নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
২১ দিন পর না.গঞ্জে ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার
নারায়ণগঞ্জে নিখোঁজের ২১ দিন পর বন্ধুর বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে কালীরবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষের খন্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত সোমবার রাত ১১টায় আমলাপাড়ার রাশেদুল ইসলাম ওরফে ঠান্ডু মিয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে তিন বস্তায় প্রবীর ঘোষের পাঁচ খ-িত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ বাড়ির দ্বিতীয় তলায় প্রবীর চন্দ্র ঘোষের বন্ধু পিন্টু দেবনাথ ভাড়া থাকতেন। পুলিশ পিন্টু দেবনাথ ও বাপন ভৌমিককে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুন রাতে নিখোঁজ হন স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষ। পরেরদিন প্রবীরের বাবা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তার এক সপ্তাহ পর অজ্ঞাত ব্যক্তি প্রবীরের পরিবারের কাছে মোবাইলে এক কোটি টাকা দাবি করে।
প্রবীর ঘোষের সন্ধানকালে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি কুমিল্লার সীমান্ত এলাকায় ব্যবহার হওয়ার সন্ধান পায় পুলিশ। তারা মুঠোফোন উদ্ধার করতে গিয়ে এর বাহক বাপন ভৌমিককে গ্রেফতার করে। সে পুলিশকে জানায় পিন্টু তাকে এ মুঠোফোনটি ব্যবহার করতে দিয়েছে। বাপনকে গ্রেফতারের পরই গ্রেফতার করা হয় প্রবীরের বন্ধু পিন্টু দেবনাথকে।
জিজ্ঞাসাবাদে পিন্টু দেবনাথ ও বাপন ভৌমিক জানায়, প্রবীর ঘোষের লাশ আমলাপাড়ার ১৫ কেসিনাগ রোডের রাশেদুল ইসলাম ওরফে ঠান্ডু মিয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কে রয়েছে। এ তথ্য পাওয়ার পরপরই পুলিশ বাড়িটিকে ঘিরে রাখে। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে তিনটি বস্তায় খ-িত লাশ উদ্ধার করা হয়। জানা যায়, কিছু দিন আগে ভারতের কলকাতায় প্রবীর ঘোষের বন্ধু পিন্টু দেবনাথের ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। এই প্রবীর ঘোষই ভারতে পিন্টুর চিকিৎসার জন্য সব সহযোগিতা করে। এ হত্যাকা-ের ব্যাপারে এখনো মুখ খোলেনি পিন্টু এবং বাপন।
তবে, পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রবীর ঘোষের প্রবাসী ভাইয়ের টাকা নিয়ে প্রবীর ও পিন্টু স্বর্ণ ও সুদের ব্যবসা করত। এই টাকার একটি বড় অংশ থাকত পিন্টুর কাছে। প্রবীর সেই টাকার জন্য কিছুদিন ধরে পিন্টুকে চাপ দিয়ে আসছিল।
পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানান, হত্যার কারণ এখনো সুস্পষ্ট নয়। পিন্টু দেবনাথ এবং বাপন ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যেহেতু লাশ উদ্ধার হয়েছে, এখন পুরো ঘটনাটি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ভাইকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান ইতালি প্রবাসী ছোট ভাই সৌমিক ঘোষ বলেন, ‘আমি ভাই হত্যার বিচার চাই। ওরা মানুষ না, নরপিচাশ। হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এখন আমাদের চাওয়া।’
কালীবাজার স্বর্ণ ব্যবসায়ী মার্কেটের সভাপতি সঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘এই হত্যার পেছনে অন্য কারো হাত থাকতে পারে। আমরা চাই, হত্যার রহস্য উন্মোচন করে ঘাতক এবং নেপথ্যের পরিকল্পনাকারীদের মৃত্যুদ- দাবি করছি।’ একই দাবি জানান স্বর্ণ শিল্পী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুকুল মজুমদার
নিখোঁজের পর থেকে উদ্ধারের দাবিতে হওয়া আন্দোলনে পিন্টু ও বাপন ভৌমিক সক্রিয় ছিল জানিয়ে প্রবীর ঘোষের মামা বলেন, ‘ওরা আন্দোলন করছে। সবার লগে লগেই ঘুরছে। কেডায় জানে এমন বন্ধু নরপিচাশ হইয়া ধরা দিব!’
উল্লেখ্য, প্রবীর চন্দ্র ঘোষ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে কালিরবাজার স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও স্বর্ণ শিল্পী সংগঠন দোকানপাট বন্ধ রেখে কয়েক দফায় মানববন্ধন, মিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। প্রবীরের সন্ধানের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে তারা স্মারকলিপিও দেন।
"