চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২২ জুলাই, ২০১৮

চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্র সচিব

মাদক নির্মূলে নামছে যৌথবাহিনী হচ্ছে মৃত্যুদন্ডের বিধান

মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার ও মাদক নির্মূলে শিগগিরই যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী। মাদকের গডফাদারদের মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে করা আইনের খসড়া আগামী সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে বলেও জানান তিনি। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর, কারা কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সচিব। সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান চলবে। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, যতদিন একটা সাসটেইনেবল লেভেলে (টেকসই পর্যায়) না পৌঁছাবে, ততদিন এটা চলবে। এক্ষেত্রে যৌথবাহিনীর অভিযান চালানো হবে। এটা খুব শিগগিরই শুরু হবে।

তিনি বলেন, মাদক নির্মূলের জন্য কক্সবাজারকে আমরা আলাদা জেলা হিসেবে নয়, একটি পৃথক জোন হিসেবে নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছি। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা-বিষয়ক জাতীয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেখানে নজরদারি বাড়িয়ে যাতে যৌথভাবে অভিযান করা যায়। এই অভিযান ‘অল আউট’ বলতে যা বোঝায় তাই।

সেভাবেই চলবে। প্রধানমন্ত্রী নিজে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন। এটা অল আউটই হবে। একটা পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত।

স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে ১৯৯০ সালের যে আইনটা এখন বলবৎ আছে সেটার মধ্যে অনেক দুর্বলতা আছে। পত্রপত্রিকায় লেখা হচ্ছে যে মাদকের গডফাদাররা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকছে। গডফাদার বলতে যারা মাদকের ব্যবসায় অর্থলগ্নি করছেন, তারা হয়তো দেশেও থাকেন না, দেশের বাইরে থেকেই করছেন। নতুন আইন আমরা করছি। সেখানে গডফাদারের বিষয়টাও থাকবে। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করা হবে। আগামী সপ্তাহের সোমবার মন্ত্রিসভার যে বৈঠক হবে সেখানে আমরা নতুন এই আইনটা পাঠাতে পারব বলে আশা করছি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর গত মে মাস থেকে এই পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তি মারা গেছেন। অভিযানের সময় ‘বিচার বহির্ভূত’ হত্যাকান্ড নিয়ে বিদেশি চাপের মধ্যে থাকার কথাও জানিয়েছেন সচিব। তিনি বলেন, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং নিয়ে আমরা অনেক চাপের মধ্যে আছি। বিশেষ করে ফরেন মিনিস্ট্রি আমাদের সবসময় এটা বলে। বিদেশ থেকেও চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং বলতে যেটা বলা হচ্ছে সেটা তো হচ্ছে না।

মাদক নিয়ন্ত্রণে কক্সবাজার এবং বান্দরবান জেলায় মায়ানমারের সঙ্গে সীমান্তপথে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছিল। আমরা বর্ডারের পার্শ্ববর্তী মাদক কারাখানার তালিকা দিয়েছিলাম। তারা বর্ডারের পাশে মাদক উৎপাদন কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। ভারত থেকে মাদক আসা অনেক কমে গেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের ১৯৯৪ সালে চুক্তি হয়েছিল। তাদেরকেও তালিকা দিয়েছি, কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। চুক্তির পর থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে মাত্র তিনটি মিটিং করতে পেরেছি। তারা মিটিংয়েও বসতে চান না। এ নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ দেখতে পাই না। তিনটি মিটিংয়ের কোনো সিদ্ধান্তও আজো বাস্তবায়ন করেননি তারা। মিয়ানমারে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন তারাই এ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, এখন আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। মাদকের সঙ্গে যারা জড়িত তারা সমাজে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। প্রমাণ পেলে আমরা তাদেরও ছাড় দেই না। তবে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে সবাইকে। মসজিদের ইমাম, স্কুলের শিক্ষক থেকে সবাইকে মাদক নির্মূলে সম্পৃক্ত করতে চাই। এ নিয়ে পরিকল্পনা হয়েছে। এ জন্য সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে একটি বিকলাঙ্গ প্রতিষ্ঠান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে যাতে কার্যকর করা যায়। ৫০টি গাড়ি এবং চারজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। দুজন ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকায় অলরেডি কাজ শুরু করছেন। চট্টগ্রামেও দুজন ম্যাজিস্ট্রেট আসবেন।

বিভাগীয় শহরগুলোতে ২০০ শয্যার মাদক নিরাময় কেন্দ্র করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র সচিব। চট্টগ্রাম কারাগারে ১৮০০ ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে আট হাজার বন্দি আছে জানিয়ে এখানে আরেকটি কারাগার করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। পাসপোর্ট তৈরিতে বিলম্ব ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের হয়রানি নিরসনে ই-পাসপোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং দ্রুত ভেরিফিকেশন সম্পাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান সচিব।

সভায় সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ, কারা উপমহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বণিক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটোয়ারী, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট বিভাগের উপপরিচালক জাকির হোসেন নোমান এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist