শরীফুল রুকন, চট্টগ্রাম

  ১০ জুলাই, ২০১৮

যৌতুকলোভী ডাক্তারের মারধরে স্ত্রীর গর্ভের সন্তান নষ্ট

শ^শুরবাড়ি থেকে ৩০ লাখ টাকা যৌতুক এনে না দেওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ভীষণ মারধর করেছেন ডা. মো. জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া শিমুল। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে নেওয়া হয়। তখন জানা যায় গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে। এর পরও যৌতুকের জন্য কয়েক দফা মারধরের শিকার হন স্ত্রী পুষ্পা। একপর্যায়ে আদালতের আশ্রয় নিতে বাধ্য হন আসফিয়া তাহরীন পুষ্পা। এরপর আদালতের আদেশে তদন্ত করে এসব অভিযোগের সত্যতা পান চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী জজ ফারহানা ইয়াসমিন। জানা যায়, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার স্টিল মিল পশ্চিম হোসেন আহম্মদ পাড়ার ভূঁইয়া মঞ্জিলের বাসিন্দা আবু তৈয়ব ভূঁইয়ার ছেলে ডা. জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া শিমুলের সঙ্গে আসফিয়া তাহরীন পুষ্পার বিয়ে হয় ২০১৬ সালের ২১ অক্টোবর। পুষ্পা নগরের হালিশহর থানার আনন্দবাজার মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা জামাল উদ্দিনের মেয়ে। অন্যদিকে ডা. শিমুল চট্টগ্রামের বেসরকারি সিএসসিআর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার।

মামলার এজাহার ও জবানবন্দিতে পুষ্পা উল্লেখ করেন, বিয়ের পর পুষ্পার পরিবারের কাছে যৌতুক দাবি করতে থাকেন ডা. শিমুল। পরিবার যৌতুক দিতে না পারায় তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু হয়। গত বছর ২১ ডিসেম্বর চিকিৎসক স্বামী ও শ্বশুর আবু তৈয়ব ভূঁইয়া যৌতুকের দাবিতে তাকে মারধর করেন। সেসময় তিনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কিল-ঘুষি ও তলপেটে লাথি মারার ফলে প্রচুর রক্তপাত হতে শুরু করে পুষ্পার। এরপর ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পুষ্পা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার বাবা-মা সেখানে যান। তারা ওইদিন রাতে পুষ্পাকে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ফারজানা হাসিন মুক্তির কাছে নিয়ে যান।

পরীক্ষা করে পুষ্পার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান ওই চিকিৎসক। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে গত ২৮ ডিসেম্বর দুপুরে মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হাসপাতালে পুষ্পার গর্ভের নষ্ট সন্তান পরিষ্কার করা হয়। এর কিছুদিন পর সুস্থ হলে পুষ্পাকে তার শ্বশুরবাড়িতে দিয়ে আসেন বাবা-মা। এরপর ফের ভবনের ছাদ নির্মাণের জন্য ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করতে থাকেন তারা।

একপর্যায়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি যৌতুকের টাকা এনে দিতে পুষ্পাকে তার বাবাবাড়িতে পাঠানো হয়। যৌতুক দাবির বিষয়টি বিদেশে অবস্থানরত পুষ্পার বাবাকে জানানো হয়। কিন্তু তারা এত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। টাকা না পেয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টায় শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান পুষ্পা। তখন টাকা আনতে না পারার বিষয়টি জেনে ক্ষেপে যান ও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে গলা টিপে পুষ্পাকে হত্যার চেষ্টা করেন চিকিৎসক স্বামী।

এরপর বাসা থেকে বের করে দিলে ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাবাবাড়িতে ফিরে আসেন পুষ্পা। একই দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান তিনি। এসব বিষয় উল্লেখ করে এরপর গত ১৮ মার্চ চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি সৈয়দা শাহেনা বেগমের বিরুদ্ধে মামলা করেন আসফিয়া তাহরীন পুষ্পা।

অভিযোগটি অনুসন্ধান করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ ফারহানা ইয়াসমিনকে গত ১০ এপ্রিল নির্দেশ দেন বিচারক। তদন্ত করে গত ৪ জুন ট্রাইব্যুনালে অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেন তিনি। এতে এ বিচারিক কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, দুইজন সাক্ষীর জবানবন্দি, মামলার এজাহার ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় এক নম্বর আসামি ডা. জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া শিমুলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত-২০০৩) এর ১১(গ) ধারায় ও দুই নম্বর আসামি আবু তৈয়ব ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে যৌতুক আইনের ৪ ধারার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা আছে। অপর আসামি সৈয়দা শাহেনা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ৫ জুলাই ডা. জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া শিমুল ও তার বাবা আবু তৈয়ব ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মো. নুরুল ইসলাম। এ মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য আদালত আগামী ৭ আগস্ট দিন রেখেছেন।

এ মামলার বিষয়ে জানতে ডা. জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া শিমুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার কর্মস্থল নগরের সিএসসিআর হাসপাতালে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ডা. শিমুল এখন আর দায়িত্ব পালন করছেন না। পতেঙ্গা থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist