প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

জেএনইউয়ে বামপন্থিদের বিপুল বিজয়

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) ভারতের সেরা বিদ্বান ও মেধাবীদের ক্যাম্পাস। আর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয় পেয়েছে বামপন্থি ছাত্রদের ঐক্যজোট। আমাদের কলকাতা

প্রতিনিধি জানান, দক্ষিণপন্থি আগ্রাসনের কঠিন মোকাবিলা শেষে জেএনইউ ছাত্র ইউনিয়নের সব আসন দখলে নিয়েছে বামপন্থিরা। অভূতপূর্ব এই বাম ঐক্য হয়তো অজান্তে রচে দিল ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনের আবহ সংগীতও। একতাই শাসক বিজেপির মোকাবিলার একমাত্র প্রতিষেধক। ভোটের ফলাফলে দেখা যায়, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি, সহসভাপতি, সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক, চার গুরুত্বপূর্ণ পদই দখল নিয়েছে বামপন্থিরা। বিভিন্ন বিভাগের কাউন্সিলর পদগুলো সিংহভাগও তাদের দখলে। সামাজিক বিজ্ঞান ও ভাষা শিক্ষার দশটি কাউন্সিলরের প্রতিটি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাঁচটি কাউন্সিলরের পদের মধ্যে চারটিই তারা ছিনিয়ে নিয়েছে। বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারত বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) পেয়েছে সংস্কৃত শিক্ষার কাউন্সিলরের একমাত্র পদটি। বিজেপির মতোই একটি করে কাউন্সিলরের পদ জিতেছে কংগ্রেসের ছাত্র ইউনিয়ন এনএসইউআই ও সদ্য গঠিত দলিত সংগঠন ‘বিরসা আম্বেদকর ফুলে স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ (বাপসা)।

এবারের ঐক্য কতখানি চূড়ান্ত, তার প্রমাণ মিলেছে প্রাপ্ত ভোটের হিসেবেও। যেমন সভাপতি পদে বামরা পেয়েছে ২ হাজার ১৬১ ভোট, এবিভিপি পেয়েছে মাত্র ৯৮২। সহসভাপতি পদে বাম প্রার্থী পেয়েছেন ২ হাজার ৬৯২ ভোট, এবিভিপি ১ হাজার ১২টি। সম্পাদক পদে বামদের ২ হাজার ৪২৩ ভোটের পাশাপাশি এবিভিপির পাওনা ১ হাজার ১২৩ ভোট। যুগ্ম সম্পাদক পদের ফারাক হলো ২ হাজার ৪৭ বনাম ১ হাজার ২৪৭। চার প্রধান পদের তিনটিতে তৃতীয় স্থানে ‘বাপসা’, যুগ্ম সম্পাদকের লড়াইয়ে তৃতীয় স্থান এনএসইউআইয়ের। রেকর্ডের খাতিরে এ কথাও বলা উচিত, গতবারের তুলনায় বাপসা এবার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট কম পেয়েছে। তাদের না পাওয়া ভোট গেছে এনএসইউআইয়ের দখলে।

বাম ঐক্যের সূচনা ২০১৬ সালে, জেএনইউ ‘দেশদ্রোহীমুক্ত’ করতে যে বছর কোমর কষে নেমেছিল দক্ষিণপন্থি ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। সেই বছর সিপিএমের ছাত্র সংগঠন ‘এসএফআই’ হাত মেলায় দীপংকর ভট্টাচার্যের উগ্র বাম সংগঠন সিপিআই (এমএল) ‘আইসা’র সঙ্গে। এবারের মতো সেবার সব আসনে জেতার পর ২০১৭ সালে বিক্ষুব্ধ সিপিএম ছাত্র নেতাদের সংগঠন ‘ডিএসএফ’ বাম ঐক্যের শরিক হয়। এবার সিপিআইএর ছাত্র সংগঠন ‘এআইএসএফ’-এর যোগদানে বাম ঐক্যের ষোলোআনা পূর্ণ হলো। প্রাপ্ত ভোটের হিসাব? বামপন্থিদের দখলে মোট ভোটের ৪৫ শতাংশ, গতবারের তুলনায় যা প্রায় ৩ শতাংশ বেশি। বিজেপির গৈরিক বাহিনী পেয়েছে ২১ শতাংশের সামান্য বেশি।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটের চার দিনের মাথায় জেএনইউয়ের এই ভোট গুরুত্বপূর্ণ ছিল অন্য কারণে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতে জেতে এবিভিপি, কংগ্রেসের এনএসইউআই পায় শুধুমাত্র সাধারণ সম্পাদকের পদ। সেই ভোটে এই প্রথমবারের জন্য ব্যবহৃত হয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ‘ইভিএম’। ভোটের শুরু থেকেই ইভিএম ঘিরে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল। সন্দেহ জারি ছিল গণনা পর্যন্ত। ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে গমগম করে ওঠে গণনা কক্ষ। ফল বেরোনোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেস জানিয়ে দেয়, ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ নিয়ে তারা আদালতে যাবে। জেএনইউ দখলে মরিয়া বিজেপির আন্দোলন ও বিক্ষোভে গণনা পিছিয়ে যায় ১৪ ঘণ্টা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত ভরাডুবি।

২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জেএনইউয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছিল অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও ওমর খালিদের অতি বাম (নকশাল ও মাওবাদীদের মতো) সংগঠন ‘ডিএসও’। সংসদ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আফজল গুরুর ফাঁসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়েছিল। সংঘর্ষও বাধে দক্ষিণপন্থি ও অতি বাম সমর্থকদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেয় কানহাইয়া কুমার, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ওমর খালিদ, শেয়লা রশিদদের বিরুদ্ধে। আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল সেই কাহিনি। বিজেপি সমাজকে ভাগাভাগি করে দেয় ‘দেশদ্রোহী বনাম দেশপ্রেমী’ দুই শিবিরে। তারা কোমর কষে নামে জেএনইউকে ‘দেশদ্রোহীমুক্ত’ করতে।

গো-রক্ষা আন্দোলন, গণপিটুনি, দলিত নিগ্রহ, বাক্স্বাধীনতা হরণ, ধর্মীয় মেরুকরণ, মানবাধিকার হরণ, অসত্য খবর প্রসারে ‘সরকারি’ প্রচেষ্টা, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাকার্থিবাদ’-এর নব সংস্করণ, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জেএনইউয়ের বাম ঐক্য একটা প্রতীক হয়ে উঠল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close