গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ইসিতে নিরাপত্তা উদ্বেগ

নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসায় দিন দিন এ উদ্বেগ প্রকট হচ্ছে। এ নির্বাচন উপলক্ষে সাংবিধানিক সংস্থায় দৈনিক নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের আগমন ঘটছে। কিন্তু আগন্তুকদের মধ্যে সন্দেহভাজনদের যাচাই-বাছাই করে ইসিতে প্রবেশে ব্যবহৃত স্ক্যানার মেশিনটি কেনার দিন থেকেই বিকল; এ কারণে যথাযথ নিরাপত্তা তল্লাশি ছাড়াই অনেকে ঢুকে পড়া সহজ হয়েছে।

মেশিনটি সংস্কারে সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রো প্রসেস প্রাইভেট লিমিটেডকে বারবার তাগিদেও সাড়া মিলছে না। এ নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে ইসির সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে কঠোর অবস্থানে কমিশন প্রতিষ্ঠানটির পারফরম্যান্স গ্যারেন্টি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দক্ষ ও চৌকস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও আনসার দফতরে চিঠি দেয় ইসি। চিঠিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, বরিশাল জেলা নির্বাচন অফিসের একটি মেয়াদোত্তীর্ণ সাত লাখ টাকায় কেনা জিপ ইসির অনুমতি ছাড়াই দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেছে সংশ্লিষ্ট অফিস। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে অনিয়ম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। খবর ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রের। সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা, ভয় ও শঙ্কা ইসির কর্মকর্তাদের মধ্যে ভর করলেও কেউই মুখ খুলতে নারাজ। তবে, আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে তারা যে উদ্বিগ্নÑতা অকপটে স্বীকার করেছেন। এর অংশ হিসেবে নির্বাচনের আগেভাগেই নির্বাচন ভবনে কড়াকড়ি আরোপ করতে চাচ্ছে ইসি। এর জন্য প্রবেশে বসানো অচল স্ক্যানার মেশিনটি সরিয়ে নতুন মেশিন স্থাপনে তৎপর হয়ে উঠেছে কমিশন।

স্ক্যানার মেশিনটির বিকল হওয়া নিয়ে ইসির উদ্বেগ এ-সংক্রান্ত নথিতে উঠে এসেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন একটি স্পর্শকাতর ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের অফিস অবস্থিত। এ ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডি) ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবন (ইটিআই) এখানে রয়েছে।

এ ভবনে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারের মন্ত্রী, এমপি, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের ব্যক্তি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা গ্রহণে অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে। ইতোমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

কিন্তু নির্বাচন ভবনের নিরাপত্তার কাজে ব্যবহারের জন্য একটি স্ক্যানার মেশিন গণপূর্ত ই/এম বিভাগের মাধ্যমে ইলেকট্রো প্রসেস কোম্পানি লিমিটেড থেকে বসানো হয়। স্থাপনের পর থেকেই নানা সমস্যায় এটি প্রায় বিকল থাকে। মেশিনটি সচলের জন্য কয়েক দফা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও গণপূর্ত বিভাগকে তাগিদ দিলেও তারা ইসির চিঠিকে অগ্রাহ্য করে চলেছে। তাই অচল মেশিনটির পারফরম্যান্স গ্যারেন্টি বাজেয়াপ্ত এবং নতুন আরেকটি মেশিন সরবরাহের জন্য কমিশনের অনুমতি চেয়ে নথি প্রস্তুত করা হচ্ছে।

এদিকে, সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার, বরিশাল কার্যালয়ে ব্যবহৃত ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৮৩৩৫ নম্বর হার্ড জিপ হুন্দাই গাড়ি ব্যবহারে অনুপযোগী হওয়ায় নতুন গাড়ি সরবরাহের জন্য গত ১৪ এপ্রিল সচিবালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ফিরতি গত ১৩ মে চিঠিতে সচিবালয় থেকে গাড়িটিকে অকেজো ঘোষণা করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিআরটির অফিসার থেকে গাড়িটি কনডেম ঘোষণা করে গাড়ির আনুমানিক বাজারমূল্য সাত লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গাড়িটি নিলামে মাত্র দেড় লাখ টাকায় বিক্রি দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও জারি করেনি সংশ্লিষ্ট অফিস। বিষয়টি ইসির নজরে এলে গাড়িটি বিক্রি করতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি নাÑতা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য, আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে পরবর্তী বছরের ২৮ জানুয়ারি সময়ের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সরকার চাইছে চলতি বছরের ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে এ নির্বাচন সম্পন্নের। এখন চলছে নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ। তবে, চূড়ান্ত কাজ নির্ধারণে আজ ও আগামীকাল কমিশন সচিবের নেতৃত্বে সভা হওয়ার কথা রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close