আল-আমিন মিন্টু, রূপগঞ্জ

  ০৯ জুলাই, ২০১৮

১ কিলোমিটার সড়কে ১২ মরণফাঁদ

৪ মাস ধরে ১৫ হাজার লোকের দুর্ভোগ

‘এক কাপড়ে অফিস করতে পারি না। বাসা থেকে বের হলে ফিরতে পারব কিনা তাও জানি না। সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছতে না পারলে চাকরি থাকবে না। কাজে বের না হলে স্ত্রী সন্তানদের মুখে আহার জুটবে না। ১ কিলোমিটার সড়ক পার হতে ২০ থেকে ৪০ টাকা খরচ। পরনের কাপড় ছাড়াও ১ সেট কাপড় হাতে করে নিয়ে আসতে হয়। ৪-৫ মাসেও ১ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হয়নি। আমাদের স্কুলে যেতে হয় এ সড়ক দিয়ে। ৩-৪ মাস আগেও ৫ টাকা দিয়ে ১ কিলোমিটার যেতে পারতাম। সে ১ কিলোমিটার সড়কে এখন ২০-৪০ টাকা দিয়ে যেতে হয়। আমরা কয় টাকা বেতন ভাতা পাই? ঘর ভাড়া, খাবার খরচ, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে ও চিকিৎসা খরচ বহন করতেই সব শেষ। এরপর প্রতিদিনের এই যাতায়াত খরচ জোগাই কীভাবে।’

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল নতুন বাজার থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের হারভেস্ট রিচ গার্মেন্ট পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়কের ওপর সরেজমিনে প্রতিবেদন তৈরি করতে গেলে স্থানীয় লোকজন, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ, দোকানি, পথচারী, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাচালকসহ শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতেই তারা এ কথাগুলো বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সড়কটি দ্রুত মেরামত করে এখানকার প্রায় ২০-৩০ হাজার মানুষের চলাচলের উপযোগী করার দাবি করেছেন বিভিন্ন পেশার মানুষজন।

জানা গেছে, ১ বছর আগে সড়কটি নতুনভাবে কাজ করা হয়েছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সড়কটিতে পানি জমে। পানি সরানোর বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থাতে রাত-দিন ছোট-বড় গাড়ি চলাচলের কারণে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। গত ৩-৪ মাস ধরে এ সড়কটিতে ২-৩ ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। এখন এ সড়কটি হেঁটে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন এখানকার স্থানীয় লোকজনসহ আশপাশের এলাকার কারখানায় কর্মরত শ্রমিক ও এলাকার চাকরিজীবীরা।

গার্মেন্ট অটোস্ট্যান্ড রোড পরিচালনা কমিটির লাইনম্যান জানান, ২ মাস আগেও গোলাকান্দাইল নতুন বাজার থেকে হারভেস্ট রিচ গার্মেন্ট রোডে ব্যাটারি চালিত অটো চলাচল করত ৩৫-৪০টা। রিকশা চলাচল করত ৫০-৬০টা। বর্তমানে ১০-১২টা অটো ও ১৫-২০টা রিকশা চলাচল করে। আগে ভাড়া নেওয়া হতো যাত্রীপ্রতি ৫ টাকা করে এখন নেয়া হচ্ছে ১০-১৫ টাকা করে। বৃষ্টি থাকলে ২০, ৩০ এমনকি ৪০ টাকাও নেওয়া হয়।

অটোচালক কার্তিক জানান, ভাড়ায় গাড়ি চালাই। প্রতিদিন ৫০০ টাকা জমা। আগে গাড়ি বেশি ছিল ভাড়া কম ছিল। সড়কটির বেহালদশার কারণে অনেকেই গাড়ি চালান না। মালিকরা এ সড়কে চালানোর জন্য গাড়ি ভাড়া দেন না। লোকজনের চাপ বেশি। ভাড়া একটু বেশি হলেও লোকজনের চাপ কমেনি।

সেমিয়া বলেন, ‘সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ ও সংসার খরচ বেশি। ভাড়ায় গাড়ি চালিয়ে কোনো রকম আছি। সড়কটি মেরামত করব শোনতাছি। দ্রুত মেরামত করা না হলে আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষ যাব কোথায়।’ রিকশাচালক মাহাবুুুুব বলেন, ‘কিস্তি নিয়ে রিকশা কিনলাম কয় মাস হলো। কিস্তির টাকা দিমু কেমনে? রিকশা চালাতে পারি না এ সড়কে। একবেলা চালাতে গেলেও কোনো না কোনো পার্স নষ্ট হয়ে যায়।

সড়কেই কথা হয় পথচারী আরকান হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আত্মীয়র বাড়িতে আসছিলাম বেড়াতে। যাওয়ার সময় অনেক কষ্ট করে গিয়েছি। আসার সময় কষ্ট করে এসেছি। গার্মেন্টশ্রমিক আরজুদা বেগম বলেন, চাকরি করি হারভেস্টে গার্মেন্ট। কারখানার কাছাকাছি গোলাকান্দাইল। ৩-৪ মাস ধরে এ সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়া করতে জীবন শেষ।

সিনহা কলেজের ছাত্রী সুমাইয়া আফরোজ বলেন, কলেজ ড্রেস পড়ে কলেজে যেতে হয়। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ২-৩ ফুট গর্ত আছে। ভয় লাগে কখন রিকশা উল্টে পড়ে হাত পা ভেঙে যায়। গোলাকান্দাইল ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার নাছির উদ্দিন বলেন, এলাকাবাসী কষ্ট করেছে যেমন সুখও করবে তেমন। বৃষ্টির পানি সরানোর জায়গা না থাকায় সড়কটিতে পানি জমে কয়েক মাসের মধ্যে সড়কটি নষ্ট হয়ে গেছে। তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সড়কটি নতুনভাবে কাজ ধরবেন বলে আমি জানতে পেরেছি।

গোলাকান্দাইল ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন ভূইয়া বলেন, পিচ ঢালাই বৃষ্টির পানি জমে নষ্ট হয়ে যায়। এ সড়কটি ব্যস্ত। তবে ভারী যান চলাচল বন্ধসহ পানি সরানোর ব্যবস্থা করে সড়কটি নতুন করে মেরামত করার ব্যবস্থা করা হবে। তখন এই কষ্ট থাকবে না।

রূপগঞ্জ উপজেলায় ইঞ্জিনিয়ার এহসানুল হক বলেন, গোলাকান্দাইল থেকে গার্মেন্ট পর্যন্ত সড়কটির বেহাল অবস্থা জানতে পেরেছি। বৃষ্টির কারণে উপজেলাজুড়ে অনেক সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। আমি নতুন এসেছি এ উপজেলায়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব। কয়েক মাসের মধ্যে এ সড়কটির কাজ ধরা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist