প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২০ আগস্ট, ২০১৮

বিবিসির প্রতিবেদন

কোরবানির উপযুক্ত সুস্থ গরু চেনার উপায়

হাটে বিক্রির জন্য আসা এত গরুর মধ্যে চিনে নেওয়া জরুরি কোনটা সুস্থ। দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে এরই মধ্যে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। পুরোদমে চলছে বেচাকেনা। তবে হাটে বিক্রির জন্য আসা এত গরুর মধ্যে অনেকগুলোই থাকতে পারে রোগাক্রান্ত অথবা ক্ষতিকর রাসায়নিক ও ওষুধযুক্ত। এসবের মধ্য থেকে কোরবানির যোগ্য সুস্থ গরু চেনার উপায় নিয়ে পশু বিশেষেজ্ঞ সঙ্গে কথা বলে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হাশেমের মতে, স্টেরয়েড দিয়ে মোটাতাজা করা গরু দেখতে আকর্ষণীয়, চকচকে ও হৃষ্টপুষ্ট দেখালেও আসলে সেগুলো মোটাতাজা হয় না। বরং এসব ক্ষতিকর উপাদান রান্নার পরও মাংসে থেকে যাওয়ার সেটা খেলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

গরুর রোগবালাই : ভালো দাম পাওয়ার আশায় প্রতি বছর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে একদল অসাধু ব্যবসায়ী কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই গরু মোটা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও রাসায়নিক মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ করেন। এতে গরুর শরীরে অতিরিক্ত পানি জমতে শুরু করে। এতে গরুটির কিডনি, ফুসফুস, পাকস্থলী ও যকৃৎ নষ্ট হতে থাকে এবং গরুটি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যায়। এ ছাড়া অনেক গরু খুড়া রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুস্থ গরুর দেহের তাপমাত্রা ১০২ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়। এ ছাড়া খুড়া রোগাক্রান্ত গরুর ক্ষুর ও মুখে ঘা থাকতে পারে, আক্রান্ত গরু খুঁড়িয়ে হাঁটবে

এবং খাবার খেতে চাইবে না বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া অনেক গরু কৃমিতে আক্রান্ত হতে পারে। এ ধরনের গরু বেশ বিবর্ণ ও হাড় জিরজিরে হয় বলে তিনি জানান।

সুস্থ ও অসুস্থ গরু শনাক্তের উপায় : সুস্থ গরু শনাক্তের ব্যাপারে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু বিশেষজ্ঞরা। তারা মূলত কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। ১. রাসায়নিক বা ওষুধ দেওয়া গরুর মাংসপেশি থেকে শুরু শরীরের অন্য অঙ্গগুলো অস্বাভাবিকভাবে ফুলে থাকে। শরীরে পানি জমায় বিভিন্ন অংশে চাপ দিলে সেখানে গর্ত হয়ে দেবে যাবে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সময় নেবে। ৩. অতিরিক্ত ওজনের কারণে এ সব গরু চলাফেরা বা স্বাভাবিক নড়াচড়া করতে পাওে না। শান্ত থাকে। ৪. রাসায়নিকযুক্ত গরু ভীষণ ক্লান্ত থাকবে এবং ঝিমাবে। সুস্থ গরুর গতিবিধি চটপটে থাকে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বুঝে প্রতিক্রিয়া দেখায়। কান ও লেজ দিয়ে মশা মাছি তাড়ায়। সুস্থ গরুর নাকের উপরের অংশটা ভেজা বা বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা থাকবে।

৫. রাসায়নিক বা ওষুধ খাওয়ানো গরুর শরীরের অঙ্গগুলো নষ্ট হতে শুরু করায় এগুলো শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। মনে হবে যেন হাঁপাচ্ছে। ৬. অতিরিক্ত স্টেরয়েড দেওয়া গরুর মুখ থেকে প্রতিনিয়ত লালা ঝরবে। কিছু খেতে চাইবে না। সুস্থ গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে সেটা টেনে খাবে। না হলে জাবর কাটবে।

৭. সুস্থ গরুর নাকের উপরের অংশটা ভেজা বা বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা থাকবে। অন্যদিকে, অসুস্থ গরুর নাক থাকবে শুকনা।

৮. সুস্থ গরুর শরীরের রং উজ্জ্বল থাকবে। গরুর পিঠের কুজ মোটা, টানটান ও দাগমুক্ত হবে। ৯. সুস্থ গরুর রানের মাংস শক্ত থাকবে। যেখানে রাসায়নিক দেওয়া গরুর পা হবে নরম-থলথলে।

১০. গরুর শরীরে হাত দিয়ে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মনে হলে বুঝতে হবে গরুটি অসুস্থ। ১১. সুস্থ গরুর চামড়ার ওপর দিয়ে কয়েকটা পাঁজরের হাড় বোঝা যাবে।

কোরবানির উপযুক্ত পশু : ১. কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করার গরুগুলো অনেক সময় কেনার পর কোরবানির অযোগ্য হয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে দেশি গরু কেনার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। গরুর বয়স ন্যূনতম দুই বছর হলেই এটা কোরবানির জন্য উপযুক্ত হবে। এক্ষেত্রে গরুর দাঁত দেখে বয়স যাচাই করে নিতে হবে। গরুর নিচের পাটিতে যদি দুধ দাঁতের পাশাপাশি সামনে অন্তত দুটি কোদালের মতো স্থায়ী দাঁত থাকে তাহলে বুঝতে হবে গরুটি কোরবানির উপযুক্ত হয়েছে।

২. গরুটিকে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে হবে। এ জন্য শিং ভাঙা লেজ কাটা কিংবা মুখ, জিহ্বা, শরীর, পা, ক্ষুর, গোড়ালিতে কোনো ক্ষত আছে কি না দেখে নিতে হবে।

৩. গাভী কোরবানির দেওয়া গেলেও তার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হবে যে, গাভীটি গর্ভবতী কি না। গর্ভবতী গাভী কোনো অবস্থাতেই কোরবানি দেওয়া যাবে না। সাধারণত গর্ভবতী গাভীর পেট ও ওলান স্ফীত থাকে।

দক্ষ পশু ক্রেতার পরামর্শ : দক্ষ পশু ক্রেতারা দিনের আলো থাকতে থাকতেই গরু কেনার পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মতে, রাতের বেলা গরুর এতগুলো বিষয় ঠিকঠাক যাচাই করা সম্ভব নাও হতে পারে। এ ব্যাপারে লালবাগের বাসিন্দা ও খামার ব্যবসায়ী নাজিমুদ্দিন নিপু বলেন, মোটা গরুর পরিবর্তে সুস্থ গরু কোরবানি দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close