নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ আগস্ট, ২০১৮

ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা

বিভাগীয় চার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলেন বিচারক

বিচারককে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন এক নারী মাদক কারবারি। র‌্যাবের হাতে ইয়াবাসহ গ্রেফতার হওয়া হেনারা আক্তার নামের ওই নারী একজন অতিরিক্ত জেলা জজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলে কুৎসা রটাচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে হেনারা আক্তারের অভিযোগসহ মোট চারটি অভিযোগে বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। সব মামলায় অব্যাহতি পান বিচারক। অভিযোগ নিষ্পত্তির পরে বিচারককে নির্দোষ ঘোষণাসহ তাকে যথাসময়ে পদোন্নতিসহ চাকরিতে পুনর্বহালও করা হয়।

জানা গেছে, বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী হেনেরা বেগম একসময় ঢাকা কোর্টে স্টেনোগ্রাফার (ওমেদার) হিসেবে কাজ করতেন। ওই সময় অতিরিক্ত জেলা জজকে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করতেন। পরে সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশে ওমেদার হিসেবে কাজ করা লোকদের বাদ দেওয়ার নির্দেশে তাকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। চাকরি হারিয়ে এক পর্যায়ে মাদক কারবারিতে জড়িয়ে পড়েন হেনারা আক্তার। ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর ইয়াবাসহ গ্রেফতারও হন তিনি। এক মাস জেল খেটে জামিনে বের হন। এরপর থেকে ওই বিচারককে নানাভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। না পেরে মুঠোফোনে বিভিন্ন অশ্লীল এসএমএস পাঠান। এক পর্যায়ে তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিচারক অতিরিক্ত জেলা জজ হিসাবে ঢাকার দেউলিয়া বিষয়ক আদালতে কর্মরত থাকাবস্থায় তার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠে। তারা তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কাছে তার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সরাসরি হস্তক্ষেপ রয়েছে। এই অভিযোগে বিচারক রাষ্ট্রপতির বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে অপর একটি বিভাগীয় মামলা রুজু করে তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এ সময় চক্রটি হেনারাকে সামনে নিয়ে আসে। মামলায় বিচারকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে সেই একই বক্তব্য সুপ্রিম কোর্টসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হয়।

এদিকে, ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানাধীন আমিরাবাদ গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা হেনারা চলতি বছরের ২২ জুলাই ওই বিচারকের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা করেন। তিন বছর আগে ২০১৫ সালের ৮ জুন তাকে বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। অথচ ওইদিন বিচারক তার বাসায় স্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। যার ছবিও রয়েছে ফেসবুকে। ধর্ষণের পর হেনারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হলেও ঢামেকের রেজিস্ট্রারে এ ধরনের কোনো এন্ট্রি খুঁজে পাওয়া যায়নি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ওই মামলায় বেসরকারি একটি মেডিকেলের সনদও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সনদে বলা হয়েছে, ঘটনার এক মাসের আগে কেউ তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হয়েছিলেন। এটি তার অভ্যাসগত কারণ বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, সুপ্রিম কোর্টের আদেশে হেনারা আক্তারের অভিযোগসহ মোট চারটি অভিযোগে বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। অভিযোগগুলো নিষ্পত্তির পরে বিচারককে নির্দোষ ঘোষণাসহ তাকে যথাসময়ে পদোন্নতিসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়। গত ২২ এপ্রিল তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন মন ট্রাইব্যুনালে বিচারক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর মন্ত্রণালয় তাকে নরসিংদী জেলার জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদায়নের জন্য সুপ্রিম কোর্ট বরাবর প্রস্তাব পাঠায়। তার ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে তাকেই প্রথম জেলা ও দায়রা হিসেবে পদায়নের প্রস্তাবের পরপরই চক্রটি আবার সক্রিয় হয়ে উঠে। চাকরির ক্ষেত্রে তার দ্রুত এই সাফল্যকে রুখে দেওয়ার জন্য ওই নারীকে দিয়ে নিষ্পত্তিকৃত একটি বিষয়ে পুনরায় অভিযোগ দায়ের করানো হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close