কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
সেই মা ও শিশুদের দুঃখজাগানিয়া গল্প
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ঢাকার ওভার ব্রিজের নিচে আশ্রয় নেওয়া অসুস্থ মা, তার স্বামী ও সন্তানদের ঠাঁই হয়েছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নে। জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টায় পরিবারটিকে সদর ইউএনও আমিন আল পারভেজ এবং কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু তাদের পাঁচগাছিতে নিয়ে যান। এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় পরিবারটি ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম শহরে পৌঁছালে তাদের কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিজের জীবনের কথা শোনান ফরিদা বেগম ও তার স্বামী আনছার আলী। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামপুর মৌজার মরাকাটি গ্রামে বাড়ি ছিল ফরিদার স্বামী আনছার আলীর। ছিল দুই একর ধানিজমি। দুধের ব্যবসা করে ভালোই চলছিল পরিবারটি। চরের মধ্যে প্রতিদিন ২ মণ করে দুধ সংগ্রহ করে ১৫ কিলোমিটার সাইকেল মাড়িয়ে কুড়িগ্রাম শহরের হোটেলগুলোতে দুধ সরবরাহ করতেন আনছার আলী। এভাবেই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বাড়িঘরসহ সব আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। গৃহহীন হয়ে পড়ে গৃহস্থ পরিবারটি। শেষে তাদের আশ্রয় হয় ইসলামপুরে জ্যাঠাত ভাইয়ের গোয়ালঘরে। সেখানে এক মাস থাকার পর জীবন বাঁচানোর তাগিদে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কাজের সন্ধানে আনছার আলী ঢাকায় চলে আসেন।
এখানে এসে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে শেষে আশ্রয় নেন কলাবাগান ওভার ব্রিজের নিচে। ধানমন্ডি ক্রীড়াচক্র ক্লাবে মাঠের পাতা কুড়ানোর কাজ করে দিনে আয় হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। সেই অর্থেই চলছিল মানবেতর জীবনযাপন। মাঝখানে সেই কাজটাও বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় প্রায় না খেয়ে থাকতে হচ্ছিল পরিবারটিকে। সন্তানদের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ শরীর নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে বেরিয়ে পড়েন ফরিদা বেগম। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
ঘটনার দিন দুই সন্তানকে নিয়ে কলাবাগান থেকে ল্যাবএইডের দিকে ভিক্ষা করতে বের হন। অসুস্থ শরীর নিয়ে বের হওয়ার ফলে ল্যাবএইডের কাছে অসুস্থ হয়ে ফুটপাতেই পড়ে যান তিনি। এরপর তার ছোট ছেলে সাড়ে তিন বছর বয়সের ফরিদুল ইসলাম বোতলে করে পানি এনে মায়ের মাথায় ঢালে। এই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেলে কুড়িগ্রামের এই পরিবারটির দায়িত্ব নেন জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন।
সন্তানসহ পুরো পরিবারটি কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবে এলে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয় সিভিল সার্জন ডা. এস এম আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম। এ সময় প্রাথমিকভাবে পরিবারটির খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল, লবণসহ সব উপকরণ সরবরাহ করেন কুড়িগ্রাম রেল ও যোগাযোগ উন্নয়ন গণকমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন আল পারভেজ জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন এ পরিবারটির অস্থায়ীভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিশ্চিত করা হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের নির্দেশে তাদের তিন সন্তানকে স্কুলে ভর্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
"