নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ জুলাই, ২০১৮

ক্যানসার হাসপাতালে অনিয়ম অব্যবস্থাপনা

মারাত্মক প্রাণঘাতী রোগ ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু এই রোগের চিকিৎসায় কতটা এগিয়েছে বাংলাদেশ? রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত দেশে এ রোগের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা কেন্দ্র জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে এর কিছুটা চিত্র পাওয়া গেছে। রোগীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগসহ হাসপাতালটিতে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দৃশ্যমান হয়। চোখে পড়ে অপরিচ্ছন্নতা আর জরুরি বিভাগের বেহাল দশা।

সম্প্রতি জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের অবস্থা খুবই খরাপ। নারী অবজারভেশন রুমে মাত্র একজন রোগীকে বেডে রেখে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। বেডগুলোর মাত্র একটিতে একজন রোগী বিশ্রাম নিচ্ছেন। বাকি বেডগুলো ফাঁকা। দেখা যায়, যেসব রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছেন তারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল। দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সুপারিশ করা রোগীরা এসেছেন। তাদের বেশির ভাগের অক্ষরজ্ঞান খুবই কম। হাসপাতালে কীভাবে টিকিট কাটতে হয়, কোথায় যেতে হয় এর কিছুই বোঝেন না। তারা জরুরি বিভাগ কী জিনিস সেটাও ঠিকমতো জানেন না।

নীলফামারী থেকে মা আয়েশা বেগমকে (৬৬) নিয়ে এসেছেন ছেলে আজমল হোসেন (৩২)। আজমল হোসেন বলেন, ‘এখানকার চিকিৎসা ভালো। তবে পদে পদে টাকা দিতে হয়। রোগীদের সঙ্গে হাসপাতালের লোকরা অনেক খারাপ ব্যবহার করেন। ট্রলি নেওয়া থেকে শুরু করে সবখানেই বাড়তি টাকা দেওয়া লাগে। এখান থেকে চলে যাচ্ছি। এর থেকে বাড়ি থাকাই ভালো।’

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান (৪০) ক্যানসার আক্রান্ত মা সুফিয়া খাতুনকে (৫৬) চিকিৎসা ফলোআপে এনেছেন। তিনি বলেন, ‘এখানকার সিস্টেম খুবই খারাপ। এখানে জরুরি বিভাগের অবস্থা বেশি খারাপ। সবখানে ঘুষ আর দুর্নীতি ছাড়া কোনো কাজ হয় না। একটা রোগী ভর্তির জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। মাকে টানা তিন দিন চেষ্টা করেও ভর্তি করতে না পেরে হাসপাতালের লোক ধরে ভর্তি করেছি।’

ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাসপাতালটি হলেও এটির অবস্থা মোটেই ভালো নয়। এখানে পুরো হাসপাতালজুড়ে অপরিচ্ছন্নতার ছাপ। ২০০৯ সালের ১১ আগস্ট ৫২০ শয্যাবিশিষ্ট এনআইসিআরএইচ মহাখালীতে যাত্রা শুরু করে। ৯টি ওয়ার্ড ও ৩০টি ক্যাবিনে রোগীদের সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ‘শুধু এই হাসপাতাল নয়, দেশের সব সরকারি হাসপাতালেই রোগীকে পদে পদে অর্থ দিতে হয়। অর্থ ছাড়া সরকারি হাসপাতালে সেবা পাওয়া খুব কঠিন। ক্যানসার রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আমাদের এখানে যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তারা বেশিরভাগই নিঃস্ব হওয়ার পরে আসেন। ফলে তারা সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারেন না। ক্যানসার সারে না, এখন বিষয়টি আর এমন নেই। তারপরও দেখা যায়, ক্যানসারের দোহাই দিয়ে রোগী মারা যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ক্যানসার রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে চাইলে অবশ্যই ক্যানসার রোগীর জন্য বীমার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারিভাবে বীমার ব্যবস্থা করতে পারলে রোগী বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না।’

ওই চিকিৎসক আরো বলেন, ‘এখান থেকে অন্য হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার হার খুব বেশি। দেখা যায়, জরুরি বিভাগে ঢোকার আগেই দালাল রোগীকে বলতে শুরু করেন, এখানকার চিকিৎসা ভালো না। এখানকার চিকিৎসকরাই বেসরকারি হাসপাতালে অনেক অর্থের বিনিময়ে রোগীর ভালো চিকিৎসা করান। রোগীরা বোঝেন না, অন্য জায়গায় যান এবং শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা নিতে ব্যর্থ হন।’

হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (জরুরি বিভাগ) ডা. মো. আহসান হাবিব মুকুল বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সক্ষমতা রয়েছে। জরুরি বিভাগে যা আছে তা পর্যাপ্তই মনে হয়। হয়ত আরো একটু আপগ্রেড হলে ভালো হয়। আমাদের এখানে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক থাকেন। দিনে গড়ে ৩০-৩৫ জন রোগী আসেন। কিছু রোগী আউটডোরে আসেন। হয়ত দিনে দেখাতে পারেন না। তখন তারা জরুরি বিভাগে ভর্তি হন। এর পর দিন দেখান। আমাদের এখানে বেড আছে ২০টি। নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা বেড আছে। জরুরি বিভাগে আমরা আউটডোর ভিত্তিতে ছোটোখাটো অস্ত্রোপচার করি। কোনো রোগীর পানি জমে গেলে তা বের করি। এখন আমরা এখানে ছয়জন চিকিৎসক আছি। এখন রোগীর চাপ সেই তুলনায় পর্যাপ্ত। কারণ দুইজন করে রোস্টারে ডিউটি দিতে পারছি।’ আহসান হাবিব মুকুল আরো বলেন, ‘একটি সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যা যা থাকা দরকার তার সবই আমাদের এখানে আছে। আমরা আমাদের রোগীর সব রকম চিকিৎসা দিতে পারছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist