প্রতিদিনের সংবাদের
প্রথম কলাম
বিরিয়ানি তুমি কার ভারতে দুই রাজ্যের লড়াই...
বিরিয়ানি তুমি কার? এ নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে ভারতের দুই রাজ্য। রসগোল্লার আবিষ্কার কোথায়Ñ তা নিয়ে এর আগে তুমুল হইচই আর আইনি লড়াই হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ আর ওড়িশার মধ্যে। এবার বিরিয়ানি নিয়ে লড়াই। ভারতের হায়দরাবাদ শহরের বিরিয়ানি পৃথিবী বিখ্যাত হয়েছে আগেই। একসময়ে অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী ছিল হায়দরাবাদ শহর। কিন্তু পুরনো অন্ধ্র ভেঙে এখন তৈরি হয়েছে নতুন রাজ্য তেলেঙ্গানা। আর রাজধানী হায়দরাবাদ পড়েছে তেলেঙ্গানার ভাগ্যে। অন্ধ প্রদেশ সরকারের সব দফতরই এখন চলে গেছে বিজয়ওয়াডার কাছে, তাদের নতুন তৈরি হওয়া রাজধানী শহর অমরাবতীতে। আর পুরনো রাজধানী শহরের সঙ্গে সঙ্গেই তারা হারাতে বসেছে হায়দরাবাদী বিরিয়ানির ব্র্যান্ড ভ্যালুও।
তাই অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্য চেষ্টা করছে নিজস্ব বিরিয়ানি ব্র্যান্ড তৈরি করতে। খুঁজেও পেয়েছে তারা নিজস্ব এক রেসিপির বিরিয়ানি। এর নাম ‘বঙ্গু বিরিয়ানি’। বিবিসি গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা জানায়।
বিশাখাপট্টমের কাছে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র আরাকু উপত্যকার আদিবাসীদের রন্ধনপ্রণালি থেকে এসেছে এই বঙ্গু বিরিয়ানি।
এই নামের রহস্য হল বঙ্গু বা বাঁশের খোলে রান্না করা হয় এই বিরিয়ানি। অবিভক্ত অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু, তিনি নতুন অন্ধ্র প্রদেশেরও মুখ্যমন্ত্রী। তিনি পর্যটন দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে বঙ্গু বিরিয়ানিকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য সব রকম প্রচেষ্টা চালাতে হবে, তৈরি করতে হবে হায়দরাবাদি বিরিয়ানির পাল্টা ব্র্যান্ড। এই নিয়েই বেঁধেছে বিরিয়ানির লড়াই।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক পুষ্পেশ পন্থ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘একে আঞ্চলিকতাবাদ ছাড়া আর কি বলব? অন্ধ্রের নিজস্ব কি অসাধারণ সব আমিষ খাবার রয়েছে, যেমন গোঙ্গুরা মাংসাম। শত শত বছরের পুরনো চিরাচরিত সেই খাবার ছেড়ে বিরিয়ানি নিয়ে পড়েছে ওরা। আর বিরিয়ানিটা তো অন্ধ্রের নিজস্ব রেসিপিও নয়। সেটা তো নিজামদের হাত ধরে গেছে হায়দ্রবাদে। অন্ধ্রের নিজস্ব খাবারে তো চাল, মরিচ আর সামুদ্রিক মাছের চলন বেশি। আবার পুথারেকু বা পেপার সুইটের মতো মিষ্টি রয়েছে, যেটা তৈরি করা সত্যিই একটা শিল্পকর্ম। সেসব রেসিপিকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করতে পারত ওরা। সেটা না করে হায়দরাবাদি বিরিয়ানির পাল্টা একটা বিরিয়ানির ব্র্যান্ড তৈরি করার কোনো যুক্তি দেখছি না আমি।’
হায়দরাবাদের সেলেব্রিটি শেফ ইয়াদাগিরি। তিনি বঙ্গু বিরিয়ানির চিরাচরিত রন্ধনপ্রণালির সঙ্গে যোগ করেছেন নিজের কিছু কৌশল।
তিনি বলেন, ‘হায়দরাবাদি বিরিয়ানি পৃথিবীতে জনপ্রিয় ঠিকই, কিন্তু বঙ্গু বিরিয়ানি বা কিছুটা একই পদ্ধতিতে তৈরি কাবাবের মতো বঙ্গু চিকেনও খুবই সুস্বাদু। এগুলো এখনো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। কিন্তু খাদ্য রসিকদের খুশি করার মতো বা সাধারণ মানুষের জিভে জল আনবেই এগুলো। তবে হায়দাবাদি বিরিয়ানির সঙ্গে পাল্লা দিতে এখনো সময় লাগবে বঙ্গু বিরিয়ানি বা বঙ্গু চিকেনের।’
‘বঙ্গু বিরিয়ানি’ কি? বেশ মোটাসোটা বাঁশের খোলে রান্না হয় এই বিরিয়ানি। ভেজানো কাচা চালের সঙ্গে পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা, তেজপাতা, ঘি সব একসঙ্গে পুরে দিতে হবে বাঁশের খোলের ভেতরে। তার মধ্যেই হাড় ছাড়া মুরগির টুকরো দিতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে পরিমাণ মতো জল। তারপরে বাঁশের খোলের মুখ বন্ধ করে কাঠ কয়লার আঁচে দিতে হবে। আধঘণ্টা থেকে ৩৫ মিনিট মতো ভাপে সেদ্ধ হবে বাঁশের খোলের ভেতরে থাকা চাল, মাংস আর সবজি। এটাই বঙ্গু বিরিয়ানি।
"