মো. শাহ আলম, খুলনা

  ২০ আগস্ট, ২০১৮

খুলনায় অনুমোদনহীন আবাসন প্রকল্প

কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনে স্পষ্ট বলা আছে যে, কৃষিজমি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। যদি অন্য কাজে ব্যবহার করা হয় তাহলে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। এই বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) মাস্টার প্ল্যানের আওতাধীন এলাকায় গড়ে উঠছে একের পর এক অনুমোদনহীন আবাসন প্রকল্প। বাহারি সাইনবোর্ড আর বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে এসব প্রকল্পের জমি কিনতে আকৃষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অপরিকল্পিতভাবে আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠায় পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানা ধরনের সমস্যার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগর ছাড়াও অনেক এলাকা কেডিএর মাস্টার প্ল্যানের আওতায় রয়েছে। ১৯৬১ সালে ১৮১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বৃহত্তর খুলনা শহরের প্রথম মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০১ সালে সংশোধিত খুলনা মাস্টার প্ল্যানের এলাকার অধিক্ষেত্র ৪৫১ দশমিক ১৮ বর্গ কিলোমিটার উন্নীত করা হয় এবং বর্তমান সরকারের আমলে খুলনা শহরকে মংলা পর্যন্ত বর্ধিত করে অতিরিক্ত ৩৭৩ দশমিক ৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা মাস্টার প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে বর্তমানে ৮২৪ দশমিক ৬১ বর্গকিলোমিটার এলাকা পরিকল্পিত নগরায়ণের আওতায় এসেছে। এ ছাড়া নগরের উত্তরে যশোরের নওয়াপাড়া পৌর এলাকার উত্তর সীমানা। পূর্বে রূপসা উপজেলার সম্পূর্ণ অংশ ও পশ্চিমে ডুমুরিয়া উপজেলার কৈয়া বাজার পর্যন্ত এলাকা। এসব এলাকার মধ্যে কোনো ধরনের আবাসিক প্রকল্প গড়ে তুলতে কেডিএর অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু এসব এলাকার কোনো আবাসন প্রকল্প আজ পর্যন্ত কেডিএ থেকে অনুমোদন নেয়নি। এসব এলাকায় ১০০-র কাছাকাছি আবাসন প্রকল্প বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু আবাসন প্রকল্প করার জন্য সিটি করপোরেশনের ভেতরে ৫ একর এবং সিটি করপোরেশনের বাইরে ১০ একর জমি থাকার বিধান থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানের জমি রয়েছে নামমাত্র। তারপরও অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেদার প্লট বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, আইন লঙ্ঘন করে কেডিএর আওতাধীন এলাকায় হানিফ মোহাম্মদ আবাসন প্রকল্প, সবুজ সিটি আবাসন প্রকল্প, মোহাম্মাদীয়া আবাসন প্রকল্প, খানজাহান নগর আবাসন প্রকল্প, আরাফাত আবাসন প্রকল্প, স্বপ্নগড়ি আবাসিক প্রকল্প, মাদানীনগর, রৌশনীবাগ আবাসিক এলাকা, রাজদীপ, ন্যাশনাল, গুলজান সিটি, সবুজবাংলা আবাসন প্রকল্প, মহানগর আবাসন প্রকল্প, অর্পিতা হাউজিং প্রকল্প, সুস্মিতা আবাসন প্রকল্প, মোল্লা প্রপার্টিজ, বিশ্বাস প্রোপার্টিজ, মাদানী সোসাইটি, সিয়াম হাউজিং প্রকল্প, ফাতেমা আবাসিক প্রকল্প, স্বপ্নপুরী আবাসিক এলাকা, প্রগতি আবাসন, বনলতা আবাসিক এলাকা, হোসেন আবাসন প্রকল্প, শিকদার আবাসিক প্রকল্প, সততা আবাসন, কাদের হাউজিং প্রকল্প, বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স এন্ড কন্সট্রাকশন, আদর্শ পল্লী আবাসিক এলাকা, আশিকনগর, সাউদ বাংলা, শান্ত নীড় হোল্ডিং রিয়েল এস্টেট প্রকল্প, যুবক হাউজিং রিয়েল এস্টেট নামে নগরীর সোনাডাঙ্গা, রূপসা, হরিণটানা ও লবণ চরা এলাকায় বেশ কিছু আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া এসব এলাকায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক অনেক আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠেছে। যারা কিছু জমি কিনে বা নিজের নামে পাওয়ার নামা করে আবাসিক প্লটিং ব্যবসা করছে। এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান মানুষকে আকৃষ্ট করতে ব্যবহার করছেন বাহারি সাইনবোর্ড এবং প্যানা, ফেস্টুন। এসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছে ২, ৩, ৫, ৭ ও ১০ কাঠার প্লট বিক্রি করছে। এসব প্রকল্পের কেডিএর অনুমোদন আছে কি না, তা না জেনেই পল্ট কিনছেন।

প্রগতি আবাসন প্রকল্পের মো. মিজান জানান, ‘আবাসন প্রকল্পে কেডিএর অনুমোদন লাগে না শুধু কেডিএ থেকে এনওসি নিলে হয়। সেটি করে দিতে আমরা সহায়তা করব। আমাদের লোক রয়েছে আমরা ব্যবস্থা করে দেব।’

বসুপাড়া বাঁশতলা এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তা মো. সাদেকুল ইসলাম জানান, ‘আমি ৫-৬টা খুব ভালো মানের আবাসন প্রকল্পের অফিসে গিয়েছি পল্ট কেনার জন্য। কিন্তু তাদের কোনো জমি আবাসনের নামে নেই। রয়েছে ব্যক্তির নামে। কেডিএর অনুমোদনও নেই।’

এদিকে, কৃষিজমি সুরক্ষা আইনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের যে সকল কৃষি জমি রহিয়াছে, তাহা এই আইনের মাধ্যমে সুরক্ষা করিতে হইবে এবং কোনোভাবেই ব্যবহার ভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন করা যাইবে না। তবে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে অত্র বিধানাবলী পরিবর্তন করা যাইবে।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. দিলীপ দত্ত বলেন, অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্পের কারণে ভবিষ্যতে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। যেভাবে খাল, বিল ও জলাশয় ভরাট করে প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে তাতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।

কেডিএর অর্থরাইজড অফিসার ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং তথ্য কর্মকর্তা শামীম জেহাদ জানান, রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ অনুযায়ী, আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলতে কেডিএর অনুমোদন নিতে হবে। এরপর ট্রেড লাইসেন্স (ব্যবসার অনুমতিপত্র), করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) নিবন্ধন নম্বর, ব্যাংক সলভেন্সি, অফিস এবং কর্মকর্তা কর্মচারী লাগবে। এই আইন অমান্য করলে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা ৩ বছরের জেল অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close