নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ আগস্ট, ২০১৮

নিরাপদ ঈদযাত্রায় ৩৩ পদক্ষেপ

প্রতি বছরই ঈদযাত্রায় কমবেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় ঘরমুখো মানুষকে। পরিবহন সংকট, ভাঙাচোরা রাস্তা, সড়ক দুর্ঘটনা ও দীর্ঘ যানজটের মতো ঘটনা লেগেই থাকে সড়ক-মহাসড়কে। দুর্ভোগ-ভোগান্তি কোনোভাবেই পিছু ছাড়ে না। যদিও এসব মোকাবিলায় ঈদ মৌসুমে তোড়জোড়ও দেখা যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু এতে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় না। এ অবস্থায় এবার ঈদযাত্রা নিরাপদ এবং স্বস্তিদায়ক করতে ৩৩টি পদক্ষেপ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করতে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে পরিবহনের ফিটনেস ও লাইসেন্স, পরিবহন ও সড়ক ব্যবস্থাপনার পরিস্থিতি ঘুরে দেখলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। গতকাল শনিবার সকালে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে রাজধানীর উত্তরা থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত তার নেতৃত্বে একটি দল বিভিন্ন পয়েন্টের বাস্তব অবস্থা পরিদর্শন করেছে। এ ছাড়া সড়কপথে যাতায়াত নির্বিঘœ করতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ‘কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ’ গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এটি মনিটরিং করবে। গতকাল শনিবার সড়কে যানবাহন চলাচল মনিটরিং শুরু হয়েছে; যা চলবে আগামী রোববার (২৬ আগস্ট) পর্যন্ত।

সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন ঈদুল আজহা কেন্দ্র করে গ্রহণ করা সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে সড়ক মেরামত, টার্মিনালগুলোতে শৃঙ্খলা রক্ষা, দুর্ঘটনার পর সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণ, সড়ক থেকে অবৈধ বাজার অপসারণ, বিকল্প সড়ক ব্যবহার কিংবা মহাসড়কের অপব্যবহার বন্ধ করা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা, মহাসড়কে লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা, নসিমন-করিমন, ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার বন্ধ করা, টোলপ্লাজার সব বুথ খোলা রাখা, সিএনজি স্টেশন চালু রাখা, যাত্রীদের জন্য বিআরটিসির স্পেশাল সার্ভিস চালু করা, নৌরুটে ফেরি সংখ্যা বৃদ্ধি করা, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাস, ট্রাক, লরি ও কাভার্ড ভ্যান বন্ধ রাখা, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন দিনে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ দেওয়া ও খোলা রাখা, বড় ধরনের দুর্ঘটনা মোকাবিলায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করা, অনভিজ্ঞ চালক দিয়ে মহাসড়কে মোটরযান না চালানো, টয়লেটগুলো ব্যবহার উপযোগী রাখা, সড়কের পাশে পশুর হাট না ইজারা দেওয়া, কোরবানি পশু পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, কোরবানি পশুর বর্জ্য সড়কের পাশে না ফেলা, ট্রাকে যাত্রী পরিবহন না করা ও কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম চালু করা।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. কামরুল আহসান বলেন, ‘আমরা যাতায়াত নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করতে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ি যাতে চলাচল করতে না পারে, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি। তাছাড়া আমাদের কড়াকড়ির কারণে পরিবহন ও চালকের সংকট তৈরি হতে পারে। বিষয়টি আমরা মাথায় রেখে কাজ করছি।’

তিনি জানান, ঈদের সময় পরিবহনগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা দেখা দেয়। এই অনিয়ম বন্ধ করতে মহানগরীর তিনটি টার্মিনালে ভিজিল্যান্স টিম গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশ পেয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে মালিক ও শ্রমিকদের সমন্বয়ে এরই মধ্যে চারটি টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। বিআরটিএ এবং ডিএমপিরও টিম থাকবে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদযাত্রায় ভাঙাচোরা সড়কের জন্য ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। বিষয়টি মাথায় রেখেই ঈদের অন্তত ১০ দিন আগেই মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করতে মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সড়ক মেরামত করা চলছে।

ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রায় সড়ক-মহাসড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা মানিকগঞ্জ-পটুয়াখালী-আরিচা, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। পাশাপাশি ফেরিঘাটগুলোতেও যানবাহনের দীর্ঘ লাইন থাকে। ফেরি সংখ্যা বাড়িয়ে বিষয়টি নিরসনের জন্য পুলিশের বিভাগীয় কমিশনার, হাইওয়ে রেঞ্জ ডিআইজি, র‌্যাব, জেলা প্রশাসক, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এবং পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঈদযাত্রায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক সৃষ্ট যানজট দূর করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান কামরুল আহসান। তিনি বলেন, ‘অনভিজ্ঞ চালকরা যাতে যানবাহন না চালায়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বড় ধরনের দুর্ঘটনায় হেলিকপ্টার ব্যবহারের জন্যও বলা হয়েছে। এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ বিমান, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ বাহিনীও দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া যানজট চলাকালীন সময়ে মহিলা ও শিশুদের ব্যবহারের সুবিধার্থে সড়ক-মহাসড়কের আশপাশের টয়লেটগুলো ব্যবহার উপযোগী রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে মহাসড়কে যানজট এড়াতে ছোট পরিবহনগুলোকে বিকল্প সড়কও ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। শুক্রবার এ-সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে বিআরটিএ। এতে ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চল যাওয়ার পথে যানজট দেখা দিলে বিকল্প সড়ক হিসেবে ঢাকা- ধামরাই-কালিয়াকৈর-টাঙ্গাইল; ঢাকা কালামপুর-কাউলিয়াপাড়া- বালিয়া-ওয়ার্শী-মির্জাপুর-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-আরিচা ঘিওর- দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল সড়ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সিলেটের যাত্রীদেরও বিকল্প রুট ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ঈদে যাত্রীদের বড় একটি অংশ গার্মেন্টকর্মী। ঈদের ঠিক আগমুহূর্তেই অধিকাংশ গার্মেন্ট একসঙ্গে বন্ধ ঘোষণা করায় এসব মানুষের একযোগে বাড়ি ফিরতে হয়। ফলে এ বছর গার্মেন্টগুলো পৃথক পৃথক সময়ে বন্ধ ও খোলার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বিজিএমইকে অনুরোধ করা হয়েছে। যাত্রীসেবায় বিআরটিএর ঈদ স্পেশাল সার্ভিস চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সড়কে দুর্ঘটনা রোধে লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি, নছিমন-করিমন, ভটভটি, ইজিবাইক, মাহিন্দ্র, থ্রি-হুইলারসহ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঈদের আগের তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি ও এক্সেল লোড বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ৪০ কিলোমিটার নিচের গতিসম্পন্ন গাড়ি কোনো অবস্থাতেই মহাসড়কে চলাচল করতে না পারে, সেজন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেতুগুলোতে টোল আদায়ে যাতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি না হয়, সেজন্য চালকদের আগে থেকেই নির্ধারিত পরিমাণ টাকা রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ঈদের আগের চার দিন ও পরের চার দিন ২৪ ঘণ্টা সিএনজি স্টেশন চালু রাখতে বলা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close