প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
মহাবিশ্বে বালুকণা নাকি নক্ষত্র বেশি!
সংখ্যায় কী বেশি, আকাশের তারা নাকি পৃথিবীর বালুকণা? এটা মহাজাগতিক অনুপাতের অঙ্কের সমস্যা, কিন্তু সাগরতীরে বসে আকাশের দিকে তাকালে আপনার মনে হবে, ‘মহাবিশ্বের তারার মোট সংখ্যা পৃথিবীর বালুকণার চেয়ে বেশি’Ñ এমন দাবি করেছেন একজন আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী। আশির দশকের নিজের জনপ্রিয় টিভি শো কসমসে তিনি এ কথা বলেছিলেন। কিন্তু এটা কতটা সত্যি? এটা কি আসলে গণনা করা সম্ভব? অধ্যাপক গ্যারি গিলমোর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী, যিনি মহাবিশ্বে তারার সংখ্যা গণনা করছেন অনেক বছর যাবত। যুক্তরাজ্যের চালানো প্রকল্প গাইয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। বিবিসি গতকাল শুক্রবার এ কথা জানায়। একটি ইউরোপীয় মহাকাশযান, যেটি এখন আকাশের মানচিত্র তৈরির কাজ করছে। আমাদের মহাবিশ্বে কত তারা আছে, তা গণনার জন্য গাইয়া দল এখন তাদের ডাটা ব্যবহার করে মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথের একটি বড় ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করেছে। অধ্যাপক গিলমোর বলছেন, প্রতিটি তারার পরস্পরের থেকে দূরত্ব অনুযায়ী পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে ২০০ কোটির চেয়ে বেশি বড় তারা রয়েছে।
অর্থাৎ ইউরোপের অংশে যদি মোট তারার এক শতাংশ থাকে, তাহলে আমাদের ছায়াপথে হয়তো সব মিলে ২০ হাজার কোটি তারা আছে। কিন্তু এতো কেবল একটি ছায়াপথের হিসাব। বেশির ভাগ ছায়াপথে আমাদের ছায়াপথের মতোই তারা থাকে। অধ্যাপক গিলমোর বলেন, ‘সে কারণে আমরা একে গড় হিসাব তৈরির কাজে লাগাতে পারি।
অর্থাৎ যদি মোট ছায়াপথের সংখ্যা ধারণা করা যায়, তাহলে তারার সংখ্যা বের করা সম্ভব হবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য সেটা হয়তো বড় সমস্যা নয়। মহাবিশ্বে যদি ১০ হাজার ছায়াপথ থাকে, মনে রাখতে হবে একেটিতে হয়তো ২০ হাজার কোটি করে তারা আছে।
অঙ্কের শুরুতেই ধরে নিতে হবে, বিশ্বের সব সাগরতীরে ঠিক কী পরিমাণ বালু থাকে। এজন্য সমুদ্রপৃষ্ঠের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং গভীরতা পরিমাপ করতে হবে। সেজন্য সাগরের তীরের হিসাব করলে হবে না, হিসাব করতে হবে উপকূলীয় এলাকার পরিমাপের। এ নিয়ে অবশ্য বিশেষজ্ঞরা একমত হতে পারেন না তেমন। কারণ উপকূলীয় এলাকার মাপ বাড়ে-কমে, স্থির থাকে না।
তবে উপকূল নিয়ে গবেষণা করে এমন প্রতিষ্ঠান ডেল্টারসের গবেষক জেনাডি ডনসিটস বলছেন, পুরো পৃথিবীর উপকূলের পরিমাপ করা বিশাল দুঃসাধ্য এক কাজ। ওপেন স্ট্রিটম্যাপের মতো ফ্রিম্যাপ ব্যবহার করে কম্পিউটার ডাটার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে বরফাচ্ছন্ন এলাকাসহ উপকূলীয় এলাকার দৈর্ঘ্য ১১ লাখ কিলোমিটারের মতো। যার মধ্যে ৩ লাখ কিলোমিটার এলাকা বালুময় সৈকত। এখন যদি তারার সংখ্যার সঙ্গে তুলনা করতে হয়, তাহলে দেখা যাবে, মহাবিশ্বে তারার সংখ্যা ১০ সেক্সটিলিয়ন, যেখানে বালুকণার সংখ্যা হবে চার সেক্সটিলিয়ন। তাহলে এটি ঠিকই যে, মহাবিশ্বে বালুকণার চেয়ে তারার সংখ্যা বেশি।
"