প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক
ম্যান্ডেলাকে নিয়ে লেখা গানটির গীতিকার কে?
ঢাকায় হোটেল শেরাটনে নেলসন ম্যান্ডেলাকে গান শুনিয়েছিলেন ফকির আলমগীর। গানটি তিনিই বেঁধেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে। ফকির আলমগীর বলেন, সেই গানের কথা জানতে পেরে তার সঙ্গে নিজে থেকেই দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ম্যান্ডেলা। সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ফোন পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করে সেই গান শুনিয়েছিলেন আলমগীর।
ফকির আলমগীর বলেছেন, ‘তখন দ্রুত ছুটে গেলাম শেরাটনে। অনেকেই দেখা করবে বলে লবিতে অপেক্ষা করছে। কিন্তু আমাকে সরাসরি তার রুমে নিয়ে যাওয়া হল। তিনি তখন বঙ্গভবনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। তিনি আমাকে নিয়ে নিচে নেমে এলেন। নিচে নেমেই তিনি আমাকে বললেন, গানটা গাও। আমি যখন গানটা ধরেছি, তিনি আমার সঙ্গে আফ্রিকান ধরনে নাচতে শুরু করলেন, সেটা এখনো আমার চোখে লেগে আছে।’
এসব গানের কথা আগেই তাকে জানানো হয়েছিল বলে ফকির আলমগীর জানান।
এরপর তার গাড়ি বহরের সঙ্গেই বঙ্গভবনে যান ফকির আলমগীর। সেখানে ঢুকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অতিথি কক্ষে যাওয়ার আগে তার দিকে হাত নেড়ে বিদায় জানান নেলসন ম্যান্ডেলা।
কিন্তু যে গানটি গেয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন ফকির আলমগীর, সেটা লিখেছিলেন বিশিষ্ট গীতিকার, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউসিএফ কলেজ অব মেডিসিনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিন প্রফেসর সেজান মাহমুদ। বিবিসির প্রতিবেদনে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, সেই গানটি লেখার পটভূমি।
সেজান মাহমুদ লিখেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে পৃথিবীর অনেকের মতো আমারও এক ধরনের ‘অবসেশন’ আছে। ১৯৮৮ সাল। পৃথিবীব্যাপী নেলসন ম্যান্ডেলার ৭০তম জন্মবার্ষিকী পালনের উদ্যোগ চলছে। তখন আমি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র। সারা দেশ থেকে নেলসন ম্যান্ডেলার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে এক লক্ষ স্বাক্ষর সংগ্রহের এক আন্দোলনের সঙ্গে আমিও জড়িয়ে গেলাম। এই উপলক্ষে ক্যাম্পাসে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো। আমার ইচ্ছা নেলসন ম্যান্ডালাকে নিয়ে কোনো গান শিল্পীদের দিয়ে গাওয়ানো। কিন্তু কোথাও কোনো গান না পেয়ে নিজেই দুটো গান লিখে ফেললাম। তখন আামি সবেমাত্র বাংলাদেশ টেলিভিশনে গান লেখা শুরু করেছি। সেই সূত্র ধরে বেশ কয়েকজন কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। সামিনা চৌধুরী আমার প্রিয় শিল্পীদের একজন এবং ভালো বন্ধুও বটে। তিনি বিনা পারিশ্রমিকে গাইবার সম্মতি দিলেন। সামিনার গাওয়া ‘নেলসন ম্যান্ডেলা, তুমি সবল দুটি হাতে লোহার গারদ ধরে দাঁড়িয়ে আছো।’ সেই গানটির সুর করলেন নকিব খান, আর দ্বিতীয় গানটি গাইবার জন্য বললাম গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরকে। তিনিও এককথায় রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু তার জন্য লেখা গান ‘কালো কালো মানুষের দেশে...’ গানটির তখনও সুর দেওয়া হয়নি। এদিকে, সময়ও কম। আমি নিজেই গানটির সুর দিয়ে পৌঁছে দিলাম তার কাছে। সেদিন মিটফোর্ডের হল ভর্তি মানুষকে মুগ্ধ করলেন এই শিল্পীদ্বয়। ফকির আলমগীর মিটফোর্ডের গন্ডি পেরিয়ে বাংলা একাডেমি বই মেলা, জনতার মঞ্চ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে পৌঁছে দিলেন গানটি। এমনকি গানটির একটি ক্যাসেট খোদ নেলসন ম্যান্ডেলাকেও পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল।’
"