেরিয়ে আসছে গরম পানি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close