আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৭ আগস্ট, ২০১৮

রোহিঙ্গাদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি

প্রবল বর্ষণের কারণে সৃষ্ট ভূমি ধস ও বন্যার হাত থেকে সুরক্ষিত করতে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এউচআরডব্লিউ)। গতকাল সোমবার ‘বাংলাদেশ ইজ নট মাই কান্ট্রি : দ্য প্লাইট অব রোহিঙ্গা রিফিউজিস ফ্রম মিয়ানমার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারে প্রতি এই আহ্বান জানানো হয়। এ সময় রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের বিষয়েও তাদের অবস্থান তুলে ধরে সংস্থাটি। কুতুপালং-বালুখালি আশ্রয়কেন্দ্রের ঘনবসতি বেশি হওয়ার কথা উল্লেখ করে এইচআরডব্লিউ রোহিঙ্গাদের কম ঘনবসতির ছোট ছোট শিবিরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে। তা ছাড়া স্থানান্তরের ক্ষেত্রে তারা ভাসান চরের বদলে উখিয়ারই অন্য স্থান বেছে নেওয়ার পক্ষে। তাদের পরামর্শ ছোট ছোট আশ্রয়শিবির বানানো। সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা লিখেছে, বাংলাদেশ সরকার ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়েই স্থির রয়েছে এখনো। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবিরের বাইরে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ার যে পরামর্শ এইচআরডব্লিউ দিয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। মানবাধিকার সংগঠনের স্যাটেলাইট ইমেজ, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন আর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে শূন্যে ছুঁড়ে ফেলার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা। কখনো কখনো কেটে ফেলা হয়েছে তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে অনেককে। এমন বাস্তবতায় নিধনযজ্ঞের বলি হয়ে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা।

আগে থেকে উপস্থিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে বাংলাদেশে।

বর্তমানে কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং-বালুখালি এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য বিশাল বড় আশ্রয়শিবির রয়েছে। এটি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আশ্রয়শিবির। ওই ক্যাম্পটিকে খুব বেশি ঘনত্বের স্থান আখ্যা দিয়ে এইচআরডব্লিউ বলেছে, আশ্রয়কেন্দ্রে মাথাপিছু ১০.৭ বর্গমিটার স্থান রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে মাথাপিছু ৪৫ বর্গমিটার স্থান থাকার কথা। সেখানে ছয় লাখ ২৬ হাজার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত আশ্রয়কেন্দ্রটিতে ছোঁয়াচে রোগ, অগ্নিকান্ড, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও যৌন সহিংসতার মতো ঘটনা ঘটছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবিরগুলো প্রবল বর্ষণের কারণে ভূমি ধসের আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে। প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের মধ্যে বসবাসের জন্য তাদের অস্থায়ী ঘরগুলোও যথেষ্ট উপযুক্ত নয়। তা ছাড়া প্রবল বর্ষণের কারণে এলাকাটি বন্যার ঝুঁকিতেও আছে। সংস্থাটি আরো মনে করে, উখিয়ার বন্যা ও ভূমি ধসমুক্ত, সমতল ও কাছাকাছি স্থানে অবস্থিত ছোট ছোট আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়া উচিত। তা ছাড়া তারা যতদিন মিয়ানমারে ফেরত যেতে না পারছে ততদিনের জন্য তাদের আরো মজবুত ঘর ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।

এদিকে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম আল জাজিরাকে বলেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আশ্রয়শিবিরগুলোতে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। কিন্তু আমাদেরও জমির সংকট আছে। আমাদের নিজেদের দেশের জনসংখ্যাই ১৬ কোটি। আমরা নিজেরাও জমির সংকটে ভুগছি। ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে খুব দ্রুত ভাসান চরে স্থানান্তরিত করতে চায় বাংলাদেশ সরকার। এইচআরডব্লিউয়ের মতে, প্রবল স্রোত ও বড় বড় ঢেউয়ের কারণে ওই স্থানটি বসবাসের উপযুক্ত নয়। ঘূর্ণিঝড় হলে দ্বীপটির পুরোটাই পানিতে তলিয়ে যাবে। ভাসান চর এখনো জনমানবহীন একটি দ্বীপ। লন্ডনভিত্তিক সংস্থা ‘ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের’ সমন্বয়ক নে সান লিন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারাও ভাসান চরে যেতে অনিচ্ছুক। সবচেয়ে ভালো হয় যদি তদের উখিয়ার অন্য কোথাও স্থানান্তরিত করা হয়, যেখানে থেকে তারা সাহায্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করতে পারবে।’

এইচআরডব্লিউ মনে করে, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য উখিয়াতেই উপযুক্ত স্থান আছে, যা কুতুপালং-বালুখালি আশ্রয়শিবির থেকে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং এক সঙ্গে যেখানে দুই লাখ ৬৩ হাজার রোহিঙ্গাকে রাখা যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলেছেন, সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়েই মনস্থির করে রেখেছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য ইতোমধ্যেই সরকারের অনেক অর্থ ব্যয় হয়েছে।

সংস্থাটির শরণার্থী অধিকারবিষয়ক পরিচালক বিল ফ্রেলিক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের উচিত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া। তাদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের শিবিরের বাইরে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে হবে।’ তার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে নে সান লিন বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে তা তাদের অবস্থার উন্নতিতে অনেক বেশি সহায়ক হবে; আশ্রয়শিবিরগুলোর অবস্থাও উন্নত হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist