চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

সমন্বয়ের মাধ্যমে চলবে চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়ন

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (চউক) সব সেবা সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে নগর উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। চসিকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। সভা শেষে মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের হাত ধরাধরি করে সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।

প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলে আসছিলেন, সিডিএ উন্নয়ন কর্মকা-ে চসিকের সঙ্গে সমন্বয় না করায় নগরীতে জনদুর্ভোগ হচ্ছে। সমন্বয়হীনতা নিয়ে গত ২১ জুন দলীয় সভায় নাছির ও ছালামের মধ্যে বাকবিত-াও হয়। এরপর সিডিএ চেয়ারম্যান ২৪ জুন সিটি করপোরেশনের সমন্বয় সভায়ও অনুপস্থিত থাকেন। পরে আর কোনো সমন্বয় সভাতেও উপস্থিত ছিলেন না ছালাম।

গতকাল সোমবারের সভায় মেয়র বলেছেন, সমন্বয়ের মাধ্যমে নগর উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করলে নগরবাসী চলমান উন্নয়নের সুফল পায়। আমাদের লক্ষ্য বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়ন বার্তা পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আবারো জয়ী করে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্বাচনের পূর্বে চলমান উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সবসময় সতর্ক থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান। সরকারের অংশ বিশেষ। নগরবাসী যাতে নগরে চলমান উন্নয়নের সুফল ভোগ করে সে লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকারের চলমান উন্নয়ন বার্তা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের সব আসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়ে সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার সুযোগ সৃষ্টিতে আমাদের এই উদ্যোগ। এই নির্বাচন আমাদের অগ্নিপরীক্ষা। বাংলাদেশ কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত হবে? নাকি স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক চেতনায় পরিচালিত হবেÑ এখনই সময় তা উপলব্ধির। জনগণের মাঝে এই অমোঘ বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে। সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকা-ের চিত্র জনগণের মাঝে তুলে ধরতে হবে।

মেয়র এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- আজ শুধু দেশে নয়। বিশ্বে সমাদৃত হচ্ছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এই উন্নয়ন বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদের। উন্নয়ন আন্দোলন বাস্তব নিরীক্ষণ করে বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে গণমাধ্যম জনগণের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে এটাই প্রত্যাশা করি আমরা।

সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, আমার অন্যতম যোগ্যতা হচ্ছে আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। আমি মনে করি এই পরিচয় ছাড়া প্রধানমন্ত্রী আমাকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়ার কোনো কারণ ছিল না।

তিনি বলেন, এ নগরে ৬৫ লাখ মানুষ অর্থাৎ ১২ লাখ পরিবারের বসবাস। তাদের চাওয়া পরিবেশবান্ধব জলাবদ্ধতামুক্ত পরিচ্ছন্ন একটি নগরী। আর সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজকের সভায় আমার সুস্পষ্ট বার্তা চট্টগ্রামের উন্নয়ন কর্মকা-ের সুফল জনগণকে পৌঁছে দেয়ার জন্য আমরা সদাসর্বদা প্রস্তুত। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম উন্নয়নের যে অঙ্গীকার করেছিলেন তা রক্ষাকল্পে এরই মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সিডিএ, চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম ওয়াসা, পিডিবি, কর্ণফুলী গ্যাস, ট্যানেল নির্মাণসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করছেন। যার পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।

আবদুচ ছালাম বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জনগণকে ছাড়া বিকল্প কিছু চিন্তা করে না। তাই চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী এত আন্তরিক। তিনি চলমান এসব উন্নয়নের কারণে জনগণের সাময়িক দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, উন্নয়ন কর্মকা- হাতে নেয়া ও পরিচালনা করা কঠিন প্রক্রিয়া। কিন্তু আমরা ভয় পাইনি। অতীতের সরকারগুলো যেকোনো কারণেই হোক চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়নে কোনো মেগা প্রকল্প হাতে নেয়নি বলে বর্তমান সরকারের নেয়া এই বৃহৎ কর্মযজ্ঞের কারণে সাময়িক ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।

নগরীর জলবদ্ধতা প্রকল্প প্রসঙ্গে সিডিএ’র চেয়ারম্যান বলেন, এ প্রকল্পের কাজ মাত্র ১ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। এ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। তিনি নগরীতে চলমান সব সেবা সংস্থার উন্নয়ন কর্মকা-কে একত্রিত করে নগরবাসীকে এর সুফলের বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য নগর আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার প্রস্তাব দেন। ছালাম বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে সহায়ক ভূমিকা পালন করা যাতে করে জনগণের কষ্ট লাঘব হয়। সিডিএ’র চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের চলমান ট্যানেলের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম নগরী উন্নয়নের ক্ষেত্রে ৫০ বছর এগিয়ে যাবে।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সিডিএ’র চেয়ারম্যানকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। যাতে করে সরকারের ভাবমূর্তি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনাম অক্ষুণœ থাকে।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন মেয়রকে উন্নয়ন কাজের জন্য সাময়িক বন্ধ থাকা আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের এক পাশ জনগণ ও যান চলাচলে সুবিধার্থে খুলে দেয়ার আহ্বান জানান।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চু এক্সেস রোড উঁচু করার ক্ষেত্রে ওই এলাকার জলবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ সিস্টেম ব্যবস্থা ঠিক করার পরামর্শ দেন।

এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে নগরের চলমান উন্নয়ন কর্মকা-ের কারণে জনভোগান্তি, জনদুর্ভোগ দূর করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী সব সেবা সংস্থার কর্মপরিকল্পনা সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মযজ্ঞ পরিচালনার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। যার পরিপ্রেক্ষিতে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামকে বৈঠকের প্রস্তাব দেন। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এই ত্রিপক্ষীয় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। এতে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, সুনীল সরকার, আলতাফ হোসেন বাচ্চু, যুগ্ম সম্পাদক আবদুল রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ, চউকের প্রধান প্রকৌশলী জসীম উদ্দীন ও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী কাদের নেওয়াজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close