প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

হরেক রকম আম : ভিন্ন স্বাদ

আম একটি রসালো, অর্ধবৃত্তাকার গ্রীষ্ম মন্ডলীয় ফল যা হলুদ, সবুজ ও লাল রঙের হয়ে থাকে এবং যেটির মাঝখানটা শক্ত; আমের ভেতরের এই শক্ত জিনিসটিই এর বিচি। আম পাকলে খাওয়া যায় কিংবা কাঁচা অবস্থায় এটি দিয়ে আচার কিংবা চাটনি বানানো যায়। লঙ্কা, লবণ ও পোড়া মরিচযোগে কাঁচা আমের ভর্তার কথা শুনলেই তো জিভে পানি আসে।

পৃথিবীতে শ শ রকমের আম রয়েছে- যার সবগুলো হয়তো আমাদের সুপার মার্কেটে পাওয়া যাবে না। এ প্রতিবেদনে আম সম্পর্কে থাকছে আরো কিছু তথ্য। প্রতিদিন একটি করে আম খাওয়া ভালো। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ব্যাপারে হিসাব করে আম খেতে হবে।

১. আপেল বা বরই-এর মতোই আমের রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। ভারতের নয়াদিল্লিতে আম উৎসবে আমের অন্তত ৫০০ প্রজাতি তুলে ধরা হয়েছে। বহু বৈচিত্র্যময় জাতের আম রয়েছে অঞ্চল ভেদে এমনকি রয়েছে স্বতন্ত্র জাত।

কোনোটা রসালো আর মিষ্টি, কোনোটা টক, কোনোটা আনারসের মতো স্বাদের, আবার সুপার মার্কেট প্রায়শই এমন আমও কিনতে পাওয়া যায় যেগুলো মিশ্র স্বাদের।

২. একটি নয়, তিনটি দেশের জাতীয় ফল এটি। পাকিস্তান, ভারত আর ফিলিপাইনের জাতীয় ফল আম। বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ হলো আম গাছ।

৩. ইংরেজদের ‘ম্যাঙ্গো’ শব্দটির উৎপত্তি ভারতে। ভারতের গোয়া রাজ্যের রাজধানী পানজিম, যেটি ১৫০০ শতকে পর্তুগিজ শাসনে ছিল। যেখান থেকে ইউরোপে মসলা রফতানি হতো। এখানেই ইউরোপিয়ানরা আমের স্বাদ পান। ইংরেজিতে ম্যাঙ্গো শব্দটি সম্ভবত তামিল ‘ম্যানকেই’ কিংবা তামিল ‘মানগা’ শব্দ থেকে এসেছে। যখন পর্তুগিজ ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ ভারতে বসতি স্থাপন করে, তারা নাম হিসেবে ‘ম্যাংগ’ শব্দটি গ্রহণ করে। আর যখন ব্রিটিশরা ১৫০০ এবং ১৬০০ শতকের দিকে ভারতে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করে, তখন ‘ম্যাঙ্গো’ শব্দটির জন্ম।

৪. প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় ৪ কোটি ৬ লাখ টন আম উৎপন্ন হয়। আম চিনতে জানলে ভালো আমটি বেছে নেওয়ার সুবিধা হয়।

৫. পুরো পৃথিবীজুড়েই আম পাওয়া যায়। আফ্রিকার কোনো কোনো এলাকায় আমের ভালো উৎপাদন হয়। সুপার মার্কেটগুলো বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চল থেকেই আম সংগ্রহ করে থাকে। বছরের শুরুর দিকে আম আসে পেরু থেকে, এরপর পশ্চিম আফ্রিকা আর তারপর আসে ইসরায়েল থেকে। মিসর থেকে আম আসে বছরের তৃতীয় ভাগে আর তারপর আমের উৎস হলো ব্রাজিল।

৬. বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আম উৎপন্ন হয় ভারতে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে বছরে ১ কোটি ৮০ লাখ টন আম উৎপন্ন হয়- যা কি না বিশ্বের মোট আম উৎপাদনের ৪০ শতাংশ। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্যে এক শতাংশেরও কম আম তারা জোগান দেয়, বেশিরভাগ দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদাতেই লেগে যায়। আম উৎপাদনের দিক থেকে এরপরেই চীন এবং থাইল্যান্ডের অবস্থান।

৭. ভারতে প্রথম আম জন্মে পাঁচ হাজার বছর আগে। হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে ভারত এবং মিয়ানমারে প্রথম বন্য আম উৎপন্ন হয় বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া পাঁচ হাজার বছর আগে আমের চাষ করা হয় ভারতের দক্ষিণ অংশ, মিয়ানমার এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে (বঙ্গোপসাগরের একটি দ্বীপপুঞ্জ)।

৮. আমের বিশ্ব ভ্রমণ। আমের উদ্ভব এশিয়ায়, কিন্তু এখন পুরো পৃথিবীজুড়েই আম দেখা যায়। বলা হয় যে, দশম শতাব্দীর শুরুর দিকে আফ্রিকাতে আমের চাষ হয়। ১৪০০ শতাব্দীর উত্তর আফ্রিকার মহান পর্যটক ও পন্ডিত ইবনে বতুতার লেখাতে আমের বিবরণ পাওয়া যায়, তিনি মোগাদিসুতে আম দেখেছেন বলে উল্লেখ করেন। ১৫০০ শতাব্দীর দিকে বহু ইউরোপীয় জাতি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তাদের উপনিবেশ স্থাপন করে মূলত মসলার ব্যবসার প্রলোভনে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো পর্তুগিজ এবং স্প্যানিশ জাতিÑ যারা আমের বহু বৈচিত্র্যময় গুণে মুগ্ধ হয় আর ১৭০০ শতাব্দীর মধ্যে আমের দেখা মেলে তাদের আমেরিকান উপনিবেশগুলোতে। বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে আম জন্মে ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, ব্রাজিল এমনকি আন্দিজের উষ্ণতম অঞ্চল যেমন পেরুতে। স্পেন হলো একমাত্র ইউরোপীয় দেশ যেখান আম জন্মে- মালাগার তুষারপাত মুক্ত এলাকায়।

৯. সবচেয়ে প্রাচীন যে আম গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে সেটির বয়স প্রায় ৩০০ বছর। মধ্য ভারতের পূর্ব কান্দেশে আছে গাছটি আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো যে প্রাচীনতম গাছটি ফল দিচ্ছে!

১০. কাজু বাদাম এবং পেস্তা বাদামের সঙ্গে আমের মিল রয়েছে। আম এবং পেস্তা বাদামের এতো ভালো মিল কেন কখনো ভেবেছেন? কারণ তারা আসলে একই প্রজাতির বৃক্ষজাত ফল।

১১. বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য আম গাছ খুব পবিত্র। তাদের ধর্মীয় উৎসর্গের অংশ হিসাবেও আম ব্যবহৃত হয়। বলা হয়, বুদ্ধ তার সঙ্গী সন্ন্যাসীদের নিয়ে এক শান্তিময় আম বাগানে বসে ধ্যানরত ছিলেন এবং সেখানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এরপর থেকে বৌদ্ধদের কাছে আম গাছ পবিত্র বৃক্ষ হিসেবে বিবেচিত হয়।

১২. আম আপনার জন্য খুবই উপকারী। এক কাপ আমে থাকে ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এ ছাড়া আমে রয়েছে ২০টি ভিন্ন ভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ, যার মধ্যে অধিক পরিমাণে ভিটামিন এ, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন বি এর একটি উপাদান ফোলাইট থাকে। আর আছে প্রচুর আঁশ।

গিনেজ বুকের বিশ্ব রেকর্ড বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় আমটির ওজন ৩ দশমিক ৪৩৫ কেজি আর দৈর্ঘ্য ৩০ দশমিক ৪৮ সেন্টি মিটার, পরিধি ৪৯ দশমিক ৫৩ সেমি এবং প্রস্থ ছিল ১৭ দশমিক ১৮ সেমি। ২০০৯ সালে ফিলিপাইনের এক বাগানে আমটি হয়েছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close